The Dhaka Times Desk সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে ইস্তাম্বুলের কনস্যুলেটে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সৌদি রাজ পরিবার জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যে, সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যার বিচার কী কোনদিন হবে?
গত ২ অক্টোবর ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে জরুরি কাগজ নিতে গেলে নির্বাসিত সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি নিখোঁজ হন। প্রথমে বিষয়টি চেপে যাওয়ার চেষ্টা করে সৌদি আরব। তারা বলে সেখানে জামাল খাশোগি কাজ শেষে চলে গেছেন। কিন্তু জামাল খাশোগি যখন ওই দূতাবাসে প্রবেশ করেন সে সিসিটিভি ফুটেজ থাকলেও বের হওয়ার কোনো ফুটেজ তারা দেখাতে পারেনি। যে কারণে বিষয়টি নিয়ে বিশ্বজুড়ে শুরু হয় চরম হৈ চৈ।
বিষয়টি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও খোঁজ খবর শুরু করেন। কারণ সাংবাদিক জামাল খাশোগি সৌদি আরব হতে বিতাড়িত হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সৌদি প্রিন্সের বিরুদ্ধে তিনি বিভিন্ন সময় তার বক্তব্য সংবাদ মাধ্যমে দিয়ে আসছিলেন। যে কারণে সৌদি প্রিন্স তার উপর নাখোশ ছিলো। যে কারণে তাকে মার্কিন মুলুকে নির্বাসিত অবস্থায় জীবন যাপন করতে হয়েছিলো। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসেই সৌদি আরবের বর্তমান রাষ্ট্র নীতির চরম বিরোধীতা করে আসছিলেন। সাংবাদিক জামাল খাশোগি ওয়াশিংটন পোস্টসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে তার মত দিয়ে আসছিলেন। যে কারণে চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে পড়েন সাংবাদিক জামাল খাশোগি। শুধু তাই নয়, সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় কিছু নীতি নির্ধারণী কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জেনে ফেলেছিলেন সাংবাদিক খাশোগি। যে কারণে তাকে এই নির্মমতার শিকার হতে হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে তুর্কি পুলিশের দুটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছে যে, তাদের কাছে খাশোগি হত্যার অডিও রয়েছে যা তাকে হত্যার পরিষ্কার ইঙ্গিতই দিচ্ছে। তবে এই বিষয়ে সূত্রগুলো বিস্তারিত কিছুই জানায়নি।
এদিকে বলা হচ্ছে- তুর্কি পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, খাশোগিকে হত্যার সময় ঘটনাটি তার আপেল ওয়াচে রেকর্ড হয় যা কন্স্যুলেটের বাইরে অবস্থানরত খাশোগির বাগদত্তা হাতিস চেঙ্গিসের হাতে থাকা আইফোনের সঙ্গে নাকি যুক্ত ছিল।
সাংবাদিক জামাল খাশোগি সৌদি আরবের বর্তমান ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে তথ্য তুলে ধরায় তাকে আজ এমন নির্মম অবস্থায় পড়তে হয়। সমগ্র বিশ্ব জুড়ে আজ প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে যার নির্দেশে এভাবে নির্মমভাবে করা হয়েছে তার বিচার করার জন্য। কিন্তু সৌদি প্রশাসন সেই অভিযোগ বার বার অস্বীকার করে আসছে। এমন এক অবস্থায় আজ প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যে, সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যার বিচার কী আদোতে হবে? নাকি বিচারের বাণী নিরবে নিভৃতেই কাঁদবে? সেই প্রশ্ন এখন সবার মনেই দেখা দিয়েছে।
এদিকে নিহত সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগির মরদেহ ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তাঁর দুই ছেলে আবেগময় আবেদন জানিয়েছেন। মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনের সঙ্গে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে খাসোগির ছেলেরা বাবাকে ‘বীর, বিনয়ী এবং খুব সাহসী’ বলে উল্লেখ করেছেন। গত সোমবার সিএনএন অনলাইনে ওই সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করা হয়। খাসোগির দুই ছেলে সালাহ খাসোগি (৩৫) এবং আবদুল্লাহ খাসোগির (৩৩) সাক্ষাৎকার প্রদান করেন সিএনএনের সাংবাদিক নিক রবার্টসনকে।
উল্লেখ্য, গত ২ অক্টোবর ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে জরুরি কাগজ নিতে গেলে হত্যার পর খাসোগির মরদেহ টুকরা টুকরা করে ফেলা হয়। যদিও মার্কিন সংবাদপত্র ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’-এর এক প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, তদন্ত কর্মকর্তারা লাশ অ্যাসিডে গলিয়ে ফেলা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।