The Dhaka Times Desk চিঠির যুগ উঠে গেছে। তাই শহরাঞ্চলে আজকাল আর তেমন একটা ডাক বাক্স দেখা যায় না। তবে এবার আজব খবর হলো সমুদ্রের নিচে ডাক বাক্স! এই ডাক বাক্স রয়েছে জাপানের সুসামি শহরে।
বাসা-বাড়ির লেটারবক্সগুলো এখন বেশিরভাগ সময় খালি পড়ে থাকে। আবার শহরের রাস্তার ধারের ডাক বাক্সও আজকাল তেমন একটা চোখে পড়ে না। বাসা-বাড়ির লেটারবক্তগুলো মাঝে মধ্যে জমা হয় ইলেক্ট্রিক বিল, ফোনের বিল কিংবা ক্রেডিট কার্ডের বিল। তবে চিঠিপত্র আজকাল আর একেবারেই আসে না। আসবে কীভাবে? আজকাল ইমেইল, মেসেজ, হোয়াট্স্যাপ-এর যুগে ক’জনইবা চিঠি লেখে! চিঠি লেখার অভ্যাসটাই একেবারে হারিয়ে গেছে। সেজন্যই তো ২০১৩ সালে বন্ধই করে দিতে হয়েছে ১৬৩ বছরের প্রাচীন টেলিগ্রাম পরিষেবাকে। লাল রঙের, গোল মাথাওয়ালা ছোট থামের মতো দেখতে সেই ডাক বাক্স যা একটা সময় শহরের অলিতে গলিতে আগে দেখা যেতো, তা বর্তমানে ‘ভ্যানিস’ হয়ে গেছে।
এমন পরিস্থিতিতেও এমনই একটি লাল, গোল মাথাওয়া ডাক বাক্স (যা আগে পোস্ট অফিসে ব্যবহৃত হতো) হয়ে উঠেছে হাজার হাজার পর্যটকদের মূল আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। হাজার হাজার চিঠি নিয়মিতভাবে জমা পড়ে এই ডাক বাক্সে! এই বাক্সে চিঠি ফেলতে প্রতিবছর দূর-দূরান্ত হতে হাজার হাজার পর্যটকরা ছুটে আসেন। ভাবছেন, ব্যাপারটা আসলে কী! কী এমন বিশেষত্ব রয়েছে এই ডাক বাক্সটিতে?
প্রকৃতপক্ষে এই ডাক বাক্সটি রয়েছে সমুদ্রের খুব গভীরে। হয়তো ভাবছেন, কোথায় রয়েছে এমন ডাক বাক্স? সমুদ্রের গভীরে ওই ডাক বাক্স পৌঁছাল কীভাবে? গভীর সমুদ্রে ডুব দিয়ে কারাই বা ওখানে চিঠি ফেলতে যান? কে বা কারা ওই চিঠি সেখান থেকে আবার তুলে আনেন? যদি কেও চিঠিগুলো তুলেও আনেনও, তাহলে সেগুলো কি আর চিঠি বলে চেনা যাওয়ার কথা? পানিতে ভিজে তো সেগুলোর যাতা-মাতা অবস্থা হওয়ার কথা।
জিনিউজ এর এক খবরে বলা হয়েছে, এই ডাক বাক্সটি রয়েছে জাপানের সুসামি শহরে। প্রতিবছর কয়েকশো পর্যটক ‘ডিপ সি ডাইভিং’-এর ছুতোয় মূলত এই ডাক বাক্সের টানেই ছুটে আসেন এখানে। জাপানের এই শহরে মূলত মৎস্যজীবীদের বাস। প্রায় ৫ হাজার মৎস্যজীবী এখানে বসবাস করেন। ১৯৯৯ সালের এপ্রিলে এখানে ‘কুমানোকোদো’ ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করেই পর্যটন প্রসারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। সেই সময় এক প্রবীণ পোস্টমাস্টারের পরামর্শ মতে ‘ডিপ সি ডাইভিং’-এর পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয় এখানে। এরই প্রধান অঙ্গ হিসেবে সমুদ্রের গভীরে বসানো হয় এই ‘আন্ডার ওয়াটার পোস্টবক্স’টি!
জানা গেছে, সমুদ্র সৈকত হতে ১০ মিটার দূরে ও ৩২ ফুট গভীরে বসানো হয়েছে এই ডাক বাক্সটি। ১৯৯৯ সাল হতে এই পর্যন্ত প্রায় ৩৬ হাজার চিঠি পড়েছে এই ডাক বাক্সটিতে। ভাবছেন, পানির তলায় চিঠিপত্র টিকবে কীভাবে? এখানকার স্থানীয় দোকানে পাওয়া যায় বিশেষ ওয়াটারপ্রুফ কাগজ, খাম ও বিশেষ মার্কার পেনও। এই মার্কার পেন দিয়েই ওয়াটারপ্রুফ কাগজে চিঠি লিখে পানির নিচে গিয়ে নিজেদের চিঠি পোস্ট করেন এখানে আসা পর্যটকরা। নির্দিষ্ট সময় পর পর পোস্টাল ডাইভাররা সেই চিঠিগুলো তুলে এনে সেগুলোকে পরে পাঠিয়ে দেন স্থানীয় ডাকঘরে। মোটামুটিভাবে এক সপ্তাহের মধ্যে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া হয় চিঠিগুলো। ৬’মাস পর পর ডাকবাক্সটি তুলে আনা হয় রং ও মেরামত করার জন্য। দু’টি ডাকবাক্স এভাবে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে রেখে আসা হয় সমুদ্রের তলদেশে!
২০০২ সালে ‘ডিপেস্ট আন্ডার ওয়াটার পোস্টবক্স’ হিসেবে গিনেস রেকর্ডের বইয়ে স্থান করে নেয় সুসামির এই ডাক বাক্সটি। তবে সুসামির এই ডাক বাক্সটিই বিশ্বের একমাত্র ‘আন্ডার ওয়াটার পোস্টবক্স’ তা কিন্তু নয়। প্রশান্ত মহাসাগরের ভানুয়াতো দ্বীপরাষ্ট্রে পর্যটকদের টানতে সেখানেই প্রথম শুরু হয়েছিল আন্ডারওয়াটার পোস্ট বক্স। তারই অনুকরণে জাপানের সুসামিতে তৈরি করা হয় এই ‘আন্ডার ওয়াটার পোস্টবক্স’টি। শুনলে সত্যিই বিস্ময়কর মনে হয়!