The Dhaka Times Desk অফিসে ফাঁকি দেওয়া কর্মীদের নিয়ে গবেষণায় উঠে এসেছে নানা তথ্য। তারমধ্যে একটি হলো কাজ না করেও কেবল যোগাযোগ ও কৌশল অবলম্বন বসকে খুশি করা।
সম্প্রতি একটি গবেষণা রিপোর্টে এমন কিছু তথ্য উঠে এসেছে যা শুনলে অবাক হতে হয়। অফিসিয়াল মিটিংগুলোয় সামনের সারিতে বসে কর্তা ব্যক্তিদের কথায় বিবেকহীনভাবে সমর্থন জুগিয়ে কিংবা প্রশংসা করে তাদের চোখে পড়েন এমন কর্মী প্রায় অফিসেই রয়েছে। আদতে অফিসের কাজে তাদের বিশেষ কোনো মনোযোগই নেই। এই ধরনের ব্যক্তিদেরকে `আত্ম-প্রচারকারী` বলে উল্লেখ করা হয়েছে যুক্তরাজ্যের একটি গবেষণায়।
গবেষণা রিপোর্টটি বলছে, প্রকৃতার্থে কাজের কাজ কিছু না করেও কেবলমাত্র যোগাযোগ ও কৌশল কাজে লাগিয়ে আত্ম-প্রচারকারী ব্যক্তিরা অফিসে বড় কর্তাদের চোখে ভালো কর্মী হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকেন।
শুধু তাই নয়, অনেকক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, যারা প্রকৃতপক্ষেই নিবিষ্ট চিত্তে কাজ করে যান তেমন কর্মীদের চেয়ে কিছুক্ষেত্রে আত্ম-প্রচারকারীরাও এগিয়ে থাকেন।
যুক্তরাজ্যের সাম্প্রতিক এই গবেষণা আরও বলছে, এসব ব্যক্তিরা দিন শেষে (বা প্রকৃত অর্থে) `টিম-ওয়ার্ক` বা `দলগত কাজে` আদতে কোনো উপকারেই আসে না।
তাই এইক্ষেত্রে আত্ম-প্রচারকারী ব্যক্তিদেরকে চিহ্নিত করা হচ্ছে মূলত, `কাজের চেয়ে আওয়াজ বেশি` দেওয়া ব্যক্তি হিসেবেই।
`প্রোডাক্টিভিটি স্টাডি` বা কর্মোৎপাদন সক্ষমতা বিষয়ক এই গবেষণার আওতায় রাখা হয়েছিল যুক্তরাজ্যের ২৮টি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের।
এই গবেষণা থেকে একদল কর্মীকে চিহ্নিত করা হয় যাদেরকে দূর থেকে দেখলে মনে হবে যে, তারা `হাইলি এনগেজ্ড` বা তারা নিজের কাজে `অতি গভীরভাবেই সম্পৃক্ত`।
তবে নিবিড়ভাবে মনোযোগ দিলে বোঝা যায় যে, এসব ব্যক্তি আসলেও `সেল্ফ-প্রমোটার` কিংবা `আত্ম-প্রচারকারী` মাত্র।
হাল্ট ইন্টারনেশনাল বিজনেস স্কুলের এই গবেষণায় টিম-ওয়ার্ক কিংবা দলগত কাজে কর্মীদের সম্পৃক্ততার বিভিন্ন স্তর নিয়েও খতিয়ে দেখা হচ্ছিলো।
এতে ৭টি ভিন্ন ভিন্ন ধরণের কর্মক্ষেত্রের কর্মীদের নমুনা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যারমধ্যে স্বাস্থ্য, সরকার এবং পরিবহন হতে শুরু করে অলাভজনক প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।
গবেষণাটি বলছে যে, প্রতি ৫টি টিমের একটিতে এই ধরণের `প্রহেলিকা` বা ধাঁধাও পাওয়া গেছে। যেখানে দেখা গেছে, কর্মীরা খুবই সম্পৃক্ত তবে প্রকৃতার্থে তাদের উৎপাদশীলতা খুবই কম।
এই ধরনের টিমগুলোর দিকে গবেষকরা নিবিড়ভাবে লক্ষ্য করে দেখেছেন, এসব টিমের সদস্যরা আসলে যতো বুলি দেন ততো কাজ করেন না। কিংবা উল্টো করে বলা যায়, তারা যতো না কাজ করে তার চেয়ে বেশি দেয় আওয়াজ করে।
অর্থাৎ দেখা যায় এই ধরণের ব্যক্তিরা মিটিংগুলোতে ঘড়ি ধরে উপস্থিত হয়, অফিসের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে আলাপে জড়িত হয় এবং তারা তাদের কথা ও যুক্তিতে সায় দেয়।
এসব চাটুকারিতা করার মাধ্যমে তারা কর্তাব্যক্তিদের চোখে পড়ে এবং কর্মক্ষেত্রে ভালো কাজের সুনাম পায় এবং এমনকি দেখা যায় পদোন্নতিও পেয়ে যান তারা।
এই ধরণের ব্যক্তিদেরকে ওই গবেষণায় `সুডো-এনগেজ্ড` কিংবা কাজে গভীরভাবে সম্পৃক্ত হবার ভানধারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
`আত্ম-প্রচারকারী` এবং অনেক কাজে ডুবে থাকার ভেকধারী ব্যক্তিদেরকে এই গবেষণার সিনিয়র গবেষক এমি আর্মস্ট্রং `স্বার্থপর` বলে বর্ণনা করেন।
এমি আর্মস্ট্রং-এর মতে, এই ধরণের ব্যক্তিরা দলগত কাজকে অবমূল্যায়ন করে এবং দিনশেষে তারা প্রকৃতপক্ষে কাজে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।
কাজে ব্যস্ততা দেখানোর ছদ্মবরণ নেওয়া এই কর্মীরাও অনেক সময়ই দেখা যায় যে, অফিসে বেশ প্রশংসা, সুনাম ও পদোন্নতিও পেয়ে যান।
এই ধরনের কর্মীরা অফিসে পুরস্কৃত হবার বিষয়টিকে এমি আর্মস্ট্রং `অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক` হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
আর্মস্ট্রং ব্যাখ্যা করেন যে, আত্ম-প্রচারকারী কর্মীরা নিজের সুবিধার্তে অফিসের কর্তা ব্যক্তির সামনে অনেক কিছুই করে থাকেন।
তবে দিন শেষে এরা তাদের সহকর্মীদেরকে খুব কম বিশ্বাস করে এবং কাজের ক্ষেত্রেও কম সহযোগিতা করতে দেখা যায়।
এই ধরণের ব্যক্তিদের কারণে যেমন কাজের পরিবেশ বিনষ্ট হতে পারে, ঠিক তেমনি অন্যরাও দলগত কাজে আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে বলে মনে করেন এই গবেষণার সিনিয়র গবেষক এমি আর্মস্ট্রং।