The Dhaka Times Desk আপনার সন্তান কী কানে কম শোনে? শ্রবণ প্রতিবন্ধী? চিকিৎসায় কোনোই কাজ হচ্ছে না? এখন থেকে আর টেনশন নেই। বিজ্ঞানের এক অসামান্য উদ্ভাবন ককলিয়ার ইমপ্ল্যান্ট (Cochlear Implant) বা বায়োনিক কান এখন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে!
কানে শোনা গেলেই তো কথা বলাও শেখা যায়। শ্রবণ প্রতিবন্ধী, বোবারা কানে শোনে না বলেই তারা কথা বলতে পারে না। তাদের কানে শোনার ব্যাপারটি এবার করবে ইলেকট্রনিক্স কান। যার বৈজ্ঞানিক নাম দেওয়া হয়েছে ‘বায়োনিক কান’। স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে ‘ককলিয়ার ইমপ্ল্যান্ট’। এটি আসলে এমন এক ধরনের প্রযুক্তি, যার মাধ্যমে সরাসরি অন্তঃকর্ণের ককলিয়ার নার্ভে শব্দ সংকেত পাঠিয়ে অতি গুরুতর শ্রবণ প্রতিবন্ধীরাও বিশেষভাবে হিয়ারিং এইড যাদের কোনো কাজেই আসে না, তাদের সফলভাবে শব্দ যোগাযোগ স্থাপন করতে সক্ষম। জন্মগত ত্রুটি, রোগ কিংবা দূর্ঘটনাজনিত কারণে স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্থ, বহিঃকর্ণ ও মধ্যকর্ণ সম্পন্ন শ্রবণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা কানের বাইরে দিয়েই এই যন্ত্রের মাধ্যমে শ্রবণক্ষম হতে সক্ষম। এই যন্ত্রের সাহায্যে ইয়ার ক্যানাল ছাড়াই শব্দ সংকেত মস্তিষ্কে পৌঁছে যাবে এবং শ্রবণ অনুভূতির সৃষ্টি করে থাকে। ককলিয়ার ইমপ্ল্যান্টটিতে প্রধানত দু’টো অংশ রয়েছে। একটি অংশ হলো শরীরের ভিতর থাকে, আরেকটি থাকে বাইরের দিকে। বাইরের অংশে আবার ৩টি যন্ত্রাংশও কাজ করে। মাইক্রোফোন স্পিচ প্রসেসর ও ট্রান্সমিটার। মাইক্রোফোন এবং ট্রান্সমিটারকে একত্রে হেডমেট বলা হয়ে থাকে। স্পিস প্রসেসরকে একটি ফিতা কিংবা স্ট্র্যাপের সাহায্যে পিঠে ঝুলিয়ে রাখা যাবে। শরীরের ভিতর থাকে দু’টি যন্ত্রাংশ। যাকে বলা হয় ডিকোডার ও ইলেকট্রোড।
কিভাবে এটি সম্ভব হবে?
বলা হয়েছে যে, গোটা যন্ত্রই বেশ কয়েকটি ধাপে এর কাজ সম্পন্ন করে থাকে। মাইক্রোফোন শব্দ গ্রহণ করে ও স্পিচ প্রসেসর তা পৌঁছে দেয়। স্পিস প্রসেসর এই শব্দ প্রয়োজন অনুযায়ী বাছাই ও কোডিং করে ট্রান্সমিটারে পাঠিয়ে থাকে। ট্রান্সমিটারে বাছাইকৃত শব্দ সংকেত বাইরে থেকে মাথার চামড়ার নিচে অবস্থিত ডিকোডারে তা পৌঁছে দেয়। রিসিভিং ডিকোডার ট্রান্সমিটার কর্তৃক প্রেরিত শব্দ সঙ্কেতটিকে বৈদ্যুতিক সংকেতে রূপান্তরিত করে থাকে। শব্দের এই রূপান্তরিত বৈদ্যুতিক সংকেত ইলেকট্রোডকে কার্যকর করে এবং শ্রবণের স্নায়ুতন্ত্রগুলোকে উদ্দীপনা সৃষ্টি করে থাকে। স্নায়ুতন্ত্রগুলো এই সকল উদ্দীপনা মস্তিষ্কে বয়ে নিয়ে যায় ও শ্রবণ অনুভূতির সৃষ্টি করে থাকে। এই যন্ত্রটি সংস্থাপনের পর চারিদিকে শব্দকে গন্ডগোল, হৈ চৈ এর মতোও মনে হয়। তবে সময় এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শব্দ উপলব্ধি ও বিভিন্ন ধরনের শব্দের পার্থক্য নিরুপণ করা সম্ভবপর হয়। অনেকটা ছোট শিশুদের শব্দ ও কথা শেখার মতোই হয়।
যন্ত্র কান আসলে কী?
বলা হয়েছে, তবে ৮ বছরের বেশি বয়সী শিশুদের বেলায় এই যন্ত্রটি আশানুরূপ ফলাফল নাও দিতে পারে। কেনোনা ৮ বছরের মধ্যে কথা বা যে কোনো শব্দ উচ্চারণ করতে না পারলে তাদের ক্যারিংস কিংবা স্বরযন্ত্র ধীরে ধীরে দৃঢ় হয়ে যায়। শিশু ছাড়া বড়দের জন্যও এটি বিশেষ সহায়ক হবে যদি তিনি লিপরিডিং কিংবা অন্য কোনো উপায়ে যে কোনো ধরনের কিছু শব্দ উচ্চারণ করে অনুভূতি প্রকাশ করতে সক্ষম হয়ে থাকে। তাছাড়া রোগ বা দুর্ঘটনাজনিত কারণে যে কোনো বয়সী ব্যক্তির কানের পর্দা ফেটে গেলে কিংবা বহিঃকর্ণ হতে মধ্যকর্ণ কিংবা অন্তঃকর্ণ পর্যন্ত কোনো স্থায়ী প্রতিবন্ধকতা তৈরি হলে এই যন্ত্রের মাধ্যমে সরাসরি মস্তিষ্কে সংকেত পাঠিয়ে সেই সমস্যা হতে উত্তরণ সম্ভব হয়। তাই নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, একটি সুস্থ, সুন্দর ও স্বাভাবিক জীবন যাপনের সম্পূর্ণভাবে উপযুক্ত থাকবেন তিনি। এই যন্ত্রটি সংস্থাপনের পর আন্তরিকতা এবং নিয়মানুবর্তিতার সঙ্গে কথা শোনা ও বলার অনুশীলনের ওপরও এর সুবিধা অনেকাংশে বেড়ে যাওয়া নির্ভর করে থাকে। এই যন্ত্র ব্যবহার করে প্রায় সকল প্রকার খেলাধুলায় এমনকি সাঁতারেও অংশ নেওয়া যায় খুব স্বচ্ছন্দ্যে। তবে কুস্তি, মুস্টিযুদ্ধ, ফুটবল কিংবা রাগবি ইত্যাদি খেলা এদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। তাছাড়া এই যন্ত্র ব্যবহারে তেমন কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া এখন পর্যন্ত চিহ্নিত হয়নি বলে জানা যায়।
তাই ককলিয়ার ইমপ্ল্যান্ট কিংবা বায়োনিক কানের এই উদ্ভাবন গোটা আধুনিক বিশ্বের শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের জন্যই বিজ্ঞানের এক অসামান্য আশীর্বাদ হিসেবে দেখা হচ্ছে। শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের নৈঃশব্দের জগতে বায়োনিক কান সৃষ্টি করতে চলেছে ছন্দময় জীবন- যে জীবনে সব কিছুই হবে সহজতর ও সাবলিল।
সূত্র: বিজ্ঞান লেখক ও গবেষক, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়- এর লেখা তথ্য হতে প্রাপ্ত।