The Dhaka Times Desk বিমানে উঠার সময় কঠোরভাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার পরও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মাঝে-মধ্যেই ঘটে বিমান ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা। আজ জানুন বিশ্বের বিমান ছিনতাইয়ের দুর্ধর্ষ কয়েকটি ঘটনা।
১৯৮৪ সালের ৩ ডিসেম্বরের ঘটনা। কুয়েত সিটি বিমানবন্দরের অবস্থা খুব স্বাভাবিক ছিলো। কুয়েত এয়ারওয়েজ-এর একটি বিমান পাকিস্তানের করাচি যাওয়ার জন্য প্রস্তুত।
নির্ধারিত সময় বিমানটি আকাশেও উড়ে। তবে উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরই ছিনতাইকারীরা বিমানটির দখল নেয়। লেবাননের ৪ জন উগ্র শিয়া ছিলেন ছিনতাইকারী। ছিনতাইকারীরা বিমানটির দিক পরিবর্তন করে ইরানের তেহরানে নিয়ে যান।
তেহরানে বিমানটি অবতরণের পর নারী, শিশু ও মুসলিমদের ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে মার্কিন সংস্থা ইউএসএআইডি’র দুই কর্মকর্তাকে গুলি করে হত্যা করে ছিনতাইকারীরা।
৬ দিন জিম্মি অবস্থার পর ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী বিমানটিতে অভিযান চালিয়ে ৯ জনকে মুক্ত করে।
১৯৮৫ সালের ২৩ নভেম্বরের ঘটনা। ইজিপ্ট এয়ারের একটি বিমান ৯২ জন যাত্রী ও ৬ জন ক্রু নিয়ে গ্রিসের এথেন্স হতে মিশরের কায়রো যাচ্ছিল।
ফ্লাইট এটেন্ডেডরা যখন যাত্রীদের মধ্যে খবরের কাগজ বিতরণ করছিলেন তখন একজন যাত্রী জোর করে ককপিটে ঢুকে পড়ে। বাকি ২ জন ছিনতাইকারীদের মধ্যে একজন সামনে ও অপরজন পেছনে অবস্থান করে। তখন ছিনতাইকারীরা অস্ত্র বের করে। যাত্রীদের নড়াচড়া করতে নিষেধ করে এবং তাদের কাছ থেকে পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া হয়।
এক পর্যায়ে ছিনতাইকারীদের একজন যাত্রীকে পাসপোর্ট দিতে বলে। তিনি ছিলেন মিশরের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য। তিনি ব্যাগ থেকে পাসপোর্ট বের না করে একটি পিস্তল বের করেন এবং একজন ছিনতাইকারীকে গুলি করেন।
এতে ওই ছিনতাইকারী মারা যায়। সেই সময় ককপিট হতে অপর ছিনতাইকারীও বেরিয়ে আসে। তাদের মধ্যে মাঝ আকাশেই শুরু হয়ে যায় গোলাগুলি। আর তখন বিমানের কেবিন প্রেশার নেমে যায় ও অক্সিজেন মাসক নেমে আসে।
ছিনতাইকারীরা বলে বিমান তাদের নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে এবং কাওকে নড়াচড়া করতে নিষেধ করেন। তারপর রাত ৯ টার দিকে বিমানটি মাল্টায় অবতরণ করে। সেখানে নেমে ছিনতাইকারীরা বিমানের জন্য জ্বালানি তেল দাবি করেন।
তবে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বলেন, জিম্মি যাত্রীদের মুক্তি না দিলে জ্বালানি তেল দেওয়া হবে না। তবে ছিনতাইকারীরা তাদের দাবিতে অনড় থাকেন। এক পর্যায়ে তারা বলেন জ্বালানি তেল না দিলে প্রতি ১০ মিনিটে একজন করে যাত্রীকে হত্যা করা হবে।
এভাবে তারা কয়েকজন যাত্রীকে গুলি করে প্লেনের বাইরে রানওয়েতে ফেলেও দেয়। তবে তারপরও জ্বালানি তেল সরবরাহ করেনি মাল্টা কর্তৃপক্ষ।
এর পরেরদিন বিকেল পোনে ৪টায় মাল্টা সরকারের অনুমোদন নিয়ে মিশরের কমান্ডোরা বিমানটিতে অভিযান চালায় এবং জিম্মি দশার অবসান ঘটে।
ওই বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনায় দুই ছিনতাইকারীসহ মোট ৫৯ জন মানুষ মারা যায়। বিমানে হামলার কারণে ২৭ জন আহত হন।
১৯৮৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বরের ঘটনা। ভারতের মুম্বাই হতে প্যান অ্যাম-এর বিমানটির গন্তব্য ছিল নিউইয়র্ক। মুম্বাই হতে ছেড়ে আসার পরই বিমানটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। বিমানটি পাকিস্তানের করাচি বিমানবন্দরে নামে। সেই বিমানটি ছিনতাইয়ের রক্তাক্ত অবসান ঘটে। ওই ছিনতাইয়ের ঘটনায় ২২ জন নিহত ও ১৫০ জন আহত হয়। ফিলিস্তিনী জঙ্গিরা ওই বিমানটিতে অস্ত্র নিয়ে উঠেছিল।
বিমানটি যখন টারমার্কে দাঁড়ানো অবস্থায় ছিল, সেই সময় নিরাপত্তা রক্ষীদের ছদ্মবেশ ধারণ করে বিমানে ঢুকে পড়ে ছিনতাইকারীরা। বিমানে ঢুকেই অস্ত্রধারীরা কেবিন ক্রুদের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে বলে যে, তাদের পাইলটের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
তখন কেবিন ক্রুদের মধ্যে একজন খুব দ্রুততার সঙ্গে পাইলটদের জানিয়ে দেন যে, বিমানে অস্ত্রধারীরা প্রবেশ করেছে। তখন পাইলটরা বেশ দ্রুততার সঙ্গে বিমান থেকে বেরিয়ে যায়।
ছিনতাইকারীরা পাইলটদের ফিরিয়ে আনার জন্য নানা রকম চাপ দিচ্ছিল। কারণ তাদের উদ্দেশ্যই ছিল বিমানটিকে ইসরায়েল অথবা সাইপ্রাসে নিয়ে যাওয়া। পাইলটরা বিমানে ফিরে না আসার কারণে একজন যাত্রীকে গুলি করে হত্যা করে বিমান থেকে নিচে ফেলে দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে ছিনতাইকারীরা পাইলটদের ফিরে আসার জন্য চাপ সৃষ্টি করছিল। ছিনতাইকারীরা কেবলমাত্র আমেরিকান যাত্রীদের খুঁজছিল।
ওই বিমানে ছিনতাইকারীদের গুলিতে নিহত হয় ভারতীয় কেবিন ক্রু নিরজা। যাকে নিয়ে বলিউডে চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়েছে। যখন সন্ধ্যা হয়, তখন বিমানের ভেতরেও অন্ধকার নেমে আসে। তখন বিমানের ৩টি দরজা খুলে দেওয়া হয়। অন্ধকারের মধ্যে অস্ত্রধারীরা বিষয়টি বুঝতেই পারেননি। সেই সুযোগে অনেক যাত্রীকে নামিয়ে দেন কেবিন ক্রুরা। এক পর্যায়ে অবস্থা বেগতিক দেখে অস্ত্রধারীরা বিমান ছেড়ে পালিয়ে যাবার সময় পাকিস্তানী নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন।
১৯৯৯ সালের ২৪ জানুয়ারির ঘটনা। ১৮০ জন যাত্রী নিয়ে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইট কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দর হতে উড্ডয়ন করে। বিমানটি আকাশে উঠার ৩০ মিনিট পর ছিনতাইকারীরা বিমানের দখল নিয়ে নেয়।
তারপর বিমানটিকে পাকিস্তানের আকাশ সীমায় নিয়ে যাওয়া হয়। তবে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান হওয়ায় সেটিকে পাকিস্তানে অবতরণের অনুমতি দেওয়া হয়নি। তখন বিমানে জ্বালানি প্রায় শেষের দিকে।
বিমানটি তখন ভারতের আকাশ সীমায় ফিরে এসে অমৃতসর বিমানবন্দরে অবতরণ করে। তবে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সেটিকে জ্বালানি সরবরাহ করছিল না। বিমানের ভেতর থেকে পাইলট কন্ট্রোল রুমকে জানায় যে ৪ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। পরিস্থিতি আরও অবনতির আশংকায় বিমানটিকে কিছু জ্বালানি দেওয়া হোক।
ভারত সরকার পাকিস্তানের সাথে কথা বলেন। তারপর সেটি উড়ে যায় পাকিস্তানের লাহোর বিমানবন্দরে। সেখানে বিমানটিকে নামার অনুমতি দেওয়া হয় এবং সেখান থেকে জ্বালানি নিয়ে বিমানটি চলে যায় দুবাইতে।
দুবাইয়ে যাবার পর ছিনতাইকারীরা ২৭ জন জিম্মিকে ছেড়ে দেয় ও নিহতদের মধ্যে একজনের মরদেহ হস্তান্তরও করা হয়। তারপর বিমানটি চলে আসে আফগানিস্তানের কান্দাহার বিমানবন্দরে। সেখানে বিমানের ভেতরেই যাত্রীরা ৬ দিন ছিলেন।
যাত্রীদের জিম্মি করে ছিনতাইকারীরা ভারতের কারাগারে আটক তাদের ৩৬ জনকে ফেরত দেওয়া দাবি করে। এছাড়াও ছিনতাইকারীরা ২০০ মিলিয়ন ডলারও দাবি করে। ভারতের কারাগারে আটক ৩ জন জঙ্গিকে মুক্তি দেওয়ার বিনিময়ে বিমানের জিম্মি নাটকের অবসান ঘটেছিলো।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আমেরিকায় ৪টি বিমান ছিনতাই করেন ১৯ জন ছিনতাইকারী। সেই বিমানগুলো দিয়ে নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়েছিলো। সেই হামলার পরিকল্পনাকারী ছিলেন আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেন, এমন দাবিই করা হয়।
ওই দিন সকাল ৮:৪৬ মিনিটে বস্টন হতে লস এঞ্জেলসগামী আমেরিকান এয়ার লাইন্স-এর বিমান ছিনতাই করে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের উত্তর টাওয়ারে আঘাত করা হয়।
৯:০৩ মিনিটে বস্টন হতে লস এঞ্জেলস গামী ইউনাইটেড এয়ার লাইন্স-এর বিমান ছিনতাই করা হয়। বিমানটি ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের দক্ষিণ টাওয়ারে আঘাত করেছিলো।
৯:৩৭ মিনিটে আমেরিকান এয়ারলাইন্স-এর আরেকটি ফ্লাইট ছিনতাই করে ওয়াশিংটনে পেন্টাগন ভবনে আঘাত করেছিলো।
১০:০৩ মিনিটে ইউনাইটেড এয়ার লাইন্স-এর আরেকটি বিমান ছিনতাই করা হয়েছিলো। তবে সেই বিমানটি পেনসিলভানিয়াতে বিধ্বস্ত হয়েছিলো।
This post was last modified on জানুয়ারি ২৮, ২০২১ 12:02 pm
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ড এবং লেবাননজুড়ে ভয়াবহ হামলা চলমান রেখেছে…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ স্বপ্ন দেখে তা মনে রাখা সত্যিই দুষ্কর। আর তাই রাতের…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুভ সকাল। শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪ খৃস্টাব্দ, ৩০ কার্তিক ১৪৩১…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ অনেকই সুজি খেতে খুবই ভালোবাসেন। তাই তারা প্রতিদিন সুজির পায়েস,…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ প্রথমবারের মতো প্যান ইন্ডিয়ান চলচ্চিত্র বানিয়েছেন নির্মাতা অনন্য মামুন। ঢালিউড…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আপনার যদি প্রতিদিন চিকেন খাওয়ার অভ্যাস থাকে, তাহলে জেনে রাখুন,…