Categories: special news

আর কত সাংবাদিক বলি হবে? সাংবাদিক দম্পতি সাগর-মেহেরুন নিজ বাসায় নৃশংসভাবে খুন

Dhaka Times Report. আবারও সাংবাদিক হত্যার ঘটনা ঘটলো। আমাদের দেশের ইতিহাসে জঘণ্যতম ঘটনা হিসেবে এটিও লেখা থাকবে। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে খুলনায় সাংবাদিক হত্যা, যশোরের দৈনিক রানার সম্পাদক আর. এ. সাইফুল আলম মুকুল সন্ত্রাসীদের দ্বারা নিহত হন। এবার খোদ রাজধানীতেই ঘটলো এমন ঘটনা।
রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে নিজ বাসায় খুন হয়েছেন বেসরকারি টিভি চ্যানেল মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরোয়ার এবং তার স্ত্রী এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনী। ১০ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে ঘাতকরা জবাই ও ছুরিকাঘাতে এ সাংবাদিক দম্পতিকে হত্যা করে। পরদিন ১১ ফেব্রুয়ারি শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশ ৫৮/এ/২ পশ্চিম রাজাবাজারের ‘শাহজালাল রশিদ লজ’-এর বাসার পঞ্চম তলার এ-৪ ফ্ল্যাটের বেডরুম থেকে তাদের দু’জনের লাশ উদ্ধার করে। প্রথমদিকে এটি ডাকাতির ঘটনা বলে মনে হলেও পরে পুলিশ বলেছে, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। লোমহর্ষক এ জোড়া খুনের ঘটনার সঙ্গে সাংবাদিক দম্পতির ঘনিষ্ঠজনদের কেও জড়িত থাকতে পারে বলে গোয়েন্দারা ধারণা করছেন- তথ্য: দৈনিক যুগান্তরের।
তবে লোমহর্ষক এ ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত থাক, তারা অপেশাদার বলে ধারণা করছে পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। তাদের মতে, পেশাদার ঘাতক হলে এতবার ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করার প্রয়োজন হতো না। সেক্ষেত্রে কোথায় আঘাত করলে একজন ব্যক্তির মৃত্যু নিশ্চিত হবে তা ঘাতকদের জানা থাকার কথা। নৃশংস এ জোড়া খুনের ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ ওই বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী পলাশ রুদ্র পাল ও হুমায়ুন কবীরকে আটক করেছে। এ ঘটনায় মেহেরুন রুনীর ভাই নওশাদ আলমকেও পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
এদিকে সাংবাদিক দম্পতি খুনের ঘটনায় রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া, সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতারা শোক জানিয়েছেন। সাংবাদিক সাগর সরোয়ার ও মেহেরুন রুনী হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ১১ ফেব্রুয়ারি প্রেসক্লাবের সামনে প্রতীকি কর্মবিরতি পালন করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আইন-শৃংখলা বাহিনীকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ঘাতকদের খুঁজে বের করার নির্দেশ দিয়েছেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে সাংবাদিক দম্পতির লাশের ময়নাতদন্ত শেষে দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে তাদের মরদেহ নেয়া হয় মাছরাঙা টেলিভিশন ও এটিএন বাংলায় তাদের কর্মস্থলে।
যেভাবে খুনের ঘটনা : শুক্রবার সন্ধ্যার পরপরই ডিউটি শেষে ৬৬/১২ ইন্দিরা রোডে মায়ের বাসায় ফেরেন এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনী। সেখান থেকে একমাত্র সন্তান মাহির সরোয়ার মেঘকে নিয়ে যখন ৫৮/এ/২ রাজাবাজারের ফ্ল্যাটে আসেন (শাহজালাল রশিদ লজ), তখন সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা। ৬ তলা ওই ভবনের পঞ্চমতলার এ-৪ নম্বর ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন এ সাংবাদিক দম্পতি। ভবনের নিরাপত্তা কর্মী পলাশ রুদ্র জানান, ছেলের হাত ধরে দ্রুত তিনি ফ্ল্যাটে চলে যান। সাংবাদিক দম্পতির একমাত্র ছেলে মাহির সরোয়ার মেঘ সাংবাদিকদের জানিয়েছে, রাত ৮টার দিকে তাদের ফ্ল্যাটে দু’জন লোক আসে। সম্প্রতি পারিবারিক একটি পিকনিকের অনুষ্ঠানে ওই দুই লোককে সে দেখেছিল। তাদের সে আঙ্কেল বলে ডাকত। তবে তাদের নাম বা পরিচয় সে বলতে পারেনি। মেঘ জানায়, আম্মু ওই দু’জনকে নুডুলস রান্না করে খাওয়ায়। মেঘের এ বক্তব্যের সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে গোয়েন্দারা রান্নাঘরে গিয়ে ডিমের খোসা এবং ফ্রাই প্যানে নুডুলস ও ডিমের মিশ্রণে কিছু অংশ লেগে থাকতে দেখেন।
তবে নিরাপত্তা কর্মী পলাশ রুদ্র বলেছেন, মেহেরুন রুনী বাসায় ফেরার পর রাত পৌনে ২টার দিকে বাসায় ফেরেন মেহেরুন রুনীর স্বামী সাংবাদিক সাগর সরোয়ার। এর মাঝে তিনি আর কাউকে ওই ফ্ল্যাটে প্রবেশ করতে দেখেননি। তবে তার (পলাশ) ডিউটি শুরু হওয়ার আগে যখন হুমায়ুন ওই ভবনে নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন তখন বিকাল ৪টা ৫২ মিনিটে কমলাপুর থেকে ওই ফ্ল্যাটে আসেন তৌফিক নামে এক ব্যক্তি। ওই সময় ফ্ল্যাট তালাবদ্ধ থাকলেও তৌফিক কার কাছে গিয়েছিলেন তা তিনি পরে জানতে পারেননি। ফ্ল্যাটের রেজিস্টারে ওই ব্যক্তির নাম রয়েছে।
সাগর সরোয়ার বাসায় ফিরে তার কর্মস্থল মাছরাঙা টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক রেজওয়ানুল হক রাজার সঙ্গে সর্বশেষ কথা বলেন। গোয়েন্দাদের ধারণা, এর পরপরই খুন হয় সাংবাদিক দম্পতি। পলাশ রুদ্র জানায়, সকাল সাড়ে ৫টার দিকে ৪ তলার ফ্ল্যাটের বাসিন্দা ফ্ল্যাট মালিক সমিতির সভাপতি সেন্ট্রাল ইন্সুরেন্সের কর্মকর্তা নুরুন্নবী তাকে ইন্টারকমে ফোন করে কোথায় কান্নার শব্দ হচ্ছে জানতে চান। তবে তিনি কিছুই জানাতে পারেননি। এরপর ৮টার পর ঘটনা জানাজানি হয়।
গোয়েন্দাদের ধারণা : র‌্যাব ইন্টেলিজেন্স উইংয়ের প্রধান কর্নেল জিয়াউল আহসান জানান, সাগরকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে জবাই এবং বুক-পেটসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়েছে। আর রুনীর পেটের দু’পাশে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এতে তার নাড়ি-ভুঁড়ি বাইরে বেরিয়ে গেছে। সাগরের মুখ ও দু’পা বাঁধা থাকলেও দু’হাত ছিল খোলা। নির্মমভাবে এ সাংবাদিক দম্পতিকে খুন করা হলেও ধারালো অস্ত্রের আঘাত ছাড়া রুনী বা সাগরের শরীরে নখের আঁচড় ছিল না। এমনকি তাদের পরণের পোশাকও ছিল পরিপাটি। গোয়েন্দাদের ধারণা, ঘাতকরা হত্যার আগে রুনী ও সাগরকে কোনভাবে নিস্তেজ করে ফেলেছিল। তাদের খাবারের সঙ্গে কিছু মিশিয়ে দেয়া হয়েছিল কিনা গোয়েন্দারা তা খতিয়ে দেখছেন। কর্নেল জিয়াউল আহসান জানান, গভীর রাতের যে কোন সময় সাংবাদিক দম্পতিকে খুন করে ঘাতকরা মেইন গেট দিয়েই পালিয়েছে। সাগর-রুনী দম্পতির ৪-এ ফ্ল্যাটের রান্নাঘরের বারান্দার গ্রিলের একাংশ (১২ ইঞ্চি বাই ৮ ইঞ্চি) ভাঙা থাকলেও সেখান দিয়ে ঘরে ঢোকা বা বের হয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব। গোয়েন্দাদের ধারণা, তাদের বিভ্রান্ত করতেই ঘাতকরা গ্রিল ভেঙেছে।
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার ইমাম হোসেন বলেন, সাগর-রুনীর ৬ বছরের ছেলে মেঘ ঘটনার দিন শুক্রবার স্কুল থেকে পিকনিকে যায়। সে ক্লান্ত থাকায় আগেই নিজের ঘরে ঘুমিয়ে ছিল। সে বাবা-মাকে খুন করতে দেখেনি। তবে রাতে পূর্বপরিচিত দু’জন বাসায় এসেছিল বলে মেঘ পুলিশকে জানিয়েছে। ওই দু’জনকে সে তাদের পারিবারিক একটি পিকনিকের সময় দেখেছিল।
সাগরের সহকর্মীরা যা বলেন : সাগর সরোয়ারের সহকর্মীরা জানিয়েছেন, মাছরাঙা অফিসে বসেই সাগর রাতের খাবার খান। এসময় দীর্ঘক্ষণ মেহেরুন রুনীর মোবাইল ফোন বন্ধ ছিল। এ নিয়ে সাগর সরোয়ার উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তার উদ্বেগের কথা একজন সহকর্মীকেও জানান। পরে রাত দেড়টার দিকে তিনি অফিস থেকে বের হয়ে বাসার উদ্দেশে যান। এর কিছু সময় পর তিনি মোবাইল ফোনে চিফ নিউজ এডিটরের সঙ্গে কথাও বলেন।
ঘটনা যেভাবে জানাজানি হয় : রুনীর মা নূরনাহার মির্জা জানান, তার নাতি মাহীন সরোয়ার মেঘ ১১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৭টার দিকে রাজাবাজারের বাসা থেকে ফোন করে। ওরা আব্বু-আম্মুকে মেরে ফেলেছে। আতংকগ্রস্ত কণ্ঠে একথা বলেই কেঁদে ওঠে সাংবাদিক দম্পতির একমাত্র ছেলে মাহির সরোয়ার মেঘ। এ খবর শুনে তিনি তাদের পশ্চিম রাজাবাজারের ইন্দিরা রোডের বাসা থেকে মেয়ের বাসায় (৫৮/এ/২ হোল্ডিংয়ে শাহজালাল রশিদ লজের পঞ্চম তলা) ছুটে আসেন। শোয়ার ঘরে মেয়ে ও মেয়ের স্বামীর রক্তাক্ত লাশ দেখতে পেয়ে তিনি অন্যদের খবর দেন।
নূরনাহার মির্জা জানান, মেঘ ফার্মগেটের উইলিয়াম কেরি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের কেজির ছাত্র। ১০ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার স্কুলে পিকনিক ছিল। রুনী বা সাগর ওই পিকনিকে যেতে না পারায় তিনিই মেঘকে সঙ্গে নিয়ে পিকনিকে যান। বিকালে পিকনিক থেকে ফিরে মেঘকে তিনি তাদের ইন্দিরা রোডের বাসায় রাখেন। সন্ধ্যার দিকে রুনী এসে তাকে নিয়ে যায়।
রক্তে ভাসা বেডরুম : ‘রশিদ লজ’-এর ৫ তলায় তিন রুমের ওই ফ্ল্যাটে একমাত্র সাংবাদিক দম্পতির বেডরুম ছাড়া অন্য সব কক্ষের সবকিছুই ছিল পরিপাটি। বেডরুম ছাড়া অন্য কোন কক্ষে প্রবেশ করে বোঝার উপায় ছিল না যে মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে এখানে লোমহর্ষক এ জোড়া খুনের ঘটনা ঘটেছে। বেডরুমের সঙ্গে কিচেন রুমে ছড়ানো-ছিটানো কিছু বাসনপত্র, ডিমের খোসা, হাঁড়িতে ফুটানো পানি পড়ে ছিল। বেডরুমে প্রবেশের দরজার সঙ্গেই ছিল মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরোয়ারের লাশ। এসময় তার পরণে থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট এবং খালি গা ছিল। পা ও মুখ বাঁধা লাশটি এমনভাবে রাখা ছিল যাতে বেডরুমের দরজা পুরোপুরি খোলা সম্ভব নয়। অন্যদিকে থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট ও কালো রঙের টি-শার্ট পরিহিত মেহেরুন রুনীর লাশের অর্ধেক ছিল খাটের ওপর, বাকি অংশটি ছিল মেঝেতে ঝুলানো। পুরো বেডরুম ছিল রক্তে ভাসা।
ঘটনাস্থলে র‌্যাব-পুলিশ : খবর পেয়ে পুলিশ, র‌্যাব ও ডিবিসহ অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। সিআইডির ক্রাইম ইউনিটের সদস্যরা ছুটে এসে শোবার ঘর, ড্রইংরুম ও রান্নাঘরসহ গোটা বাসার বিভিন্ন অংশ এবং আসবাবপত্র থেকে ফিঙ্গার প্রিন্ট সংগ্রহ করেন। সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহ্‌হার আকন্দ বলেন, তারা বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছেন। এসব আলামত পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা করে খুনের মোটিভ উদ্ঘাটন এবং খুনিদের শনাক্ত করার চেষ্টা চালানো হবে।
কিছু খোয়া যায়নি : প্রথমদিকে ঘটনাটিকে ডাকাতি মনে হলেও শেষমেশ এ ঘটনাকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে মনে করছেন র‌্যাব, পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা। ঘটনাস্থলে উপস্থিত গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, বেডরুমের জিনিসপত্র এলোমেলো এবং স্টিল আলমারি, ওয়ারড্রোবের ড্রয়ারগুলো খোলা থাকলেও সেখান থেকে কিছু খোয়া গেছে এমন কিছু মনে হয়নি। বেডরুমে ল্যাপটপ, দুটি আইফোন ও ক্যামেরাসহ বেশকিছু দামি জিনিসপত্র পড়ে থাকলেও ঘাতকরা সেগুলো স্পর্শ করেনি। গোয়েন্দাদের ভাষ্য, ডাকাতি বা চুরির উদ্দেশ্যে কেউ ঘরে ঢুকলে এগুলো তারা নিয়ে যেত। খুনের ধরন দেখেও এটি স্বাভাবিক কোন হত্যাকাণ্ড মনে হয়নি। নৃশংসভাবে হত্যা করে কেউ পুরনো ক্ষোভ মিটিয়েছে বলে মনে হয়েছে।
নিরাপত্তা কর্মী পলাশের বক্তব্য : এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ অ্যাপার্টমেন্টের সিকিউরিটি গার্ড পলাশকে আটক করেছে। তবে ১১ ফেব্রুয়ারি রাত পর্যন্ত তার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। পলাশ জানিয়েছেন, সাগর-রুনীর বাসায় ১০ ফেব্রুয়ারি রাতে তাদের আত্মীয়-স্বজন বা পরিচিতজন কেউ আসেননি। গভীর রাতে বা ভোরের দিকে বহিরাগত অতিথি বা সন্দেহভাজন কাউকে তিনি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বের হয়ে যেতে দেখেননি। ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা কেউ ভোরে বাইরে যাননি বলে দাবি করেন পলাশ।
পলাশ জানিয়েছেন, রুনী সন্ধ্যা ৭টার দিকে বাসায় ঢোকেন। এরপর তিনি আর বাইরে যাননি। অ্যাপার্টমেন্টের অতিথি এন্ট্রি রেজিস্টারে দেখা যায়, তৌফিক নামের একজন বিকাল ৪টা ৪৫ মিনিটে সাগর-রুনীর ফ্ল্যাটে এসেছিলেন। তার আগমনের স্থান কমলাপুর লেখা রয়েছে। তবে তার আগমনের সময় লেখা থাকলেও তিনি কখন বের হয়ে গেছেন তা এন্ট্রি রেজিস্টারে উল্লেখ নেই। এ ব্যাপারে সিকিউরিটি গার্ড বা বাড়ির কেয়ারটেকার আবু তাহের কিছু জানাতে পারেননি।
শাহজালাল রশিদ লজের ফ্ল্যাট মালিক সমিতির সভাপতি নূরুন নবী জানান, ভোর রাতের দিকে তিনি গোঙানির শব্দ শুনতে পান। তিনি সিকিউরিটি গার্ডকে ইন্টারকমে বিষয়টি জানান। কিছু সময় পর সিকিউরিটি গার্ড পলাশ তাকে জানান, পাশের কোন বাড়িতে এ শব্দ হতে পারে। তাদের ফ্ল্যাটে কিছু হয়নি। এরপর তিনি আর বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর নেননি।
সাংবাদিক দম্পতি খুনের খবর পেয়ে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তার প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ এবং বিশেষ সহকারী (মিডিয়া) মাহবুবুল আলম শাকিল, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আআমস আরেফিন সিদ্দিক, পুলিশের মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার, ডিএমপি কমিশনার বেনজীর আহমেদসহ অনেকেই ছুটে আসেন। তারা শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান ।
সাংবাদিক দম্পতির কর্মজীবন : মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরোয়ার ও এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্র্টার মেহেরুন রুনীর কর্মজীবন শুরু হয় দৈনিক সংবাদে ‘জলসা’ নামে একটি ক্রোড়পত্রে। এখানেই তাদের পরিচয়। এর আগে মেহেরুন রুনী কিছুদিন পাক্ষিক অর্থকণ্ঠেও কাজ করেন। পরে তারা দৈনিক যুগান্তরের বিনোদন বিভাগে যোগদান করেন। পরবর্তী সময়ে সাগর সরোয়ার দৈনিক যুগান্তর ছেড়ে চলে যান দৈনিক ইত্তেফাকে। সেখানে কিছুদিন কাজ করার পর তিনি জার্মানির রাষ্ট্রায়ত্ত বেতার ডয়েচে ভেলিতে যোগ দেন। সম্প্রতি দেশে ফিরে তিনি মাছরাঙা টেলিভিশনে বার্তা সম্পাদক পদে কাজ শুরু করেন।
অন্যদিকে মেহেরুন রুনী দৈনিক যুগান্তর থেকে যোগ দেন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আইয়ে। পরে তিনি বর্তমান কর্মস্থল এটিএন বাংলায় যোগ দেন। শেষ দিন পর্যন্ত তিনি সেখানেই কর্মরত ছিলেন।
জানাজা ও দাফন : ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে সাংবাদিক দম্পতির লাশের ময়নাতদন্ত শেষে দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে তাদের মরদেহ নেয়া হয় মাছারাঙা টেলিভিশন ও এটিএন বাংলায় তাদের কর্মস্থলে। এসময় দুই কার্যালয়ে তাদের সহকর্মীরা ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানান। এসময় অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এরপর সন্ধ্যার দিকে সাংবাদিক দম্পতির লাশ নিয়ে যাওয়া হয় সাগরের পুরনো ঢাকায় পৈতৃক বাড়িতে। সেখানে জানাজা শেষে রাতে আজিমপুর কবরস্থানে এ সাংবাদিক দম্পতিকে দাফন করা হয়েছে।
পাবনায় শোকের ছায়া : পাবনা প্রতিনিধি জানান, পাবনার বেড়া উপজেলার কাজীরহাটের ছেলে মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরোয়ার সস্ত্রীক খুন হওয়ায় কাজীরহাটসহ পাবনায়জুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। কাজীরহাটে এ হত্যাকাণ্ডের খবর এসে পৌঁছলে চাচা হারুনুর রশিদের বাড়িসহ অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন এবং পুরো এলাকাবাসী শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়ে। পাবনা প্রেসক্লাবসহ স্থানীয় সাংবাদিক মহলেও দেখা দেয় শোক ও তীব্র ক্ষোভ। পাবনা প্রেসক্লাবের সভাপতি প্রফেসর শিবজিত নাগ, সম্পাদক আহমেদ উল হক রানা, সাবেক সহ-সভাপতি আখতারুজ্জামান আখতার, সাবেক সম্পাদক এবিএম ফজলুর রহমান, পাবনা সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আবদুল মজিদ, সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম প্রমুখ শোক জ্ঞাপন করেছেন। তারা অবিলম্বে খুনিদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
কাজীরহাট থেকে সাগর সরোয়ারের আত্মীয় লাল মিয়া জানান, সাগর সরোয়ার কাজীরহাটে ক্লাস থ্রি পর্যন্ত পড়েছে। এরপর বাবার কর্মস্থলে ঢাকায় চলে যায়। ঢাকায় থাকলেও সময় পেলেই সাগর বেড়াতে আসতেন নিজ গ্রামে। সাগর ছিলেন বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে। তার আরও ৪ বোন রয়েছেন। বোনেরা সবাই বিবাহিত। বাবা মারা যাওয়ার পর তার একমাত্র চাচা হারুনুর রশিদ থাকেন নিজ গ্রাম কাজীরহাটে। হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে কাজীরহাটের সব আত্মীয়-স্বজন ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় চলে আসেন।

Related Posts

This post was last modified on ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১২ 8:39 am

Staff reporter

Recent Posts

এই ছবির মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে একটি হরিণ: আপনি কী খুঁজে বের করতে পারবেন?

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ এই জঙ্গলের মধ্যে নদী রয়েছে। রয়েছে সার দেওয়া গাছ। চারপাশে…

% days ago

A wonderful view of the mountains

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুভ সকাল। মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪ খৃস্টাব্দ, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১…

% days ago

Gym, yoga and more can be taught without worrying about the child's physical activity

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বর্তমানে পড়াশোনার জন্য দিনের বেশির ভাগ সময় কম্পিউটারে চোখ রাখতে…

% days ago

Inauguration of Mymensingh branch of DBH

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ দেশের গৃহঋণ প্রদানকারী স্পেশালিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠান ডিবিএইচ ফাইন্যান্স পিএলসি সম্প্রতি…

% days ago

Remove unfair clauses for equal opportunity in public procurement

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ রবিবার (১২ মে) সেমিনারে বক্তারা বলেন, সরকারকে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট প্রক্রিয়ায়…

% days ago

Tahsan sings 'K Tumi' again after 8 long years

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ৮ বছর পূর্বে ‘কে তুমি’ শিরোনামে একটি গান গেয়েছিলেন জনপ্রিয়…

% days ago