মোহাম্মদ শাহজালাল ॥ পেসমেকার হল একটি বৈদ্যুতিক যন্ত্র যা হৃদযন্ত্রের (হার্ট) নির্দিষ্ট স্পন্দন বা ধাপ বজায় রাখতে সাহায্য করে। যখন হৃদযন্ত্র স্বাভাবিক হারে স্পন্দন করতে অক্ষম হয় বা হার্টবিট খুব ধীর বা দ্রুত হয়ে যায়, তখন পেসমেকার ব্যবহার করা হয়। এটি একটি ছোট ব্যাটারি চালিত ডিভাইস যা সাধারণত বুকে বা পেটে প্রতিস্থাপন করা হয় এবং তারের মাধ্যমে হৃদযন্ত্রে সংযুক্ত থাকে।
পেসমেকারের কার্যপ্রণালী
পেসমেকার হৃদযন্ত্রে বৈদ্যুতিক সংকেত প্রেরণ করে এবং এটি স্বাভাবিক স্পন্দন হার বজায় রাখতে সাহায্য করে। পেসমেকার মূলত হৃদযন্ত্রের গতি নির্ধারণ করে এবং যখনই স্পন্দন ব্যাহত হয় বা কমে যায়, তখন এটি বৈদ্যুতিক তরঙ্গ প্রেরণ করে হৃদযন্ত্রকে সঠিকভাবে স্পন্দিত করে।
পেসমেকার ব্যবহারের কারণ
# হৃদযন্ত্রের ছন্দে গোলযোগ (Arrhythmia)।
# হৃদস্পন্দনের গতি ধীর বা অনিয়মিত হয়ে গেলে।
# যখন হৃদযন্ত্রের নিজস্ব পেসিং সিস্টেম ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না।
পেসমেকারের ধরণ
পেসমেকারের বিভিন্ন প্রকার রয়েছে, যেমন:
১. সিঙ্গেল চেম্বার পেসমেকার: এটি একটি চেম্বারকে স্পন্দন নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
২. ডুয়াল চেম্বার পেসমেকার: এটি হৃদযন্ত্রের দুই চেম্বারকে স্পন্দন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
৩. বাইভেন্ট্রিকুলার পেসমেকার: এটি হৃদযন্ত্রের তিনটি চেম্বারের স্পন্দন নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হয়, যা হৃদযন্ত্রের অসামঞ্জস্য দূর করে।
প্রক্রিয়া
পেসমেকার প্রতিস্থাপনের জন্য একটি ছোট অপারেশন করতে হয় যেখানে এটি ত্বকের নিচে রাখা হয়। এটি স্বাভাবিকভাবে একটি ছোট স্নায়ু বা ধমনীর মাধ্যমে হৃদযন্ত্রে সংযুক্ত থাকে।
পেসমেকারের যত্ন
পেসমেকার ব্যবহারকারীদের নিয়মিতভাবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত এবং পেসমেকারের ব্যাটারি ঠিক আছে কিনা তা পরীক্ষা করা দরকার। সাধারণত পেসমেকারের ব্যাটারি ৫ থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে, তারপর এটি পরিবর্তন করতে হয়।
পেসমেকার হলো জীবনরক্ষাকারী ডিভাইস, যা অনেক রোগীর জন্য স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
পেসমেকার হ্যাকিং
পেসমেকার ও অন্যান্য হার্টের ডিভাইসগুলো স্বাস্থ্যসেবায় এক বিশাল বিপ্লব এনেছে। এই ডিভাইসগুলো মানুষের জীবনে নতুন জীবন যোগ করেছে, বিশেষ করে যারা হার্টের সমস্যায় ভুগছেন। তবে, এই ডিভাইসগুলো যত বেশি সংযুক্ত হচ্ছে, ততই সাইবার আক্রমণের ঝুঁকিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। পেসমেকার হ্যাকিং এখনও অনেকটাই বিরল ঘটনা, তবে এটি মারাত্মক পরিণতির সম্ভাবনা তৈরি করে, যদি কোনো অবৈধ ব্যক্তি এই ডিভাইসের নিয়ন্ত্রণ নেয়।
পেসমেকার হ্যাকিং কী?
পেসমেকার হলো একটি ছোট ডিভাইস যা বুকে প্রতিস্থাপিত হয় এবং এটি রোগীর হার্টের গতি নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এই ডিভাইসটি বৈদ্যুতিক পালসের মাধ্যমে হার্টের গতি নিয়ন্ত্রণ করে। আধুনিক পেসমেকারগুলোতে ওয়্যারলেস সক্ষমতা থাকে, যা ডাক্তারদের দূর থেকে এই ডিভাইসটি মনিটর এবং প্রয়োজনমতো অ্যাডজাস্ট করতে সাহায্য করে। কিন্তু এই সুবিধার কারণেই সাইবার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে পেসমেকারে অবৈধভাবে প্রবেশ করে এর ফাংশন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কোনো দুষ্টচক্র যদি পেসমেকারের সেটিংস পরিবর্তন করে, তবে তা রোগীর স্বাস্থ্যের জন্য গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। যদিও বাস্তবে এই ধরনের ঘটনা খুব বিরল, তবুও ডিভাইস নির্মাতারা এই ঝুঁকি কমানোর জন্য ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন।
পেসমেকারের নিরাপত্তা নিয়ে কিছু বাস্তব গল্প
১. বারনাবি জ্যাকের গবেষণা (২০১২)
২০১২ সালে সাইবার নিরাপত্তা গবেষক বারনাবি জ্যাক প্রমাণ করেন যে, মেডিকেল ডিভাইসগুলো কতটা হ্যাকিংয়ের ঝুঁকিতে রয়েছে। এক সম্মেলনে তিনি পেসমেকার হ্যাক করার কৌশল দেখান এবং সেটিংস পরিবর্তন করে মারাত্মক শক দিতে সক্ষম হন। তার এই প্রদর্শনী মেডিকেল কমিউনিটিকে সচেতন করে, এবং ডিভাইসগুলোর নিরাপত্তা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়। বারনাবি জ্যাক ২০১৩ সালে প্রয়াত হন, তবে তার এই গবেষণা নিরাপত্তা দৃষ্টিকোণ থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে সহায়তা করে।
২. MedSec এবং Muddy Waters রিপোর্ট (২০১৬)
২০১৬ সালে সাইবার নিরাপত্তা ফার্ম MedSec এবং ইনভেস্টমেন্ট ফার্ম Muddy Waters, St. Jude Medical কোম্পানির পেসমেকার ও ডিফিব্রিলেটরের কিছু নিরাপত্তা ত্রুটি সম্পর্কে জানায়। তারা দাবি করে যে, এই ডিভাইসগুলো হ্যাকিংয়ের ঝুঁকিতে রয়েছে। পরে মার্কিন FDA এই নিরাপত্তা ঝুঁকির সত্যতা নিশ্চিত করে এবং সেগুলো ঠিক করার পরামর্শ দেয়। St. Jude Medical তাদের সফটওয়্যারে আপডেট এনে এই সমস্যাগুলো সমাধান করে।
৩. ভেটেরানের জীবন রক্ষার ঘটনা (২০১৭)
এক ভেটেরান রোগী তার পেসমেকার সংক্রান্ত অসুবিধার কারণে চিকিৎসকদের সাথে যোগাযোগ করেন। পরীক্ষার পর দেখা যায়, তার পেসমেকারে একটি গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ইনস্টল করা হয়নি যা নিরাপত্তা উন্নত করার জন্য প্রয়োজনীয় ছিল। যদিও কোনো হ্যাকিংয়ের প্রচেষ্টা হয়নি, তবে এটি দেখিয়েছে যে সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাব হলে নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। দ্রুত আপডেট ইনস্টল করার পর ডিভাইসটি পুনরায় সুরক্ষিত হয়।
৪. FDA এর উদ্যোগ ও নিরাপত্তা আপডেট (২০১৯-২০২০)
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে FDA বিভিন্ন কোম্পানির সাথে কাজ করে পেসমেকারের সাইবার নিরাপত্তা উন্নত করতে সহায়তা করেছে। উদাহরণস্বরূপ, Abbott নামের একটি কোম্পানি ২০১৯ ও ২০২০ সালে তাদের ডিভাইসগুলোতে নিরাপত্তা আপডেট প্রদান করেছে। এই আপডেটগুলোতে পেসমেকার এবং মনিটরিং ডিভাইসের মধ্যে এনক্রিপ্টেড কমিউনিকেশন সংযোজন করা হয়, যা অবৈধ প্রবেশ ঠেকাতে সহায়তা করে।
প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের কিছু ঘটে যাওয়া উদাহরণ:
ভারতে পেসমেকার হ্যাকিং এবং মেডিকেল ডিভাইসের সাইবার নিরাপত্তা: গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ ভারতে পেসমেকার এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা ডিভাইসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু উদ্যোগ এবং গবেষণার উদাহরণ রয়েছে। পেসমেকার হ্যাকিংয়ের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণে এ ধরনের উদাহরণগুলো ভারতের জন্য শিক্ষণীয়।
উদাহরণ ১: অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সেস (AIIMS), দিল্লি – নিরাপত্তা তদন্ত (২০১৮)
২০১৮ সালে, দিল্লির AIIMS হাসপাতালে রোগীদের ইমপ্লান্টেড ডিভাইসগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত চালানো হয়। তদন্তটি ভারতে মেডিকেল ডিভাইসের সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে একটি দৃষ্টান্ত তৈরি করেছিল। চিকিৎসক এবং নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা রিপোর্ট করেন যে পেসমেকার এবং অন্যান্য ডিভাইসে দূর থেকে প্রবেশ করে সেটিংস পরিবর্তন করার ঝুঁকি ছিল, তবে সেগুলোতে কোনো হ্যাকিং ঘটনা ঘটেনি। এই অনুসন্ধানটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করতে উদ্বুদ্ধ করেছিল, বিশেষ করে যেসব ডিভাইসে ওয়্যারলেস সংযোগের মাধ্যমে মনিটরিং সিস্টেম যুক্ত ছিল।
প্রতিক্রিয়া: AIIMS কর্তৃপক্ষ তৎক্ষণাৎ কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এতে সুরক্ষিত ফার্মওয়্যার আপডেট এবং পেসমেকার মনিটরিংয়ে উন্নত এনক্রিপশন ব্যবস্থা সংযোজন করা হয়।
উদাহরণ ২: মুম্বাইয়ের একটি প্রাইভেট হাসপাতাল – সাইবার আক্রমণ ও সচেতনতা বৃদ্ধি (২০১৯)
২০১৯ সালে, মুম্বাইয়ের একটি প্রাইভেট হাসপাতালের মেডিকেল ডিভাইস সিস্টেমে সাইবার আক্রমণ ঘটেছিল, যা মেডিকেল ডিভাইসের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়ে তোলে। যদিও এই আক্রমণে পেসমেকার বা হৃদযন্ত্রের অন্যান্য ইমপ্লান্টেড ডিভাইসে সরাসরি প্রভাব পড়েনি, তবে এটি হাসপাতালের আইটি নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। এই ঘটনাটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ইন্টারনেটের সঙ্গে সংযুক্ত ডিভাইসগুলোতে নিরাপত্তা উন্নয়নের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য করে।
প্রতিক্রিয়া: এই ঘটনার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের ইন্টারনেট-সংযুক্ত ডিভাইসগুলোর ফায়ারওয়াল এবং এনক্রিপশন প্রোটোকল উন্নত করে, যাতে রোগীদের গুরুত্বপূর্ণ ডেটা এবং মেডিকেল ডিভাইসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।
উদাহরণ ৩: বেঙ্গালুরুর একটি মেডিকেল রিসার্চ সেন্টারে নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ (২০২১)
২০২১ সালে বেঙ্গালুরুর একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, যা হার্ট ডিভাইসের প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করে, তারা একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালা আয়োজন করে যেখানে পেসমেকার এবং অন্যান্য ইমপ্লান্টেড ডিভাইসের সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে শিক্ষাদান করা হয়। এই কর্মশালায় সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন এবং তাঁরা মেডিকেল ডিভাইস নির্মাতাদের জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা পদক্ষেপের ওপর জোর দেন।
উদ্দেশ্য ও প্রভাব: এই প্রশিক্ষণ কর্মশালার মাধ্যমে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন নিরাপত্তা পদ্ধতি ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা প্রদর্শন করে এবং ভারতের অন্যান্য হাসপাতাল ও প্রতিষ্ঠানগুলোতে এর প্রয়োগের গুরুত্ব তুলে ধরে।
উদাহরণ ৪: ভারত সরকারের নির্দেশনা ও সাইবার নিরাপত্তা পরিকল্পনা (২০২২)
২০২২ সালে, ভারত সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় মেডিকেল ডিভাইসগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একটি নির্দেশিকা জারি করে। বিশেষ করে পেসমেকার এবং অন্যান্য কার্ডিয়াক ডিভাইসের জন্য এনক্রিপ্টেড যোগাযোগ প্রোটোকল চালু করা হয় এবং নির্দেশনায় নিয়মিত নিরাপত্তা আপডেট নিশ্চিত করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এই নির্দেশনাটি আন্তর্জাতিক নির্দেশিকার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তৈরি করা হয়, যা ভারতে মেডিকেল ডিভাইস সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সহায়তা করছে।
পরিকল্পনার প্রভাব: এই নির্দেশনা অনুযায়ী হাসপাতালগুলোতে নিরাপত্তা নীতি ও প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা প্রয়োগে উৎসাহিত করা হচ্ছে, যাতে রোগীদের ডেটা সুরক্ষিত থাকে এবং ডিভাইসগুলো সাইবার আক্রমণ থেকে সুরক্ষিত হয়।
বাংলাদেশে পেসমেকার হ্যাকিং প্রতিরোধে করণীয় এবং সচেতনতার প্রয়োজনীয়তা
পেসমেকার এবং অন্যান্য হার্টের ডিভাইস এখন বাংলাদেশেও ব্যবহৃত হচ্ছে। এ ধরনের ডিভাইস রোগীদের জীবন রক্ষায় এবং তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে বিশেষ সহায়ক। তবে, পেসমেকারসহ ইমপ্লান্টেড মেডিকেল ডিভাইসগুলোর সাইবার নিরাপত্তা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে, যা এখনও অনেকাংশে অজানা। আধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তির সঙ্গে সাইবার নিরাপত্তার এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ এবং সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ বাংলাদেশে প্রয়োজন।
বাংলাদেশে বর্তমান পরিস্থিতি এবং চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশে পেসমেকারের মতো ইমপ্লান্টেড ডিভাইসের ব্যবহার দিনে দিনে বাড়ছে। তবে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব ডিভাইসের সাইবার নিরাপত্তা সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্য এবং সচেতনতার অভাব রয়েছে। হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিরাপত্তা এবং রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থা এখনও সীমিত, বিশেষ করে যেসব ক্ষেত্রে ডিভাইসগুলো ওয়্যারলেস সংযোগের মাধ্যমে মনিটর করা হয়।
আরও উল্লেখযোগ্য যে, অনেক পুরনো পেসমেকার ডিভাইসে আধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই এবং এগুলোর নিয়মিত আপডেটের সুযোগও সীমিত। তাই এই ডিভাইসগুলোকে সাইবার আক্রমণ থেকে সুরক্ষিত রাখতে অধিকতর পদক্ষেপের প্রয়োজন।
বাংলাদেশে পেসমেকার হ্যাকিং প্রতিরোধে করণীয়
বাংলাদেশে পেসমেকার ও অন্যান্য মেডিকেল ডিভাইসের সাইবার নিরাপত্তা উন্নত করার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি, যা রোগীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।
১. নিয়মিত সফটওয়্যার আপডেট ও নিরাপত্তা প্যাচ সংযোজন
পেসমেকার এবং অন্যান্য সংযুক্ত ডিভাইসের জন্য নিয়মিত সফটওয়্যার আপডেট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানকে এসব ডিভাইসে সর্বশেষ নিরাপত্তা প্যাচ এবং সফটওয়্যার আপডেট ইনস্টল করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া উচিত। নির্মাতারা ডিভাইসের নিরাপত্তা ঝুঁকি কমাতে নতুন আপডেট এবং এনক্রিপশন প্রোটোকল প্রদান করে থাকে, যা নিয়মিত প্রয়োগ করলে হ্যাকিংয়ের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যাবে।
২. সাইবার নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ এবং সচেতনতা বৃদ্ধি
বাংলাদেশের চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী এবং প্রযুক্তি সংশ্লিষ্টদের সাইবার নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন। হাসপাতালগুলোতে সাইবার নিরাপত্তা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মীদের সচেতন করা উচিত যাতে তারা রোগীর পেসমেকার এবং অন্যান্য মেডিকেল ডিভাইসের নিরাপত্তা বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।
ডিজিটাল স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নীতিমালা: হাসপাতালে ডিজিটাল নিরাপত্তা নিয়ে একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি করা উচিত। এর মাধ্যমে সাইবার হুমকির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা যাবে।
৩. ডিভাইসের এনক্রিপশন এবং অথেনটিকেশন ব্যবস্থা উন্নয়ন
পেসমেকার এবং অন্যান্য মেডিকেল ডিভাইসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এগুলোতে শক্তিশালী এনক্রিপশন এবং অথেনটিকেশন ব্যবস্থা যুক্ত করা গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে ব্যবহৃত সব ইমপ্লান্টেড ডিভাইসে শক্তিশালী এনক্রিপশন থাকতে হবে এবং ডিভাইসগুলোতে অ্যাক্সেস করতে হলে অনুমোদিত ব্যবহারকারীদের পরিচয় নিশ্চিত করতে হবে।
ওয়্যারলেস ডিভাইসে নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য: পেসমেকারের মতো ডিভাইসগুলো ওয়্যারলেস প্রযুক্তি ব্যবহার করে, তাই এগুলোর সুরক্ষার জন্য উন্নত এনক্রিপশন প্রয়োজন, যা অবৈধ প্রবেশ রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
৪. সরকারি উদ্যোগ ও নীতিমালা প্রণয়ন
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (ICT) বিভাগ যৌথভাবে মেডিকেল ডিভাইসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি করতে পারে। এর মধ্যে ইমপ্লান্টেড ডিভাইসগুলোর সাইবার নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় গাইডলাইন এবং নিয়মকানুন থাকা উচিত, যাতে চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলো নির্দিষ্ট মাপকাঠি অনুসরণ করে সুরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করতে পারে।
ইমপ্লান্টেড ডিভাইস ডেটা প্রাইভেসি আইন: এ ধরনের ডিভাইসের মাধ্যমে সংগৃহীত ডেটার সুরক্ষা এবং প্রাইভেসি নিশ্চিত করার জন্য একটি নির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন করতে হবে, যা এই ধরনের ডিভাইসের নিরাপত্তা উন্নয়নে সহায়ক হবে।
৫. প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন ও গবেষণার ওপর গুরুত্ব দেওয়া
বাংলাদেশে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এবং গবেষণার ওপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত, যাতে দেশের অভ্যন্তরেই উন্নতমানের সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা তৈরি করা সম্ভব হয়। দেশে মেডিকেল ডিভাইসের সুরক্ষার ওপর নির্ভরশীল বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ও গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করা প্রয়োজন।
ইনোভেশন হাব এবং গবেষণা কেন্দ্র: বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মেডিকেল ডিভাইসের সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে গবেষণার জন্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে ইনোভেশন হাব তৈরি করা প্রয়োজন। এই কেন্দ্রগুলোতে স্থানীয় প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনী সমাধান তৈরি হবে যা সাইবার আক্রমণের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবে।
৬. রোগীদের জন্য সচেতনতামূলক কর্মসূচি
পেসমেকার বা ইমপ্লান্টেড ডিভাইস ব্যবহারের ক্ষেত্রে রোগীদেরও কিছু নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতন করা প্রয়োজন। রোগীদের জানানো উচিত কিভাবে তারা নিজে থেকেই তাদের ডিভাইসের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারেন এবং দূর থেকে মনিটরিংয়ের সময় কোনো অস্বাভাবিকতা দেখলে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।
পেসমেকার হ্যাকিংয়ের প্রভাব এবং তার পরিণাম আসলে কতটা ভয়াবহ
পেসমেকার হ্যাকিংয়ের কোনো মরণঘাতী ঘটনা এখনো ঘটেনি, তবে এই ঝুঁকির গুরুত্ব অপরিসীম। এমন একটি ডিভাইস যা সরাসরি হৃদপিণ্ডকে নিয়ন্ত্রণ করে, সেটি দূর থেকে নিয়ন্ত্রণযোগ্য হওয়ায় এটি অত্যন্ত ভীতিকর। ফলে এই ঝুঁকি নির্মূল করতে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী ও ডিভাইস নির্মাতারা ব্যাপক সচেতনতা অবলম্বন করছেন।
পেসমেকারের নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রধান চ্যালেঞ্জ
১. পুরনো প্রযুক্তি: অনেক পুরনো ডিভাইসে আধুনিক এনক্রিপশন নেই, যা হ্যাকিংয়ের ঝুঁকি বাড়ায়। এদের আপডেট করতে বেশ খরচ ও জটিলতা রয়েছে।
২. দূর থেকে মনিটরিং সুবিধা ও ঝুঁকি: রোগীর সেবার জন্য দূর থেকে মনিটরিং উপকারী, তবে এটি সম্ভাব্য আক্রমণের ক্ষেত্র বাড়িয়ে দেয়।
৩. সীমিত রিসোর্স: মেডিকেল ডিভাইসগুলোতে শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালানোর মতো প্রসেসিং ক্ষমতা সবসময় থাকে না।
৪. বিভিন্ন অংশীদারদের মধ্যে সমন্বয়: নিরাপত্তা উন্নত করতে নির্মাতা, চিকিৎসা সেবা প্রদানকারী, সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ও রেগুলেটরি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন।
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনা
এই ঝুঁকি কমাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, যেমন:
এনক্রিপশন : ডিভাইস ও মনিটরিং ডিভাইসের মধ্যে যোগাযোগে এনক্রিপশন।
অথেনটিকেশন প্রোটোকল: অবৈধ প্রবেশ ঠেকানোর জন্য অথেনটিকেশন বাধ্যতামূলক করা।
সফটওয়্যার আপডেট: নিয়মিত আপডেট প্রদান করা।
পরীক্ষা ও মনিটরিং: ডিভাইসে নতুন কোনো নিরাপত্তা ত্রুটি আছে কিনা তা পরীক্ষা করা।
FDA নির্মাতাদের পেসমেকার তৈরির প্রতিটি ধাপে সাইবার নিরাপত্তার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশনা দিয়েছে। এছাড়া, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে কঠোর নিরাপত্তা মান নির্ধারণের আইন পাশ হয়েছে।
পেসমেকার হ্যাকিং আমাদের স্বাস্থ্য ও সাইবার নিরাপত্তার এক সঙ্কটজনক সংযোগের উদাহরণ। যদিও এই ধরনের ঘটনা এখনও বিরল, কিন্তু সম্ভাব্য ঝুঁকি অত্যন্ত গুরুতর। প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে এই ঝুঁকিগুলো কমানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সজাগ ও সক্রিয় থেকে, মেডিকেল ও সাইবার নিরাপত্তা সংশ্লিষ্টরা একসাথে কাজ করে রোগীদের এই ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে পারেন, এবং পেসমেকার ও অন্যান্য ডিভাইসগুলো আরও উন্নত ও নিরাপদ করতে সহায়তা করতে পারেন।
প্রযুক্তি আশীর্বাদ, তবে সতর্কতার প্রয়োজন
নেটফ্লিক্সের একটি মুভি দেখে আমি এই লেখাটি লিখতে বসলাম, যা আমাকে উপলব্ধি করায় যে প্রযুক্তি কিভাবে আমাদের জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে। প্রতিনিয়ত আমরা নানা ডিভাইসের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি, যা আমাদের জীবনকে সহজতর করে তুলছে। তবে, এর বিপরীত দিকটিও বাস্তব। অনেকেই এই প্রযুক্তির অপব্যবহার করে, যা আমাদের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তার জন্য হুমকি তৈরি করছে। এই লেখার উদ্দেশ্য হলো পাঠকদের মধ্যে প্রযুক্তি ব্যবহারে সচেতনতা বৃদ্ধি করা, বিশেষ করে এমন ডিভাইসগুলোর ক্ষেত্রে, যা আমাদের জীবন রক্ষায় সরাসরি ভূমিকা রাখে।
# লেখক: কলামিস্ট
>>>>>>>>>>>>>>
How to prevent dengue
Dengue is a mosquito-borne viral fever. This fever is different from other viral or bacterial fevers. However, this fever is not contagious in any way. This viral fever can occur alone or in combination with other viruses (chikungunya, yellow fever, Burma forest, flu, respiratory syncytial) and bacteria (pneumococcus).
Dengue fever is divided into two categories depending on the severity of symptoms and fever.
1. Common dengue fever
2. Dengue fever with bleeding.
In the case of common dengue fever, the following symptoms are mainly seen-
1. Sudden high fever lasting 2 to 7 days.
2. Severe headache.
3. Pain behind the eyes.
4. Along with the fever, red rash appears all over the body.
5. Severe pain in whole body as well as back pain.
6. Nausea or vomiting.
7. A rash or red bumps on the skin.
In case of dengue fever with bleeding:
1. Bleeding from nose, mouth or vomiting with high fever within 2 to 48 hours.
2. Fluid accumulation in chest or abdomen along with fever.
If any of these symptoms appear, seek medical attention immediately.
On the other hand
Wait at home for the first 3 days of fever. On the other hand, sponge the whole body with water every now and then. This will reduce the level of fever. Drink enough water and rest. After that, if the fever does not decrease or if it continues to increase after some time, consult a doctor immediately.
Things to do to prevent Dengue:
1. Try to keep the surroundings of the house as clean as possible.
2. If there are flower tubs or broken plastic bottles, can shells, tires or polythene inside the house, clean them quickly and drain the accumulated water from the flower tubs.
3. Spray or fog at least 3 times a week to kill mosquitoes.
4. You can keep mosquito repellent cream with you while going out.
5. After evening, younger and older members of the household should use mosquito nets.
6. Clean up any accumulated rain water, as this is the time when Aedes mosquitoes lay their eggs.
7. On the other hand, you can use mats along with mosquito nets to avoid mosquito infestation.
8. Since Aedes mosquitoes bite during the day, it is important to avoid sleeping with mosquito nets while sleeping during the day. Source: https://dmpnews.org