টানা চার আশেজ সিরিজ জয়ের স্বপ্ন নিয়ে যাওয়া অ্যালিস্টার কুকের দল একটা বড় ধাক্কা খেল সিরিজের প্রথম টেস্টেই। অস্ট্রেলিয়ার অজেয় দূর্গ বলে পরিচিত ব্রিসবেন ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দুই ইনিংসেই গড়ে প্রায় ৯০ মাইল গতির জনসনের আগুন ঝরানো বোলিং তোপে উড়ে গিয়েছে ইংল্যাণ্ড। আশেজে টানা নয় ম্যাচ পর ৩৮১ রানে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে জয়ের মুখ দেখলো স্বাগতিকরা। আর জয়ের নায়ক হলেন মিচেল জনসন!
বাজে ফর্মের কারণে ভারতের বিপক্ষেই এ বছর মার্চে খেলার পর টেস্ট দল থেকে বাদ পড়েছিলেন জনসন। খেলতে পারেননি জুলাই-আগস্টে হয়ে যাওয়া অ্যাশেজ সিরিজেও। এতোদিন ধরে দলের বাইরে থেকে এবার সুযোগ পেয়েই নিজের সেরার পরিপূর্ণ ব্যবহার যেনো করলেন জনসন। প্রথম ইনিংসে উপযুক্ত সঙ্গ দিয়েছিলেন মাত্র ৬ রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস করা ব্র্যাড হ্যাডিনকেও। হাডিন ৯৪ রানে আউট হয়ে যান। তবে জনসনের ধৈর্য্যশীল ১৩৪ বলে ৬৪ রান অসিদের ২৯৫ রান এনে দেয়। ৮১ রানে ৬ উইকেট নিয়ে প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ডের সেরা বোলার ব্রড।
ব্যাট হাতে দলকে এগিয়ে দেয়ার পর বল হাতেও জ্বলে ওঠেন জনসন। শততম টেস্ট খেলতে নামা কেভিন পিটারসেনকে (১৮) ফিরিয়ে ধসের সূচনা করেন হ্যারিস। এরপর জনসন কারবেরিকে আউট করার পরের ওভারে লিয়ন ইয়ান বেল ও ম্যাট প্রায়রকে পর-পর দুই বলে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন। ব্রড এসে সেই সম্ভাবনায় জল ঢেলে দিলেও জনসনের করা তার পরের ওভারেই জো রুট আউট। দুই ওভার পর গ্রায়েম সোয়ানও এই বাঁহাতি পেসারের শিকার। তাঁর দূর্দান্ত বোলিং স্পেলে ২ উইকেটে ৮২ থেকে ইংল্যান্ড তখন ৮ উইকেটে ৯১ রানে পরিণত। কারবেরি, রুট ও সোয়ানকে পর-পর তিন ওভারে ফিরিয়ে তিনিই ইংল্যান্ডের ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা শেষ করে দিয়েছিলেন, নিয়েছেন ৬১ রানে ৪ উইকেট। ইংল্যাণ্ড শেষ পর্যন্ত ১৩৬ রানে অল আউট হয়ে যায়।
দ্বিতীয় ইনিংসে বড় লিড নেয়ার পর ডেভিড ওয়ার্নার ও মাইকেল ক্লার্কের শতকের পরপরই জয়ের সুবাতাস পাচ্ছিলো অস্ট্রেলিয়া। দুজনই যথাক্রমে ১২৪ এবং ১১৩ রান করেন। প্রথম ইনিংসে ৯৪ রান করা ব্র্যাড হ্যাডিন দ্বিতীয় ইনিংসেও সফল। ৫৪ বলে ৫৩ রানের আক্রমণাত্মক ইনিংস খেলেছেন তিনি। ৩৯ রানে অপরাজিত ছিলেন মিচেল জনসন। দ্বিতীয় ইনিংসে ৭ উইকেটে ৪০১ রানে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে অস্ট্রেলিয়া। ৫৬১ রানের লক্ষ্য নির্ধারণ করে ইংল্যাণ্ডের সামনে।
জবাবে মাত্র ২৪ রানের মাঝে মাইকেল কারবেরি ও জোনাথন ট্রটের দ্রুত বিদায়ে ভীষণ বিপদে পড়ে ইংল্যাণ্ড। জয়ের জন্য শেষ দু’দিনে ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল ৫৩৭ রান। শততম টেস্ট খেলা কেভিন পিটারসেনের (২৬) সঙ্গে ৬২ ও ইয়ান বেলের (৩২) সঙ্গে ৫৮ রানের দুটি জুটি গড়ে প্রতিরোধের চেষ্টা করেছিলেন অ্যালিস্টার কুক। নাথান লিয়নের বল কাট করতে গিয়ে ব্র্যাড হ্যাডিনের হাতে কুক (৬৫) ক্যাচ দিয়ে ফেরার পর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে ১৭৯ রানে অলআউট হয়ে যায় ইংল্যান্ড। দলীয় ১৩০ রানে চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে বেলের বিদায়ের পর শেষ ৬ উইকেটে ৫০ রানও করতে পারেনি অতিথিরা।
দ্বিতীয় ইনিংসে ট্রটের উইকেট নিয়ে ধ্বংসলীলা শুরু করেন জনসন। ম্যাচ শেষে তাঁর নামের পাশে যোগ হয় ৪২ রানে ৫ উইকেট, নিয়েছেন কেভিন পিটারসেনের উইকেটও। তাঁর ৯০ মেইল গতির বোলিংয়ে লাইন লেন্থ ছিল অসম্ভব নিয়ন্ত্রিত, সেই সাথে ঠিকরে বেরোচ্ছিলো আত্মবিশ্বাসের শরীরী ভাষা। পাশাপাশি ৬৪ ও অপরাজিত ৩৯ রানের চমৎকার অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় তিনিই।
অ্যাডিলেডে দ্বিতীয় টেস্ট শুরু হবে আগামী ৫ ডিসেম্বর।
Summary Score:
অস্ট্রেলিয়াঃ ২৯৫ (হ্যাডিন ৯৪, জনসন ৬৪, ওয়ার্নার ৪৯; ব্রড ৬/৮১) ও ৪০১/৭ ডিক্লে. (ওয়ার্নার ১২৪, ক্লার্ক ১১৩, হ্যাডিন ৫৩; ট্রেমলেট ৩/৬৯)
ইংল্যান্ডঃ ১৩৬ (কারবেরি ৪০, ব্রড ৩২; জনসন ৪/৬১, হ্যারিস ৩/২৮) ও ১৭৯ (কুক ৬৫, কারবেরি ০, ট্রট ৯, পিটারসেন ২৬, বেল ৩২, জো রুট ২৬*, প্রায়র ৪, ব্রড ৪, সোয়ান ০, ট্রেমলেট ৭, অ্যান্ডারসন ২; জনসন ৫/৪২, লিয়ন ২/৪৬, হ্যারিস ২/৪৯, সিডল ১/২৫)
ম্যাচসেরাঃ মিচেল জনসন।