Dhaka Times Desk টিসিবি আমাদের দেশে এক সময় অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল। কারণ কিছু নিত্যপণ্য টিসিবির মাধ্যমে সরকার বিক্রি করতো অত্যন্ত কম দামে। আর তাই টিসিবিকে সাধারণ জনগণ ভালোভাবেই চিনতো। কিন্তু এখন আর সে দিন নেই। টিসিবির বিরুদ্ধে এখন অভিযোগের শেষ নেই। এবার বেরিয়েছে অর্থ আত্মসাতের ঘটনা।
এক খবরে জানা যায়, চিনি ও মসুর ডাল বিক্রির ছয় বছর পর অভিযোগ উঠেছে ৯৫ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। সরকারি নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরে ঢাকা মহানগরীর ৯০টি ওয়ার্ড কমিশনারের কার্যালয়ের মাধ্যমে টিসিবির চিনি ও মসুর ডাল ন্যায্যমূল্যে জনসাধারণের কাছে বিক্রির জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এজন্য ৯০টি টিমের মাধ্যমে ৩ মাসব্যাপী পণ্য বিক্রি করা হয়। নিরীক্ষা প্রতিবেদনে দেখা যায়, ৯০টি ওয়ার্ড কমিশনারের মাধ্যমে মোট ১১ কোটি ৯১ লাখ ৩৩ হাজার ৩৫০ টাকার পণ্য বিক্রি করা হয়। তবে বিক্রি বাবদ টিসিবির সংশ্লিষ্ট খাতে জমা হয় ১১ কোটি ৭২ লাখ ৯ হাজার ৪০৯ টাকা। ঘাটতি দাঁড়ায় ১৯ লাখ ২৩ হাজার ৯৪১ টাকা। দায়িত্বরত ব্যক্তিবর্গের কাছ থেকে এই অর্থ সংগ্রহ করে নিরীক্ষা দফতরকে তা অবহিত করার জন্য তাগিদ দেয়া হয়। পরে গত বছরের ২৪ জানুয়ারি এ বিষয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং অধীনস্থ দফতরগুলোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে টিসিবির চিনি ও মসুর ডাল বিক্রি ঘাটতিজনিত কারণে অনাদায়ী টাকা তিন মাস অর্থাৎ ৯০ দিনের মধ্যে ৩ কিস্তিতে জমা দিতে হবে।
মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পর টিসিবির ২৭ জন এবং বীমা অধিদফতরের ১ জন মোট ২৮ জন তাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত আপত্তির সমুদয় ৫ লাখ ৭ হাজার ৪০৭ টাকা সংশ্লিষ্ট খাতে জমা দেয়। টিসিবি ছাড়া বাদবাকি দফতরের অবশিষ্ট ৯৫ জনের বিরুদ্ধে উত্থাপিত ১৪ লাখ ১৫ হাজার ৭৩৪ টাকা আদায়ে কোন অগ্রগতি হয়নি। পরে সেই নির্দেশনার আলোকে গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সমন্বয় সভায় তদন্ত কমিটি করা হয়। সেই কমিটি সরকারের ৭টি সংস্থার ২৯১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে শনাক্ত করে তাদের কর্মস্থলে ব্যাখ্যা চেয়ে নোটিশ দেয়া হয়। তবে মাত্র ৫৫ জন এ বিষয়ে লিখিত জবাব দেয়। ১২ দফা জবাবে বিক্রি কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রত্যেকেরই বিক্রি কার্যক্রম সংক্রান্ত পূর্ব অভিজ্ঞতার অভাব ছিল বলে উল্লেখ করেন। এছাড়া কার্যক্রমের প্রাক্কালে টিসিবি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আশ্বস্ত করা হয়েছিল, বস্তাপ্রতি নির্দিষ্ট পরিমাণ ঘাটতির দায় টিসিবি বহন করবে। পরবর্তী সময়ে ঘাটতির কোন দায় টিসিবি গ্রহণ না করে শতভাগ দায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর চাপানো হয়। উত্তরে কর্মচারীরা জানান, টিসিবিকে প্রায়ই ভর্তুকি বাবদ বিপুল অংকের টাকা পরিশোধ করতে হয়। এক্ষেত্রে প্রথমবারের মতো স্বল্প বেতনভুক কর্মচারীদের অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য আনীত অডিট আপত্তি থেকে অব্যাহতি প্রার্থনা করা হয়। উত্তরে সবাই নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেন। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, বিক্রি কার্যক্রমে জড়িত ব্যক্তিবর্গের বিক্রি সংক্রান্ত পূর্ব অভিজ্ঞতার অভাব ছিল। বিক্রি কার্যক্রমের মৌসুম ছিল বর্ষার। বর্ষা মৌসুমে খুচরা চিনির অনিবার্য ঘাটতি ঠেকানো কোনভাবেই সম্ভব ছিল না বলে দাবি করা হয়।
এছাড়া কর্মসূচির পুরো সময়জুড়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে কেওই সম্পৃক্ত ছিলেন না। প্রশাসনিক নির্দেশে বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন দফতর সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারী দলভুক্ত হয়েছেন, ফলে কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়নি। তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়, বিক্রি কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে ওই কাজে নিয়োজিত করা হয়েছিল। বিক্রয় কার্যক্রমের সঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, টিসিবি, ইপিবি, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স একাডেমী, সরবরাহ ও পরিদর্শন অধিদফতর, বীমা অধিদফতর, বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন, সাধারণ বীমা কর্পোরেশন, সিসিআইঅ্যান্ডই’র কর্মকর্তা-কর্মচারী ছিলেন।
একটি জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান যা সাধারণ জনগণের পাশে দাঁড়াতে পারে, এমন প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। যাতে করে সাধারণ মানুষ আবারও ন্যায্যমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে পারেন।