The Dhaka Times Desk আমরা সবাই জানি যে, বয়ষ্ক পুরুষদের হৃদরোগ বেশি হয় এবং শিশুদের হৃদরোগের সংখ্যা একেবারেই নগন্য। কিন্তু এবার সংবাদ পাওয়া গেছে, শিশু ও নারী হৃদরোগীর সংখ্যা আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
একটি হেল্থ রিপোর্টে জানা গেছে, দেশে শিশু ও নারী হূদরোগীর সংখ্যা আশংকাজনক হারে বাড়ছে। এক হাজার শিশুর মধ্যে ১০ থেকে ১৫ জনই হৃদরোগ নিয়ে জন্ম নিচ্ছে। মূলত ভেজাল খাদ্য ও পরিবেশগত কারণে হৃদরোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চলেছে বলে ধারণা করছেন কার্ডিয়াক বিশেষজ্ঞরা।
এরকম পরিস্থিতিতে আজ বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে পালিত হচ্ছে বিশ্ব হার্ট দিবস। দিবসটির এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘এক বিশ্ব, এক হার্ট’, দিবসটি উপলক্ষে কার্ডিয়াক সোসাইটি, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট, হার্ট ফাউন্ডেশন, ল্যাব এইড কার্ডিয়াক হাসপাতাল, ইউনাইটেড হাসপাতালসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলো নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
কার্ডিয়াক চিকিৎসকরা মনে করেন, এক সময় সংক্রামক ব্যাধিতে মৃত্যুর হার ছিল সর্বাধিক। এসব রোগ নিয়ন্ত্রণে চলে আসায় এখন অসংক্রামক ব্যাধিতে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। আর অসংক্রামক ব্যাধির মধ্যে হৃদরোগে মৃত্যুর হার সর্বাধিক। এছাড়া সড়ক দুর্ঘটনার পরই হৃদরোগে মৃত্যুর অবস্থান। কিন্তু দেশে চাহিদা অনুযায়ী সরকারিভাবে হৃদরোগের চিকিৎসা সেবা সীমিত। অবশ্য বেসরকারিভাবে উন্নতমানের হৃদরোগের চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। তবে তা নিম্ন ও মধ্যবিত্তের সামর্থ্যের বাইরে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, সরকারিভাবে শেরেবাংলা নগরস্থ জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে পূর্ণাঙ্গ আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে উঠলেও তা চাহিদার তুলনায় সীমিত। ৪১৪ বেডের এ হাসপাতালে প্রতিদিন রোগী থাকে ৬৫০ থেকে ৭শ’, শিশু ও নারী হৃদরোগীদের জন্য বেড মাত্র ৭০টি। এর মধ্যে শিশুদের জন্য মাত্র ৩৬টি বেড রয়েছে। বেডের অভাবে অভিভাবকরা ওয়ার্ডে শিশুদের কোলে নিয়ে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেন। রোগী থাকে প্রতিদিন দেড় শতাধিক। মেঝেতে শুইয়ে সংকটাপন্ন ও জটিল হৃদরোগীকে চিকিৎসা দেয়া হয় প্রতিদিন।
তারা অভিযোগ করেন, হাসপাতালে জায়গা থাকলেও সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেই। সরকারের স্বাস্থ্য খাতের কোটি কোটি টাকা অপ্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ক্রয়সহ নানাভাবে আত্মসাৎ ও লুটপাট হয়ে যাচ্ছে। কর্মকর্তারা স্টাডি ট্যুরের নামে বিদেশে গিয়ে বাজার করে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছেন। এসব অনিয়ম বন্ধ করে সঠিক স্থানে টাকা ব্যয় করলে হৃদরোগের মত অত্যাবশ্যকীয় চিকিৎসায় অত্যাধুনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হতো। তারা হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের মত গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে আধুনিক চিকিৎসা সেবা সম্প্রসারণের দাবি জানিয়েছেন।
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবদুল্লাহ আল সাফী মজুমদার বলেন, প্রতিদিন এ ইনস্টিটিউটে রোগীর চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে শিশু ও মহিলা রোগীর প্রচণ্ড চাপ। মেঝেতে কিংবা এক বেডে ২ জন রেখে কোনভাবে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। ইনস্টিটিউট ভবনটি সম্প্রসারণ করা হলে রোগীদের বেডের কোন সমস্যা হবে না। এছাড়া চাহিদা অনুযায়ী জনবল ও যন্ত্রপাতি বৃদ্ধি করাও প্রয়োজন।
জানা গেছে, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ছাড়াও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, সিলেট, খুলনা, রংপুর ও দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে হৃদরোগে চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। নিয়মিত এনজিওগ্রাম ও ছোটখাট কার্ডিয়াক সার্জারি হচ্ছে। তবে চাহিদার তুলনায় তা খুবই অপ্রতুল।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. খন্দকার মো. সিফায়েত উল্লাহ বলেন, অসংক্রামক ব্যাধির মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চলছে। এজন্য শিগগিরই দেশের সকল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে হৃদরোগ চিকিৎসা ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে। সেখানে এনজিওগ্রামসহ সকল পরীক্ষার ব্যবস্থাও থাকবে বলে তিনি জানান।
হৃদরোগ থেকে বাঁচার উপায়: প্রতিরোধই উত্তম চিকিৎসা
কার্ডিয়াক সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. খাজা নাসিরউদ্দিনসহ কয়েকজন সিনিয়র কার্ডিওলজিস্ট জানান, বাতজ্বরজনিত কারণে ভালব নষ্ট হয়ে নারীরা হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়া ৪০ বছরের পর থেকে রক্তনালী চিকন ও বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন কারণে হূদরোগীর সংখ্যা আশংকাজনক হারে বাড়ছে। ভেজাল ও বিষাক্ত খাদ্য সামগ্রীর কারণে অল্প বয়সে হৃদরোগীর সংখ্যাও কম নয়। তারা বলেন, চিকিৎসার চেয়ে এ রোগ প্রতিরোধ করাটাই উত্তম। নিয়মিত ব্যায়াম, ফাস্টফুড ও চর্বিযুক্ত খাদ্য সামগ্রী পরিহার করলে সহজেই এ রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। বিশেষ করে যাদের বয়স চল্লিশের উপরে তাদেরকে চর্বিযুক্ত খাবার অবশ্যই বর্জন করতে হবে। নিয়মিত ব্যয়াম করতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে। কোন সমস্যা দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হতে হবে। সকলের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এই হৃদরোগকে প্রতিরোধ করতে হবে।