Categories: international news

The story of a woman who spent 43 years as a man!

The Dhaka Times Desk এমন কথা খুব কমই শোনা যায় যে, মহিলা হয়েও পুরুষ সেজে থাকেন। কিন্তু এবার ঠিক এমনই এক কথা শোনা গেলো। এক মহিলা পুরুষ সেজে কাটিয়ে দিলেন ৪৩ বছর!

একদিন দুদিন নয় ৪৩টি বছর পার করলেন এক মহিলা। তাও আবার পুরুষ বেশে। কথাটি শুনে অনেকেরেই হয়তো বিশ্বাস হবে না। কিন্তু ঘটনাটি আসলেও সত্য। দীর্ঘমেয়াদী প্রতিবাদের অংশ হিসেবে মিশরের এক বিধবা নারী ৪৩ বছর কাটিয়ে দিয়েছেন পুরুষের বেশে। ওই নারীর নাম সিসা আবু দায়ুহ।

ওই মহিলা বলেছেন, নিজের একমাত্র মেয়েকে মানুষ করার জন্য এই ঝুঁকিপূর্ণ পথ বেছে নিয়েছিলেন। সম্প্রতি সাহসী এই নারীর পরিচয় প্রকাশ পেয়ে গেছে। তবে এখনও পুরুষের পোশাকেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন তিনি। তাই আর ফেলে আসা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চান না ৬৫ বছরের এই নারী সিসা আবু দায়ুহ। এখন তার মেয়ে বড় হয়ে গেছে। আর তাই নেই কোনো পিছুটান।

২২ বছরের তরুণী অবস্থায় ৪৩ বছর আগে যখন বিধবা হন আবু দায়ুহ তখন স্বামীর মৃত্যুতে চোখে অন্ধকার দেখছিলেন সিসা। তখন তিনি ৬ মাসের গর্ভবতী। সিসা আবু দায়ুহ সিদ্ধান্ত নিলেন, কাজ করে অনাগত সন্তানের ভরণ পোষণের দায়িত্ব পালন করবেন। গোড়া পরিবারের মেয়ে এবং তারওপর স্বামী নেই। মিশরের মত রক্ষণশীল সমাজে তাকে কাজ দেবে কে? তখন তিনি নিজে ও সন্তানকে বাঁচানোর জন্য পুরুষের ছদ্মবেশ নেওয়ার পরিকল্পনা করেন। যদিও তার বাবা-মা ও বড় ভাই তাকে ফের বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। সে দিনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সিসা বলেছেন, ‘ভাইয়েরা চাইতেন আমি আবার বিয়ে করি। তারা আমার জন্য নতুন নতুন পাত্রও আনতেন।’ কিন্তু নিজের সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন লুক্সোর শহরের বাসিন্দা আবু দায়ুহ। একদিন তিনি মাথার চুল কেটে ফেললেন। গায়ে চাপালেন পুরুষের পোশাক। ছুটলেন পুরুষ বেশে কাজের সন্ধানে।

বহু চেষ্টার পর সিসার কাজ মিললো এক ইট ভাটায়। পুরুষের সঙ্গে পুরুষ সেজে কাধে কাধ মিলিয়ে কাজ করতে শুরু করলেন সিসা। কোনোরকম যৌন হয়রানির হুমকি ছাড়াই স্বাধীনভাবে কাজ করতে লাগলেন তিনি। নতুন এই পরিচয়ে নিজেকে যেনো নতুন করে আবিষ্কার করলেন পুরুষবেশি সিসা। তাইতো বাকি জীবন পুরুষ হয়েই কাটাতে চান জীবন যুদ্ধে আসা এই নারী।

কিন্তু কাজটা তার জন্য খুব একটা সহজ ছিল না। তার এই সিদ্ধান্তে আঘাত পেয়েছিলেন তার ভাইয়েরা। তখন যুবতী আবু দায়ুসের গায়ে শক্তি ছিল দানবের মতোই। একাই ১০ জন পুরুষের সমান কাজও করতে পারতেন। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার শক্তিও কমতে থাকে। পরে ভার কাজ ছেড়ে জুতা পালিশের কাজ শুরু করলেন তিনি। এসব কিছুই করেছেন নিজের একমাত্র মেয়েটির জন্য।

সিসা বলেছেন, ‘একজন নারীর পক্ষে তার নারীত্বকে অস্বীকার করাটা যে কতটা কঠিন তা আমি বাস্তবে জানি। কিন্তু মেয়ের জন্য আমি যে কোনো কাজ করতে প্রস্তুত ছিলাম। আর অর্থ উপার্জনের এটাই ছিল একমাত্র পথ। নইলে এই সমাজে আমার মতো একটা মেয়েকে কে কাজ দিতো বলুন? আমি তো লেখাপড়া জানতাম না। আমার পরিবার তো আমাকে স্কুলে পাঠায়নি। কায়িক পরিশ্রম ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না আমার। নইলে একটা মেয়েকে কি কেও ইটভাটায় কাজ দেয়, বলুন?’

সিসা জানালেন, প্রথমদিকে তিনি ভেবেছিলেন, মেয়েকে মানুষ করার পর যখন তার বিয়ে দেবেন, তখন স্বরূপে ফিরে আসবেন। কিন্তু আবু দায়ুহ‘র ভাগ্যটা বড়ই খারাপ। বিয়ের পরপরই অসুখে পড়লেন মেয়ে জামাই। অসুস্থ হওয়ার পর তিনি আর কাজ খুঁজে পাচ্ছিলেন না। চায়ের দোকানে পুরুষের বেশে বসে পুরুষদের সঙ্গে আড্ডা মারা, চা খাওয়া আর স্ফূর্তি আড্ডা করা। এসবেই ব্যস্ত ছিলেন সিসা। কিন্তু মেয়েজামাই অসুস্থ হওয়ার পর আবার সংসারের হাল ধরতে বাধ্য হলেন দায়ুহ।

কিন্তু তিনি নিজে কখনও লিঙ্গ গোপন করেননি। কেও জিজ্ঞেস করলে সত্যিটাই বলতেন। সে কারণে লুক্সোরের আসেপাশের অনেক মানুষ তার সত্যিকারের পরিচয়টা জানতেন। অনেকে আবার আসল নামেই ডাকতেন তাকে। আসলে অপরিচিত লোকজনের অতিরিক্ত কৌতুহল লুকানোর জন্যই তিনি এই লিঙ্গ গোপনের কৌশল নিয়েছিলেন।

সন্তানকে মানুষ করার জন্য যিনি এতোটা ত্যাগ করেছেন। যিনি এতো কষ্ট করে সন্তান লালন পালন করে বিয়ে দিয়েছেন তারপরও কেনো তিনি সমাজের স্বীকৃতি পাবেন না। তিনি পেয়েছেন সমাজের স্বীকৃতি। লুক্সোরের স্থানীয় সরকার তাকে শহরে ‘নিবেদিত প্রাণ মা’ উপাধিতে ভূষিত করেছেন। এছাড়াও গত সপ্তাহে মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহর কাছ থেকেও পেয়েছেন পুরষ্কার।

মিশরের পুরুষবেশি এই নারী দেখিয়ে দিলেন ইচ্ছে থাকলে সব কিছুই করা সম্ভব। সমাজের কাছে তাইতো তিনি একজন বড় মাপের মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। এই পৃথিবীতে মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে লিঙ্গ কোনো ফ্যাক্টর নয়, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন মিশরের এই নারী সিসা আবু দায়ুহ।

This post was last modified on ডিসেম্বর ৩০, ২০২১ 1:58 pm

Staff reporter

Recent Posts

শীতে কোন পদ্ধতিতে মুখে মধু মাখবেন?

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শীতে মধু মাখলে বেশ উপকার পাওয়া যাবে। যে কারণে এই…

% days ago

ফিলিপাইন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বিপিসিসিআই-এর প্রতিনিধিদলের সাক্ষাৎ

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সম্প্রতি বাংলাদেশে নিযুক্ত ফিলিপাইনের…

% days ago

বিল গেটস ও স্যাম অল্টম্যান জানালেন: ২০২৫ সালের প্রযুক্তি–দুনিয়া আসলে কেমন হবে

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আসলে ২০২৫ সালের প্রযুক্তি–দুনিয়া কেমন যাবে, তা নিয়ে অনেক জল্পনা-কল্পনা…

% days ago

তিন বছর নিষিদ্ধ থাকা চলচ্চিত্র ‘মেকআপ’ মুক্তি পাচ্ছে ১০ জানুয়ারী

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ফিল্মের মানুষদের নেতিবাচকভাবে উপস্থাপনের অভিযোগে ২০২১ সালে সেন্সর বোর্ড থেকে…

% days ago

চাদে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে বোকো হারাম সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হামলায় নিহত ১৯

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মধ্য আফ্রিকার দেশ চাদের রাজধানী এনজামেনায় প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে বোকো হারাম…

% days ago

মানুষখেকো বাঘকে হাতির পিঠে বাঁধা হয়েছে! বিরক্ত জনগণ

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ভাইরাল এক ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, হাতির পিঠে দড়ি দিয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে…

% days ago