The Dhaka Times Desk এক সময়ের কলুদের সেই ঘানি শিল্প এখন বিলুপ্ত হতে চলেছে। এখন আর গ্রামে-গঞ্জে কলু সমপ্রদায়ের এই শিল্প চোখে পড়ে না। অথচ এক সময় ছিল যখন কলু সমপ্রদায় সরষে, তিল কিংবা বাদাম থেকে ঘানি চালিয়ে তেল বের করতেন। ওই তেলই এক সময় মানুষের রান্না-খাওয়া থেকে শুরু করে সব কাজ চলতো।
কিন্তু সেই কলু সমপ্রদায়দের এখন চলছে চরম দুর্দিন। কালের বিবর্তনের সাথে পাল্লা দিয়ে এ সমপ্রদায় আজ বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় বেশিরভাগ লোকজন পূর্বপুরুষ থেকে পেশা হিসেবে নিয়ে গরু, ঘোড়া এবং কোন কোন সময় গরু ঘোড়ার পরিবর্তে মানুষ দিয়ে নিজেরাই ঘানি টেনে সরিষা, বাদাম দিয়ে তেল ভাঙ্গিয়ে বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতো। এতে ভালভাবে তাদের সংসারের খরচ চালিয়ে দুর্দিনের জন্য সঞ্চয় করতে পারতো। কিন্তু এখন আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে সর্বত্র। সব খানেই এখন বিদ্যুৎচালিত মেশিনে এই কাজ করা হয়।
সমপ্রতি দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে একটি উপজেলার কথা। এখানকার দুটি পরিবার রয়েছে এখনও এই ঘানি থেকে তেল বের করা হয়। রায়পুরা উপজেলার মিরেরকান্দী গ্রামের দু’টি পরিবার এখনো এ পেশাটাকে আঁকড়িয়ে ধরে আছেন। তবে আগের তুলনায় এখন আর কাজের ব্যস্ততা নেই। মিরেরকান্দী এলাকার মোঃ তাজু মিয়া ও লালচান মিয়া দীর্ঘ ৪০ বছর যাবত এ পেশায় জড়িয়ে আছেন। কিন্তু এখন আর আগের মতো পোষায় না- বলে জানালেন তারা। তারা জানান, আগে এক কেজি সরিষার দাম ছিল ১৫/২০টাকা। এখন এক কেজি কিনতে হচ্ছে ৪০/৫০টাকায়। সবমিলিয়ে একসময় এটাকে পেশা হিসেবে নিয়েছিলাম কিন্তু এখন এটাকে পেশা হিসেবে নিলে সংসার চলে না। তাই পাশাপাশি অন্য কোন পেশায় বাধ্য হয়ে জড়িত হতে হচ্ছে। যেসব এলাকায় একসময় গরু, ঘোড়া এবং মানুষের সাহায্যে এ ঘানি টানা হতো সেসব অনেক এলাকায় চলে আসছে বিদ্যুৎ। ফলে বিলুপ্তি হয়ে যাচ্ছে সেই চির চেনা ঘানি টানার দৃশ্য।
তবে ঘানি টানার দৃশ্যটি ছিল বড়ই করুণ। একজন মানুষ গরুর জোয়াল টানার মতো ঘানি টানতো। যা দেখে বিবেকবান মানুষ বড়ই কষ্ট পেতেন। তবুও আমাদের গ্রাম-বাংলার এই ঘানি শিল্প আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্যকে ধারণ করে থাকে। এই শিল্পকে মানুষের দ্বারা না হোক মেশিনের দ্বারা হলেও গ্রাম-বাংলায় টিকিয়ে রাখা দরকার।