The Dhaka Times Desk পৃথিবীতে কত রকম শহর রয়েছে তা বলে শেষ করা যাবে না। এমন একটি শহর হচ্ছে জেরুজালেম- যেখানে কাঁদতে যায় মানুষ।
পৃথিবীর অর্ধেক লোক কাঁদতে আসে জেরুসালেম শহরে। তা যেমন তেমন কান্না নয়, না দেখলে বিশ্বাস হয় না। পাথর যদি সত্যি গলতে পারতো, তাহলে দু’হাজার বছরের হলদেটে চুনা পাথরের দেওয়ালও কবেই গলে জেলি হয়ে যেতো। নেহায়েত পাহাড়-কাটা পাথর বলেই গণ-কচুকাটার রক্তস্রোত হতে বুক-ফাটা চোখের জল, কোনও কিছুকেই পাত্তা না দিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছে।
ইংরেজিতে যাকে বলা হয় বিলাপ-দেওয়াল বা ওয়েলিং ওয়াল, হিব্রুতে স্রেফ ‘দেওয়াল’। এটি ছোঁয়ার জন্য লম্বা লাইনে ধৈর্য ধরে দাঁড়িয়ে থাকেন প্রতিদিন শত শত মানুষ।
তবে এরা বেশির ভাগই ইহুদি। অন্যরাও রয়েছে। আপাদমস্তক ঢোলা, কালো জামা হতে ব্র্যান্ড-দুরস্ত পাতলুন-স্কার্ফ, দুধে-আলতা হতে কফি-রং, ডাগর চোখ থেকে চ্যাপ্টা নাক, সব রয়েছে এই কান্নার লাইনে।
সে এক বিশাল কাহিনী। সামনের ১২-৮-৫- একজনের কান্না শেষ হলেই আসে পরের জনের পালা। সে-ও তখন দু’হাতে দেওয়াল আঁকড়ে, ৭-৮ টনের পাথরের চাঁইয়ে কপাল-গাল ঠেকিয়ে ডুকরে-ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে। এরপর জামার ভাঁজ, কী ব্যাগের পকেট হতে এক টুকরো কাগজ বের করে গুঁজে দেয় পাথরের খাঁজে। এক অসম্ভব অ্যাঙ্গেলে, উচ্চতায় দেখা যায় ইচ্ছে-লেখা কাগজ! ‘দেওয়ালেরও কান আছে’, কথাটা নাকি জেরুসালেমের এই দেওয়াল হতেই এসেছে! যার কাছে ‘রক্ষা করো’ বলে এতো প্রার্থনা, সে বেচারি জেরুসালেম শহরটাকেও রাখতে পারেনি। এমনকি নিজেকেও না।
বড়ই ব্যতিক্রমি কাহিনী। প্রায় চার হাজার ফুট দেওয়ালের মাত্র ১৬শ’ ফুট দাঁড়িয়ে রয়েছে। বাকিটা ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে রোমানরা। এটুকুকে নেহায়েত ফালতু বলে ফেলে রেখে গিয়েছিল। তারপর জেরুসালেম ‘ওল্ড সিটি’ ঘিরে কত জন যে দেওয়াল তুলেছে আর কত জন ভেঙেছে, মনে রাখা সত্যিই কঠিন।
এখানে যিশুর ক্রুশ ছিল, এখন এর উপরে ছোট গোল চুড়া। আর যেখানে তাঁর সমাধি, যা হতে তিনি নাকি ফের অক্ষত, জ্যোতির্ময় দেহে বেরিয়ে এসেছিলেন ঠিক সেখানে বড় গোল চুডা। দুটোই ছাই রঙের। এটিই নাকি বিশ্বের প্রথম চার্চ— পবিত্র সমাধির চার্চ যাকে বলা হয় চার্চ অব হোলি সেপালকর।
কাঁদতে আসা জেরুসালেম শহর বিশ্বের পুরাতন শহরের একটি। ইতিহাস রয়েছে এর অনেক। তবে কান্নার শব্দ ছাপিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সেই দেওয়াল। আর হাতছানি দিয়ে ডাকছে সবাইকে- যাঁরা এটিকে বিশ্বাস করে তাদেরকে। ইতিহাস এভাবেই এগিয়ে যায়- যাবেও। সব ইতিহাস আমাদের মধ্যে নাও আসতে পারে। তবে ইতিহাস এক অমর- যা হাজার হাজার বছর মানুষের মাঝে জীবিত থেকে যায়। বোধহয় এটিই নিয়ম। তথ্যসূত্র: http://www.mylifesatrip.com