The Dhaka Times Desk অনেকেই মাইগ্রেন এবং সাধারণ মাথাব্যথাকে এক করে ভাবেন। সাধারণ দৃষ্টিকোণে দুটোই একই রোগ মনে হলেও এদের উৎস ও উপসর্গ আলাদা। অনেকেই দীর্ঘ দিন মাথাব্যথা থাকলে তাকে মাইগ্রেন ভাবেন। অবশ্য মাইগ্রেন এমন একটি রোগ যা দীর্ঘদিন রোগীকে অসম্ভব যন্ত্রণা দিয়ে থাকে। মাথাব্যথা নিরাময় যোগ্য রোগ অপরদিকে মাইগ্রেন স্থায়ী ভাবে নিরাময় করা যায়না। সাময়িক ব্যথার পরিমাণ কমান যায়। চলুন আমরা মাথাব্যথা ও মাইগ্রেন কি, কেন হয়, এবং চিকিৎসা প্রক্রিয়া জেনে নিই।
মাথাব্যথাঃ সাধারনত নার্ভ সিস্টেমের সমস্যার কারনে সৃষ্ট একটি রোগ মাথাব্যথা। মাথাব্যথা সব বয়সের মানুষের হতে পারে। কারো কম কারো বেশি। জীবনে একবারও মাথাব্যথা হয়নি এমন লোক পাওয়া যাবেনা। ব্রেনের ভেতরে ব্যথা তৈরির ইনফ্লামেটরি রস স্নায়ুতন্ত্র এবং মাথার রক্তনালীকার চারপাশে নিঃসৃত হয়, ফলে মাথাব্যথা হয়। এই রস নিঃসৃত হওয়ার ফলে মাথার যেকোনো একদিকে নির্দিষ্ট সময় পর পর মাথাব্যথা হতে পারে। এছারা পানিসল্পতার কারনেও মাথাব্যথা হতে পারে। মাথাব্যথার অন্য একটি কারন হোল টেনশান বা দুশ্চিন্তা। সাধারণত ৭০% মাথাব্যথা দুশ্চিন্তার কারনেই হয়ে থাকে। এধরনের মাথাব্যথা কিছুক্ষণ পর এমনিই ভাল হয়ে যায়। আরেক ধরনের মাথাব্যথার উৎস হল ঘাড় থেকে উৎপত্তি হওয়া নার্ভ। সাধারণত ঘাড় থেকে উৎপত্তি হওয়া ৮ টি নার্ভের মধ্যে প্রথম ৩ টি তে যদি কোন রকম চাপের সৃষ্টি হয়, তাহলে সৃষ্ট ব্যথা মাথার দিকে ছড়িয়ে পড়ে। এই ধরনের ব্যথার ক্ষেত্রে ঘাড়ে ও ব্যথা থাকতে পারে। সেই সাথে ঘাড় বিভিন্ন দিকে নাড়ালে মাথা ব্যথার তারতম্য ও ঘটতে পারে। ঘাড়ের নার্ভে অনেক সময় চাপের সৃষ্টি হয়। আমাদের মেরুদণ্ডের মাঝখান দিয়ে মাথা থেকে কোমর পর্যন্ত স্নায়ু রজ্জু বা স্পাইনাল কর্ড নেমে আসে। এই স্পাইনাল কর্ড মস্তিস্ক থেকে বিভিন্ন নির্দেশনা বিভিন্ন শাখা নার্ভের মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অংশে পরিবহন করে, আবার শরীরের বিভিন্ন তথ্য ও অসুবিধার কথা মস্তিস্কে পৌঁছে দেয়। স্পাইনাল কর্ড থেকে তৈরি হওয়া এই শাখা নার্ভ গুলোকেই বলা হয় স্পাইনাল নার্ভ। ঘাড় থেকে এই স্পাইনাল নার্ভ যখন বের হয়, তা মেরুদণ্ডের বিভিন্ন জটিল কাঠামো ভেদ করে বাইরে বের হয়ে আসে। এই বের হয়ে আসার সময় মেরুদণ্ডের বিভিন্ন অংশের (যেমন ডিস্ক, লিগামেন্ট, মাসেল) সাথে চাপের জন্য ব্যথার উৎপত্তি হয়। এখন ঘাড় থেকে উৎপত্তি হওয়া ৮ টি নার্ভের মধ্যে প্রথম ৩ টি তে যদি এই ধরনের চাপের সৃষ্টি হয় আর এই ৩ টি নার্ভ যেহেতু মাথার দিকে যায়, তাই এগুলোতে সৃষ্ট সমস্যার জন্য আমরা মাথায় ব্যথা অনুভব করি। বাস, রিকশায় ঝাঁকুনির এবং বয়সের জন্য মেরুদণ্ডের হাড় ক্ষয়ে গিয়ে, অথবা অবাঞ্ছিত ভাবে বৃদ্ধি পেয়ে নার্ভে চাপ সৃষ্টি করতে পারে। আবার অনেকের দীর্ঘ সময় কম্পিউটার, ল্যাপটপ ব্যাবহার করেন ফলে ঘাড়ে ও মেরুদণ্ডে চাপ পরে যার ফল হিসেবে মাথাব্যথা হতে পারে।
মাথাব্যথার চিকিৎসাঃ যেহেতু মানুষের শরীরে পানিশূন্যতা মাথাব্যথার একটি কারন তাই প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। তবে অ্যালকোহল বা কফি জাতীয় পানীয় পান পরিহার করতে হবে। কারণ এগুলোও দেহে পানিশূন্যতা সৃষ্টি করে। ভেষজ চা মানুষের মাথাব্যথার আশঙ্কা কমাতে সাহায্য করে থাকে। নিয়মিত হাঁটাচলা, দৌড়ানো বা সাঁতার কাটলে মানুষের দেহের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়। ফলে মানুষের মস্তিষ্কেও রক্ত জমাট বাঁধার সম্ভাবনা থাকে না। এতে মাথাব্যথা হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। তাই মাথাব্যথা এড়াতে আপনার প্রতিদিনের রুটিনে থাকতে হবে শারীরিক ব্যায়াম। মাথার ব্যথা যদি অসহনীয় হয়ে ওঠে তবে একটি তোয়ালে ঠাণ্ডা পানিতে ভিজিয়ে কিছুক্ষণ পর পর তা কপালে ও ঘাড়ে আলতো করে ছোঁয়াতে পারেন। এটিও মাথার ব্যথা কমাতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। কাজের চাপে কমিয়ে পরিমিত ঘুমাতে হবে। মাথার ব্যথা যদি তীব্র হয়, তবে ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার বেশি করে খেতে হবে।
মাইগ্রেনঃ হঠাৎ অসহ্য মাথাব্যথার অন্য নাম মাইগ্রেন। দৈনন্দিন জীবনে যেসব অসুখ মুহূর্তের মধ্যে সুখ কেড়ে নিতে পারে তার মধ্যে অন্যতম মাথাব্যথা। এই যন্ত্রণা খুব সহজেই আপনার কর্মচাঞ্চল্য কিংবা উচ্ছলতাকে বাধাগ্রস্ত করে মুহূর্তের মধ্যে স্থবির করে ফেলতে পারে। মাইগ্রেন চিরতরে নির্মূল করা যায় না, চিকিৎসায় এর প্রকোপ কমিয়ে বা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এটি বংশগত হতে পারে। এটি পুরুষ অপেক্ষা মহিলাদের বেশি হয়। দুশ্চিন্তা ও মাসিকের সময় এটি বেশি হয়। দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ, কোষ্ঠকাঠিন্য এই রোগকে ত্বরান্বিত করে। মাইগ্রেন সাধারণত মাথার এক পাশের একটি স্থান থেকে শুরু হয়ে আস্তে আস্তে সেই পাশের পুরো স্থানেই বিস্তৃত হয়। প্রচন্ড মাথাব্যথার সঙ্গে সঙ্গে রোগীর দৃষ্টিবিভ্রম এবং বমির ভাব থাকতে পারে। সাধারণত রক্তে সেরোটোনিন অথবা ফাইভ এইচটির মাত্রা পরিবর্তিত হলে মস্তিষ্কে স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ ব্যাহত হয়। মস্তিষ্কের বহিরাবরণে যে ধমনীগুলো আছে সেগুলো মাইগ্রেন শুরুর প্রারম্ভে ফুলে যায় তাই মাথাব্যথা তীব্রতা ব্যাপক হয়। মাথাব্যথা শুরু হলে তা কয়েক ঘণ্টা, এমনকি দুই/তিন দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এটি রোগীকে দুর্বল এবং বিপর্যস্ত করে ফেলে। মাইগ্রেনের কয়েকটি ধরন আছে। তার একটি ক্লাসিক্যাল মাইগ্রেন। ক্লাসিক্যাল মাইগ্রেনের শুরুটা অধিকাংশ সময়েই রোগী বুঝতে পারেন। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগীর দৃষ্টিবিভ্রম হয়। রোগী চোখের সামনে আলোর ঝলকানি, চোখে সর্ষে ফুল দেখে। হাত-পা, মুখের চারপাশে ঝিনঝিনে অনুভূতি হয়। শরীরের এক পাশে দুর্বলতা বা অবশভাব হতে পারে। এরপর শুরু হয় মাথাব্যথা, যা মাথার একপাশের একটি স্থান থেকে শুরু হয়ে আস্তে আস্তে সেই পাশের পুরো স্থানেই বিস্তৃত হয়। প্রচণ্ড দপদপে ব্যথা রোগীকে কাহিল করে ফেলে। রোগীর প্রচুর ঘাম হয়। বমি কিংবা বমি ভাব হয়। আলো এবং শব্দ একদম সহ্য করতে পারে না। কথা বলতেও অনিচ্ছা প্রকাশ করে, মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকে। চুপচাপ অন্ধকার ঘরে থাকতেই রোগী বেশি পছন্দ করে।
মাইগ্রেনের চিকিৎসাঃ আগেই বলেছি মাইগ্রেন একেবারে নিরাময় সম্ভব নয় তবে বিভিন্ন ওষুধের মাধ্যমে মাইগ্রেন কমিয়ে আনা যায়। আজকাল মাইগ্রেনের নানারকম চিকিৎসা আছে। চিকিৎসার প্রক্রিয়া দুটি। প্রথমত তাৎক্ষণিক মাথাব্যথা কমানো এবং দ্বিতীয়ত মাথাব্যথার প্রকোপ কমিয়ে আনা বা নিয়ন্ত্রণে রাখা। উভয় লক্ষ্য অর্জনে ওষুধ ব্যবহার করতে হয়। ওষুধও বিভিন্ন ধরনের আছে। তাই বিশেষজ্ঞের পরামর্শক্রমে সঠিক পদ্ধতি গ্রহন করা উচিত।
Source: বাংলা নিউজ২৪.com
This post was last modified on ডিসেম্বর ২২, ২০২২ 12:07 pm
The Dhaka Times Desk President Ibrahim Raisi and his...
The Dhaka Times Desk With an illustrious career spanning more than a decade, Sura Krishna Chakma as…
The Dhaka Times Desk Bank financing and loan repayment for maize and chilli farmers…
The Dhaka Times Desk Production of 'Ai Toh Prem' with Superstar Shakib Khan and Bindu…
The Dhaka Times Desk On May 19, Sunamganj Sadar Priyangan Community Center of 12 upazilas...
The Dhaka Times Desk The wreckage of the helicopter carrying Iranian President Ibrahim Raisi has been found.
View Comments
Please share for everyone.