The Dhaka Times Desk রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার সময় উপস্থিত এক ব্যক্তি তার বক্তব্যে তুলে ধরেছেন সেদিনের লোমহর্ষক ঘটনার কাহিনী।
তার বর্ণনায় উঠে এসেছে সন্ত্রাসী হামলার সময় তিনি ওই রেস্তোরাঁতেই ছিলেন। পরদিন সকালে বেঁচে ফেরেন। তবে ওই ঘটনার কারণে এখন আর ঘুমাতে পারেন না। চোখ বন্ধ করলেই যেনো তিনি দেওয়ালে জঙ্গিদের ছায়া দেখতে পান, শুনতে পান সেই পায়ের আওয়াজ।
হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় দীর্ঘ ১২ ঘণ্টার জিম্মি দশা হতে জীবিত উদ্ধার হওয়া ওই নারী নাম প্রকাশ না করার শর্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমসের কাছে সে রাতের তিক্ত অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছেন।
ঘটনার দিন (১ জুলাই) রাতেই ২০ জন নিহত হন। এরমধ্যে ১৭ জন বিদেশি, তিনজন বাংলাদেশি (একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক)।
ওই নারী নিউইয়র্ক টাইমসকে তার বর্ণনায় বলেন, তাদের ৮ জনকে সন্ত্রাসীরা একটি টেবিলে বসিয়ে রেখে বলেছিল, বলা হয়েছিল তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে। এই ৮ জনের মধ্যে ৮ বছর ও ১৩ বছর বয়সী দু’জন শিশুও ছিলো। সন্ত্রাসীরা তাদের মাথা নিচু করে রাখতে বলেছিলো। তিনি বেঁচে গেছেন, এর কারণ হলো জঙ্গিরা মনে করেছিল তারা সবাই বাঙালি মুসলমান।
ওই নারীর বর্ণনা অনুযায়ী, জঙ্গিরা জিম্মি করার আধা ঘণ্টার মধ্যেই দেশি-বিদেশি নাগরিকদের মধ্যে ২০ জনকে প্রথমেই গুলি করে। তারপর ছুরিকাঘাতে তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করে। সন্ত্রাসীরা এ সময় শিশুদের চোখ-কান ঢেকে রাখতে বলেছিল। তবে চোখ-কান ঢাকা রাখলেও কী হচ্ছে, তা বোঝা অসম্ভব ছিল না।
হত্যাকাণ্ডের পর আক্রমণকারীরা সব লাইট বন্ধ করে দেয়। অন্ধকারের মধ্যেই তারা ৮জন মাথা নিচু করে ওই টেবিলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসেছিলেন। ভোর হওয়ার পর সন্ত্রাসীদের কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত দেখাচ্ছিল। জীবিত জিম্মিদের নিয়ে তখন কী করবে, তারা তা বুঝতে পারছিলো না। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার জন্য তাদের টেবিল হতে দু’জন পুরুষকে আক্রমণকারীরা ছাদে নিয়ে যায়।
ওই নারী বলেন, পরবর্তী সময়ে তিনি জানতে পেরেছেন যে, ছাদে নিয়ে যাওয়া দুই জিম্মির একজন সন্ত্রাসীদের বলেছিলো, তারা (সন্ত্রাসীরা) কথা দিয়েছিলো, বাংলাদেশি মুসলমানদের ছেড়ে দেবে। তিনি সন্ত্রাসীদের কথা রাখতে প্ররোচিত করতে সমর্থ হয়েছিলেন।
কমান্ডো অভিযান শুরু হওয়ার আগে সকাল ৬ টার দিকে সন্ত্রাসীরা তাদের টেবিলে থাকা ৮ জনকে ছেড়ে দেয়।
এর আগে আর্টিজান রেস্তোরাঁর এক কর্মীকে উদ্ধৃত করে এক ব্যক্তি ভারতের এনডিটিভিতে ওই রাতের ঘটনা বর্ণনা দেন। গত বুধবার এনডিটিভি ওই সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করে। এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই কর্মীসহ কয়েকজন আশ্রয় নিয়েছিলেন একটি শৌচাগারে।
রেস্তোরাঁর জিম্মি কর্মীকে উদ্ধৃত করে ওই ব্যক্তি বলেন, ‘ওকে (উদ্ধার হওয়া ব্যক্তি) দিয়ে সারা রাত্রি ওরা (জঙ্গিরা) মাছ ভাজা, পাস্তা, অন্যান্য ফুড-জাতীয় খাবার খেয়েছে। ওকে কোরআন শরিফ পড়িয়েছে। যে রান্না করে খাইয়েছে, ওকে বলেছে, তোরা নামাজ-কোরআন পড়বি। ওদের সাহরি খাইয়েছে, ওরাও খেয়েছে। ওরা যখন মরবে, মারা যাবে বা পুলিশের অভিযানের কিছুক্ষণ আগে ওদের বলেছে, দেখো, আমরা যেরকম ওদের মারছি, আমরাও হাসিমুখে কিছুক্ষণ পরে মারা যাবো। তোদের সঙ্গে আমাদের জান্নাতে দেখা হবে। হঠাৎ কিছুক্ষণ পরেই ভেতরে শুনতে পাই গুলির শব্দ। আমার পাশ দিয়ে আমার শেফ ডিয়েগো, আর্জেন্টিনার এক ভদ্রলোকও দৌড় দিছে। আমরা সঙ্গে সঙ্গে বাথরুমের ভেতর ঢুকি। আমরা ৯ জন বাথরুমের ভেতর সারা রাত্রি থাকি। পরে অনুমান রাত দুই-তিনটা বাজে, তখন ওরা আমাদের ওখান দিয়ে হাঁটে, হাঁটার পরে বলে যে, এই ওখানে কারা আছিস, তোরা বাঙালি না, ফরেনার? আমি সামান্য মাথা নোয়ানোর ফাঁকা দিয়ে দেখলাম, একজনের সামনে বড় একটা রামদাও ধরে আছে, আরেকজনের পেছনে পিস্তল ধরে রয়েছে।’