M. H. Sohail শাহবাগের প্রজন্ম চত্ত্বরে লক্ষ লক্ষ মানুষের ঢল যেনো জোয়ারের মতো। কোথা থেকে এতো মানুষ আসছে তা কল্পনা করে বের করা কঠিন। কিন্তু একটি বিষয় নিশ্চিত যে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে জনগণ সব সময় সোচ্চার। অন্তত শাহবাগের এই গণজাগরণ দেখে তাই বোঝা যাচ্ছে। আর এই গণজোয়ার দেখে রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের শিক্ষা নেওয়া উচিৎ।
বর্তমানে আমাদের দেশের যে রাজনৈতিক ধারা বিদ্যমান তার সাথে জনগণের একাত্ব নেই। কারণ হরতাল-অবরোধ এবং বিশেষ করে অগ্নি সংযোগ, ভাংচুর আর সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার মতো রাজনৈতিক কর্মসূচি জনগণ প্রত্যাখান করেছে। জনগণ সব সময় চাই তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্দোলনে থাকতে। তবে তা হতে হবে শান্তিপূর্ণ। আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা মনে করেন, শুধু ভাংচুর করলেই বোধহয় অধিকার আদায় করা যাবে। তাদের সেই ধারণা যে ভুল তা প্রমাণ করেছে শাহবাগের গণ আন্দোলন। শান্তিপূর্ণভাবে যেকোন কর্মসূচিই সফল করা যায়। শাহবাগের প্রজন্ম চত্ত্বর আজ জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। এখানে কোন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কোন আস্ফালন নেই। নেই রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের আনাগোনা। এখানে সবাই নিরপেক্ষ। দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য। বিশেষ করে যারা ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ দেখেনি- সেই নতুন প্রজন্ম আজ জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে জেগে উঠেছে। তাদের এই জেগে ওঠাকে কোনভাবেই ছোট করে দেখা যাবে না। স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে সামাজিক-সাংস্কৃতিক সকল সংগঠন এই কর্মসূচিকে স্বাগত জানিয়েছে। এমনকি আমাদের মহান জাতীয় সংসদও নতুন প্রজন্মের এই কর্মসূচির সঙ্গে একাত্বতা ঘোষণা করেছে। এটি জাতির ইতিহাসে এক স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এদেশের ইতিহাসে আরও এক নতুন অধ্যায়ের সৃষ্টি করেছে এদেশের লক্ষ কোটি সাধারণ জনতা।
বায়ান্ন-এর ভাষা আন্দোলন, উনসত্তরের গণঅভুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং নব্বুই-এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে এদেশের সাধারণ মানুষ যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল- আজকের প্রজন্মদের অবস্থা দেখে মনে হয়েছি সেটিও ছাড়িয়ে গেছে। এদেশে যারা একাত্তরে গণধর্ষণ, লুটতরাজ, নির্বিচারে মানুষ হত্যা করেছে তাদের সঠিক বিচারের দাবি আজ গণদাবিতে পরিণত হয়েছে। একাত্তরের পরাজিত শত্রুরা যেভাবে এদেশের পুলিশসহ সাধারণ মানুষের জান মালের যে ক্ষতি সাধন করে যাচ্ছে- তা এদেশের সাধারণ মানুষ আর মেনে নিতে পারে না। আর তাই আজকের এই গণবিস্ফোরণ।
অবশেষে সরকারও আইন সংশোধন করেছে। এবার দেশের আপামর মানুষ আশাবাদি গণজাগরণের এই শান্তিপূর্ণ দুর্বার আন্দোলন সফল হবেই হবে।