দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আবিষ্কারের নেশা যার মনে একবার প্রবেশ করেছে তিনি ছোট হোক আর বড় হোক, ভুল করে হোক বা সঠিক উপায়েই হোক কিছু না কিছু একটা আবিষ্কার করেছেই। পৃথিবীতে যত জিনিস আবিষ্কার হয়েছে তার ফলস্বরুপ পৃথিবীও আবিষ্কারের ছোয়ায় অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে। এখনো এমন অনেক কিছু রয়েছে যার আবিষ্কার পৃথিবীকে আরো অনেক দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাবে। আজ আমরা এমনি একটি আবিষ্কারের বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো।
বিজ্ঞানীদের ধারণা কক্ষ তাপমাত্রায় সুপারকন্ডাক্টিভিটি আবিষ্কৃত হলে পৃথিবীকে আরো ১০০ বছর এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। অনেক বিজ্ঞানী এই বিষয় নিয়ে গবেষণা করে ভাল ফল না পাওয়ায় হাল ছেড়ে দিয়েছে। পদার্থকে বিদ্যুৎ পরিবাহিতার উপর ভিত্তি করে ৩ ভাগ করা হয়।
১। কন্ডাক্টর
২। সেমিকন্ডাক্টর
৩। ইনসুলেটর
কিন্তু আরো একটা আছে সেটা হলো সুপার কন্ডাক্টর বা অতিপরিবাহী। তারের ভেতর দিয়ে যখন বিদ্যুৎ পরিবাহিত হয়, তখন বিদ্যুৎ কিন্তু পুরোপুরি পাওয়া যায় না। বৈদ্যুতিক রোধের কারণে অনেকটা বিদ্যুৎ খরচ হয়ে যায়। কিন্তু বিজ্ঞানীরা এমন এক পরিবাহীর কথা বলছেন, যার ভেতর দিয়ে বিদ্যুৎ চললে সামান্য বিদ্যুৎ ও খরচ হবে না।
মানে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে ১০০%। এমন পরিবাহীকে বলা হয় সুপারকন্ডাক্টর বা অতিপরিবাহী। সমস্যা হলো, এমন পরিবাহী পেতে হলে তাপমাত্রা হতে হয় শূন্যের অনেক নিচে। বাংলাদেশের পদার্থবিজ্ঞানী সালেহ্ হাসান নকীব দুই দশক ধরে সাধনা করছেন, উচ্চ তাপমাত্রায় অতিপরিবাহী আবিষ্কারের। এমনকি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের এই অধ্যাপক আশাবাদী, একদিন কক্ষ তাপমাত্রাতেই মিলবে অতিপরিবাহী।
সুপারকন্ডাক্টর হল এমন এক ধরনের পরিবাহী (যাদেরকে আমরা অতিপরিবাহী বলে থাকি) যাদের একটা তাপমাত্রার নিচে যদি নিয়ে যাওয়া যায় তাহলে তার ভেতরে আর কোনোরকম রোধ থাকে না। অর্থাৎ সে বিদ্যুৎপ্রবাহে কোনোরকম বাধার সৃষ্টি করে না। আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল সুপারকন্ডাটিং অবস্থায় এরা এদের ভেতরে চৌম্বকক্ষেত্র প্রবেশ করতে দেয় না।
তাহলে এভাবে বলা যায়, সুপারকন্ডাক্টর ছাড়া যত রকমের তড়িৎ পরিবাহী আছে অর্থাৎ বিদ্যুৎ পরিবাহী আছে তার ভেতর দিয়ে যখন বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় তখন এই বিদ্যুতের প্রবাহ এক ধরনের বাধার সামনে পড়ে। বিদ্যুতের প্রবাহ হতে পারে কিন্ত সেখানে এক ধরনের বাধার সৃষ্টি হয়। এই বাধাকে বলা হয় ওই পরিবাহীর রোধ। কিন্তু যেসব পদার্থের অতিপরিবাহিতার গুণ আছে তাদের ভেতর দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহে কোনোরকম বাধার সামনে পড়ে না।
তিনি ১৯৯৬ সাল থেকে সুপার কন্ডাক্টিভিটি নিয়ে কাজ করছেন। এ বছর তার কাজের ২২ বছর হচ্ছে। তিনি ছাত্রজীবনে বাংলাদেশে তাত্ত্বিক গবেষণা শুরু করেছিলেন। পরে ইংল্যান্ডে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুটা তাত্ত্বিক ও বেশিরভাগই পরীক্ষামূলক (এক্সপেরিমেন্টাল) কাজ করেছেন। ২০০৫ সালে দেশে ফিরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পুনরায় অনেকটা তাত্ত্বিক কাজ করছেন। তিনি বলেন, তারা যেসব অতিপরিবাহী নিয়ে কাজ করছেন, তাদেরকে উচ্চ তাপমাত্রার অতিপরিবাহী বলা হয়। কিছু কিছু সুপারকন্ডাক্টর আবিষ্কৃত হয়েছে যারা অপেক্ষাকৃত উচ্চতাপমাত্রাতেই অতিপরিবাহীতার ধর্ম প্রদর্শন করে।
এই দুইটি একই জিনিস না। সুপারকন্ডাক্টিং ম্যাটেরিয়ালের ভেতর দিয়ে যে বস্তু প্রবাহিত হয় তাকেই মূলত সুপারকারেন্ট বলে। আমরা যদি অন্য ধরনের ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার করি যেমন কারেন্ট ট্রান্সমিশনের জন্য তামা, অ্যালুমিনিয়াম বা সিলভার এগুলো ব্যবহার করি। এগুলোর ভেতর দিয়ে যে কারেন্ট প্রবাহিত হয় সেটাকে আমরা কখনো সুপারকারেন্ট বলতে পারি না। আমরা সুপারকারেন্ট তখনই বলব যখন সেটা সুপারকন্ডাক্টরের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হবে। যেমন ম্যাগনেসিয়াম ডাইবোরাইড এর ভেতর দিয়ে যে কারেন্ট প্রবাহিত হয় সেটা সুপারকারেন্ট বলা যায়।
সুপারকন্ডাক্টরের ভীষণ তাৎপর্য আছে। সুপারকন্ডাক্টিং বস্তুগুলোর এমন অনেক বৈশিষ্ট্য আছে যা দিয়ে সুপারকন্ডাক্টিং ইলেক্ট্রনিক সার্কিট দিয়ে বর্তমান ব্যবহৃত কম্পিউটারের চেয়ে অনেক বেশি দক্ষতা সম্পন্ন কম্পিউটার তৈরি করা যাবে। তারপর এই যে পাওয়ার স্টেশন থেকে বাসা পর্যন্ত ইলেক্ট্রিসিটি নিয়ে আসতে প্রতিনিয়ত শক্তি ক্ষয় হয় কিন্তু এই ট্রান্সমিশন যদি সুপারকন্ডাক্টিং তারের ভেতর দিয়ে হয় তাহলে এক বিন্দুও শক্তি ক্ষয় হবে না। অর্থাৎ ট্রান্সমিশনে কোনো শক্তি ক্ষয় হবে না। আর এই ট্রান্সমিশনের শক্তি ক্ষয় যদি বন্ধ করা যায় তাহলে রাতারাতি এই দুনিয়ার চেহারা পাল্টে যাবে।
তারপর সুপারকন্ডাক্টর দিয়ে অনেকরকমের শক্তিশালী চুম্বক তৈরি করা সম্ভব হবে। অত্যন্ত প্রবল চৌম্বকক্ষেত্র তৈরি করতে পারি যেগুলো দিয়ে অনেক শক্তিশালী কাজ করা যায়। এছাড়াও সুপারকন্ডাক্টিং বস্তু দিয়ে এক ধরনের যানবাহন (যেমন ট্রেন) তৈরি করা যায়, যার গতি এখন যেসব যানবাহন চলে তাদের চেয়ে ২-৩ গুণ বেশি হবে। এই যানবাহন কিন্তু শূন্যে ভেসে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গাতে যায়। এই ধরনের ট্রেনকে ম্যাগলেভ ট্রেন বলা হয়। এছাড়াও সুপারকন্ডাক্টিং ইলে্ক্ট্রনিক সার্কিট ও শক্তিশালী সুপারকন্ডাক্টিং ম্যাগনেট (অতিপরিবাহী চুম্বক) চিকিৎসাশাস্ত্রে ও বিদ্যুৎ-চৌম্বক ক্ষেত্র ডিটেকশনের কাজে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ের জন্য এমআরআই (ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং) মেশিনগুলো অতিপরিবাহী চুম্বক ব্যবহার করে থাকে।
This post was last modified on আগস্ট ৭, ২০১৮ 1:53 অপরাহ্ন
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুভ সকাল। মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারী ২০২৫ খৃস্টাব্দ, ২৩ পৌষ ১৪৩১…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ব্রণ বিষয়ে চিকিৎসকরা মনে করেন, অ্যাডাল্ট অ্যাকনির নেপথ্যে মূল কারণ…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সেরা প্রযুক্তি আও উদ্ভাবনের জোরে বিনোদনের সংজ্ঞাকে প্রতিনিয়ত পাল্টে দিচ্ছে…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ভিটামিন বি১২ শরীরের কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ কাজ পরিচালনা করে। তাই এই…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আজ (সোমবার) আজিমপুর কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন বাংলা সিনেমার কিংবদন্তী…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বর্বর হামলায় গত ৩ দিনে…