দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মানুষ সব সময় এক রকম থাকে না। হঠাৎ করেই মানুষের পরিবর্তন ঘটতে পারে। আর তখন তিনি হয়ে যেতে পারেন অন্য এক মানুষ। যেমনটি ঘটেছে তাইওয়ানের নিউ তাইপেই শহরের ইয়েন ওয়েই-শানের জীবনে।
এক সময় তিনি ছিলেন কুখ্যাত গ্যাংস্টার। তাকে দেখলে বাঘে-মোষে এক ঘাটে পানি খেতো। সেই কুখ্যাত গ্যাংস্টার তাইওয়ানের নিউ তাইপেই শহরের ইয়েন ওয়েই-শান এখন গরিবের বন্ধু। তাকে যেনো এখন আর চেনায় যায় না। তারমধ্যে নেই সেই ভয়ংকর এক রোখা মনোভাব। তিনি যেনো এখন একজন সাধারণ মানুষ, যাকে বলে একজন ভালো মানুষ।
ছোট বেলাতেই অপরাধ জগতের সঙ্গে যোগাযোগ হয় ইয়েন ওয়েই-শানের। যখন তার বয়স ১৫ বছর, একটি দলের সঙ্গে তীব্র গোলমালে জড়িয়ে পড়েন তিনি। তাদের সঙ্গে হাতাহাতিও হয়। সেখানেই একজনের মৃত্যু ঘটে।
আর তাই ১৫ বছর বয়সেই অনিচ্ছাকৃত খুনের দায়ে জেল হয় ইয়েনের। সাড়ে চার বছর কারাবন্দি অবস্থায় থাকতে হয় তাকে। তবে জেল থেকে বের হওয়ার পর এক্কেবারে অপরাধ জগতেরই লোক বনে যান ইয়েন। গড়ে ওঠে নিজের একটি বাহিনী।
দীর্ঘদিন চলছিল ঠিক এভাবেই। এক সময় টার্গেট হয়ে পড়েন পুলিশের চোখে। আট বছর আগে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যান ইয়েন। তবে আদালত হতে এটাই শেষ সুযোগ হিসেবে ক্ষমা করে দেওয়া হয় ইয়েনকে।
আনন্দবাজারপত্রিকা অনলাইনের এক খবরে বলা হয়, এরপর ইয়েন যেনো দিনে দিনে অন্য এক স্বাধীনতার স্বাদ পেতে শুরু করেন। তার ভাষায়, ওই সুযোগটাই যেনো আমার ঘুম ভাঙিয়ে দেয়। তখন থেকেই আমার পরিবার ও এই স্বাধীনতাকে আগলে রাখি আমি।
জানা যায়, নিউ তাইপেই শহরে একটি নুডলসের দোকান পরিচালনা করেন ইয়েনের মা। নুডলস ছাড়াও ওই স্টলে পর্ক, চিংড়ি সঙ্গে বাঁধাকপিও পাওয়া যায়। এই সবকিছুই সাধারণ খরিদ্দারদের জন্য মেলে ন্যায্য মূল্যে। তবে যাদের সামর্থ্য নেই তারা কী করবেন?
তাদের জন্যও বিনামূল্যে এইসব খাবারের বন্দোবস্ত করে থাকেন ইয়েন ও তার মা! ইয়েন বলছিলেন, মাসে প্রায় ৬০০ হতে ৭০০ বাউল নুডলস বিনামূল্যে গরিব মানুষজনকে দেওয়া হয়।
ইয়েন চার বছর পূর্বে মার সঙ্গে এই কাজে হাত দিয়েছিলেন। আজ পর্যন্ত প্রায় ৪০ হাজার বাউল নুডলস বিনামূল্যেই মানুষকে বিলি করেছেন বলে জানিয়েছেন এক সময়ের গ্যাংস্টার ইয়েন! ইয়েনের মতে, মূলত বৃদ্ধ মানুষজন ও বেকার যুবকরাই বিনামূল্যে খাবারের জন্য আবেদন করে থাকেন।
ইয়েনের শুধু যে নুডলসের দোকানেই দিন কাটে তা নয়। জেলে গিয়ে বন্দিদের সঙ্গেও রীতিমতো আলাপচারিতা জমাতে যান ইয়েন।
৬২ বছরের এক সাবেক গ্যাংস্টারও ইয়েনের দোকানের প্রতিদিনের নিয়মিত খরিদ্দার। পরিবারের সঙ্গেও সমস্ত যোগাযোগ ছিন্ন করে ফেলেছেন ওই ব্যক্তি। ইয়েন বলেছেন, আমি অনেক গ্যাংস্টারকেই দেখেছি, নিজের জীবনটা এইভাবে শেষ করে ফেলতে। মাঝেমধ্যে আমারও ভেবে খুব কষ্ট হয় যে, আমিও জীবনের কতোটা সময় এইসব করেই নষ্ট করেছি।
ইয়েন বলেছেন, অপরাধ জগতের সঙ্গে যুক্ত থাকাকালীন সময় মনে হতো আমি যেনো একটি দড়ির ওপর দিয়ে হাঁটাচলা করছি- কারণ তখন যে কোনও মুহূর্তেই আমার জন্য একজন শত্রু অপেক্ষা করে থাকতো। আর এখন এমন মানুষের সঙ্গে দেখা হয় যে, যারা আমাকে দেখে সত্যিই খুব খুশি হয়। এখন যে শান্তিতে আমি আছি, তা কাওকে বলে বোঝাতে পারবো না।