দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বর্ষায় পানিতে থৈ থৈ, শীতে শুকিয়ে বিস্তীর্ণ শস্যক্ষেত। ঢেউহীন এক পানির রাজ্য। টলটলে জল-জঙ্গলে মাথাচাড়া দিয়েছে শাপলা ফুল। আকাশজুড়ে সাদা মেঘের সঙ্গে সমান্তরালে উড়ছে অসংখ্য সাদা বক। অল্প এগোতেই বদলে যেতে থাকে দৃশ্য। সবুজে সমারোহে বুদ হয়ে পড়ছে জোড়া চোখ। নীলচে পানিতে স্পষ্ট হওয়া সাদা মেঘের প্রতিবিম্ব দেখে যে কেউ মায়াবী জগতের ভাবনায় ডুবে যেতে পারবে। আর এই মায়াবী জগতে যেতে চাইলে আপনাকে যেতে হবে মুন্সীগঞ্জের আড়িয়াল বিলে।
আড়িয়াল বিল দেশের মধ্যাঞ্চলের সবচেয়ে বড় ও প্রাচীন বিল। এর প্রতিবেশ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে হাজার বছর ধরে। ধারণা করা হয়, অতি প্রাচীন কালে এ স্থানে গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের সঙ্গমস্থল ছিল, পরে উভয় নদীর প্রবাহ পরিবর্তনের ফলে এই স্থান শুষ্ক হয়ে বিলে পরিণত হয়। ঢাকা ও মুন্সীগঞ্জ জেলা এবং পদ্মা নদীর মাঝখানে একটি ছিটমহলসম জলাভূমি এ আড়িয়াল বিল। ইতিহাসবিদ যতীন্দ্র মোহন রায় তার ‘ঢাকার ইতিহাস’ (১৯১২) গ্রন্থে বিল অধ্যায়ে বলেন, ‘সম্ভবত ঢাকা জেলার বিলগুলোর মধ্যে আয়তন ও প্রসস্ততায় আড়িয়াল বিল সর্বপেক্ষা বৃহৎ। এ সুপ্রসস্ত বিলটি পূর্ব-পশ্চিমে ১২ মাইল দীর্ঘ এবং উত্তর-দক্ষিণে প্রায় সাত মাইল প্রস্থ। এ বিলের দক্ষিণ প্রান্তে দয়হাটা, শ্যামসিদ্ধি, প্রাণীমণ্ডল, গাদিঘাট, উত্তর রাঢ়ীখাল; উত্তরে শ্রীধরপুর, বাড়ৈখালী, শেখরনগর, মদনখালী, আলমপুর, তেঘরিয়া; পূর্বপ্রান্তে হাঁসাড়া, ষোলঘর, কেয়টখালী, মোহনগঞ্জ; পশ্চিমে কামারগাঁও, জগন্নাথপট্টি, কাঁঠালবাড়ি, মহতপাড়া প্রভৃতি।’ মুন্সীগঞ্জ ও ঢাকা জেলার ৩টি উপজেলায় বিস্তৃত রয়েছে দেশের প্রাচীন জলাভূমি আড়িয়াল বিল। তবে উত্তর-পূর্বাংশে সিরাজদিখান উপজেলার কেয়াইন, শেখরনগর, চিত্রকোট ও রাজানগর ইউনিয়নের কিছুটা অংশে বিস্তৃত। এ বিলটি মূলত পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত। পশ্চিমে একেবারে শেষ প্রান্তে গিয়ে পশ্চিম-উত্তর অনেকটা বেঁকে গেছে।
আষাঢ়, শ্রাবণ ও ভাদ্র এ তিন মাস বিলের চারপাশ থৈ থৈ করে পানিতে। চারপাশ টইটম্বুর পানিতে বিলে ভিটার উপর ঘরগুলো মাথা তুলে আছে, সঙ্গে মাথা তুলে হাঁক দিচ্ছে বুক অথবা মাথা সমান পানিতে নিমজ্জিত বড় বড় গাছ। বিলের লোকজনকে এক ঘর থেকে অন্য ঘরে, এক পাড়া থেকে অন্য পাড়ায়, মসজিদ, মন্দির ও বাজারে যাওয়ার জন্য ঘরের দরজা থেকেই ডিঙ্গি নৌকায় পারাপার হতে হয়। আবার কেউ কলা গাছের ডেম দিয়ে বিশেষ কায়দায় ভেলা তৈরি করে পারাপার হচ্ছে। ভরা বর্ষায় বিলে থই নেই, এ সময় নৌকা চলাচলের জন্য দশ-বার হাত লগি লাগে, কোথাও আবার লগির ঠাই হয় না; তখন মাঝিকে বাধ্য হয়ে বৈঠা ব্যবহার করতে হয়। যে দিকে চোখ যায় শুধু পানি আর পানি। দূরপানে নীল আকাশ যেন বিলের পানি স্পর্শ করে আছে। দিগন্ত বিস্তৃত সাগরের মতো বিল জলে পরিপূর্ণ থাকে, বানের জলে খেত-খামার সব অদৃশ্য হয়ে যায়। দূরে বিলের মাঝ দরিয়ায় কয়েকটি শঙ্খচিল, কানিবক, মাছরাঙা, ডাহুক, পাতিহাঁস ও নাম নাজানা অতিথি পাখি ওড়াউড়ি দেখা যাবে। মোটকথা বর্ষায় নৌকায় চড়ে আড়িয়াল বিল ভ্রমণ সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্যগুলো উপভোগ করার একটি উপযুক্ত সময় হতে পারে।
কীভাবে যাবেন:
ঢাকা থেকে আড়িয়াল বিলে এক দিনেই ঘুরে আসা যায়। ঢাকার গুলিস্তান থেকে মাওয়াগামী যেকোনো বাসে চড়ে নামতে হবে শ্রীনগরের বেজগাঁও। ভাড়া ৫০ থেকে ৭০ টাকা। এ পথের বাসগুলোর মধ্যে ইলিশ, প্রত্যাশা, আরাম পরিবহন ও বিআরটিসি অন্যতম। সেখান থেকে ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে সোজা যেতে হবে শ্রীনগর বাজার। ভাড়া ২০ থেকে ২৫ টাকা। সেখান থেকে ভালো একটা ট্রলার দেড় হাজার টাকায় সারাদিনের জন্য ভাড়া নিয়ে ঘুরে আসুন আড়িয়াল বিল। ইচ্ছে করলে আপনি হাঁসাড়া বাজার থেকেও যাত্রা শুরু করতে পারেন। ফেরার পথে আপনি গাড়ি পাবেন ঢাকা-মাওয়া রোডের শ্রীনগর ফেরিঘাট, বেজগাঁও, ছনবাড়ি বা হাঁসাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে।
This post was last modified on সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৮ 2:42 অপরাহ্ন
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ স্বাস্থ্য বিশেষ করে চোখ নিয়ে আমরা অধিকাংশ সময় চিন্তিত থাকি।…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ যতো দিন গড়াচ্ছে ততোই প্রযুক্তির উৎকর্ষ আমাদের দৈনন্দিত জীবনকে এক…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আসছে ঈদ উপলক্ষ্যে চ্যানেল আই ৮ দিনব্যাপী সাজিয়েছে বিভিন্ন বিনোদনমূলক…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ জঙ্গলের ভিতর ফাঁকা জায়গাতে ঘুরে বেড়াচ্ছিল একটি ষাঁড়। দূর হতে…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুভ সকাল। শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫ খৃস্টাব্দ, ৮ চৈত্র ১৪৩১…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ তৃষ্ণা নিবারণের স্বাস্থ্যকর বিকল্প হতে পারে এই সময়ের তাজা রসালো…