দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ভাগ্যের নির্মম পরিহাস একেই বলে। যার হাতের শৈল্পিক ছোঁয়াতে নায়িকারা পর্দায় হাজির হয়েছেন স্বপ্নের রানী রূপে, তার হাতেই আজ ভিক্ষের থালা। মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে!
তিনি একদিন মনের মাধুরী মিশিয়ে সাজিয়েছেন শাবানা, ববিতা, অঞ্জু, মৌসুমীর মতো নন্দিত সব নায়িকাদের। অথচ ভাগ্যের এই নির্মম পরিহাসের শিকার হয়ে তিনি আজ ভিক্ষে করছেন পথে পথে!
এই পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম কাজী হারুন। চলচ্চিত্রপাড়ায় ভীষণ পরিচিত তিনি। কেনই বা পরিচিত হবেন না? ‘বেদের মেয়ে জোছনা’র মতো ব্যবসাসফল এবং জনপ্রিয় চলচ্চিত্রের তিনি মেকআপম্যান ছিলেন।
গুণি এই মেকাবম্যান ‘অন্য জীবন’, ‘শঙ্খমালা’, ‘গোলাপী এখন ঢাকা’, ‘জীবন সংসার’সহ শতাধিক চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন। দীর্ঘদিনের ক্যারিয়ারে পেয়েছেন নানা স্বীকৃতিও। ১৯৯৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘হৃদয় থেকে হৃদয়’ ছবিতে কাজের জন্য পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।
সেই পুরস্কারপ্রাপ্ত মেকাআপম্যান হারুনের সংসার চলে এখন ভিক্ষে করে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দক্ষিণ যাত্রাবাড়ির ফরিদাবাদ বস্তিতে স্ত্রী মহুয়া আকতারকে নিয়ে বসবাস করেন তিনি। ৩টি বাড়িতে কাজ করে ঘর ভাড়া দেন স্ত্রী মহুয়া, অপরদিকে ভিক্ষা করে জীবনধারণের খরচ চালান কাজী হারুন।
তবে শুধু দারিদ্রতাই নয়, হারুনের আরও এক প্রতিপক্ষ হলো তার শারীরিক অসুস্থতা। যার সুচিকিৎসা তিনি করাতে পারছেন না অর্থের অভাবে। সিনেমায় থাকতে পারেন না অনেকদিন। তাই ভিক্ষার টাকাতেই কোনোমতে চালিয়ে যাচ্ছেন তার চিকিৎসা।
কাজী হারুনের স্ত্রী মহুয়া আকতার বলেছেন, বেশ ভালোই ছিলেন তারা বিয়ের পর হতে। অর্থের অভাব ছিলো না। তবে ২০০৯ সালে কাজী হারুনের ব্রেইন স্ট্রোক হবার পর হতেই দিন বদলে যায়, আসে হতাশা ও কষ্টের দিন।
স্ট্রোকের পর শরীরের ডান পাশটা অকেজো হয়ে যায়। অসুস্থ হওয়ার কারণে তিনি আর কাজ করতে পারছিলেন না। তখন শুরু হয় অর্থকষ্ট। চলচ্চিত্রের কেও এসে খবরও নেননি কখনও। অভিমান ও কষ্টে বাধ্য হয়েই ২০১১ সাল হতে তিনি ভিক্ষা করতে শুরু করেন।
মহুয়া আরও জানিয়েছেন, মেয়ের বিয়ের খরচ যোগাতে ২০১০ সালে তিনি বিক্রি করে দিয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার হিসেবে পাওয়া সোনার মেডেলটি। সেটিতে এক ভরি স্বর্ণ ছিল। তখন স্বর্ণের দাম ছিল মাত্র ৮ হাজার টাকা।
যে পুরস্কারটি ছি সেটি আর বিক্রি করতে পারিনি। কারণ পিতলের কোনো দামই নাই। সেটি ফেলে দিয়েছেন কাজী হারুন। এর কোনো মূল্য বা এর প্রতি কোনো আবেগ এখন আর কাজ করে না হারুনের মধ্যে।
মহুয়া বলেছেন, ‘বস্তিতে দেড় হাজার টাকা দিয়ে একটা ছোট রুমে ভাড়া থাকি। আমি ৩টি বাড়িতে কাজ করি। সেখানে থেকে ৫শ করে দেড় হাজার টাকা পাই, সেই টাকা দিয়েই বাড়ি ভাড়া দিই।
তিনি ভিক্ষা করে দিনে দু-তিনশ টাকা পান, সেই টাকা দিয়ে বাজার ও উনার ওষুধ কিনি। খুব সমস্যায় পড়তে হয় আমি অসুস্থ হলে। উনাকে দেখারও কেও নেই আমি ছাড়া, আয়ও বন্ধ হয়ে যায়।’
প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে মহুয়া বলেছেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাহায্য চাই। আমাদের চেনাজানা বড় কোনো লোক নেই, কে আমাদের তার কাছে নিয়ে যাবে?
সাংবাদিকদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানালাম, তিনি যেনো আমাদের পাশে দাঁড়ান। আমার একজন স্বামী শিল্পী মানুষ। অথচ পথে পথে ভিক্ষে করে বেড়ান। এলাকার লোকজন এটা দেখে কষ্টও পায়, অনেকেই আবার তাচ্ছিল্যও করে। সবাই বলে প্রধানমন্ত্রীর নাকি অনেক বড় মন, তিনি নিশ্চয়ই আমাদের কষ্টটা বুঝবেন। তিনি তো কতো শিল্পীকেই সহযোগিতা করে থাকেন।’
হারুনের স্ত্রী মহুয়ার প্রত্যাশা, যে হাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিন গুণির স্বীকৃতি হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার তুলে দিয়েছিলেন, সেই হাতে এবার তিনি মমতা ও আস্থার হাতটাও রাখবেন নিশ্চয়ই।
This post was last modified on অক্টোবর ১৪, ২০১৮ 9:28 অপরাহ্ন
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুভ সকাল। শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪ খৃস্টাব্দ, ৩০ কার্তিক ১৪৩১…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ অনেকই সুজি খেতে খুবই ভালোবাসেন। তাই তারা প্রতিদিন সুজির পায়েস,…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ প্রথমবারের মতো প্যান ইন্ডিয়ান চলচ্চিত্র বানিয়েছেন নির্মাতা অনন্য মামুন। ঢালিউড…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আপনার যদি প্রতিদিন চিকেন খাওয়ার অভ্যাস থাকে, তাহলে জেনে রাখুন,…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ কোটা সংস্কার আন্দোলনের সংগঠন ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’- এর অন্যতম সমন্বয়ক…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নবনিযুক্ত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারণায় প্রতিশ্রুতি দেন…