দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ভারতে ঘটে যাওয়া ট্রেনে কাটা পড়ে মর্মান্তিক মৃত্যুর কথা সকলকেই নাড়া দিয়েছে। ধর্মীয় অনুষ্ঠানে এসে এভাবে জীবন হারানো বা সারা জীবনের জন্য পঙ্গুত্ববরণ করার ঘটনা সমগ্র বিশ্ববাসীকে নাড়া দিয়েছে।
ভারতের অমৃতসরে ট্রেন দুর্ঘটনায় এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৬২ জন। আহত হয়েছেন আরও অনেকেই। কেওবা সারা জীবনের জন্য পঙ্গুত্ববরণ করেছেন। সে এক বীভিষিকাময় ঘটনা। শারদীয় দুর্গা পূজার বিজয়া দশমীর দিন সন্ধ্যার পর রাবন বধ অনুষ্ঠান দেখছিলো হাজার হাজার মানুষ। অনুষ্ঠানটি রেল লাইনের ধারে হওয়ায় বহু মানুষ এই সময় রেল লাইনে দাঁড়িয়ে অনুষ্ঠান উপভোগ করছিলেন।
সেদিন যা ঘটেছিলো
এই সময় রাবন বধ অনুষ্ঠান দেখছিলো হাজার হাজার মানুষ। ধর্মীয় উন্মাত্ততায় সকলেই যেনো বিভোর ছিলো। এই সময় ফুটানো হচ্ছিল পটকা ও আতসবাতি। যে কারণে ট্রে চলে আসলেও কেও খেয়াল করেনি সেদিকে। গায়ের উপর দিয়ে যখন ট্রেন চলে যায় তখন কারও হাত-পা ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়েও সাহায্যের জন্য কাতরাচ্ছিলেন। আশেপাশের লোকজন ছুটে এসে সাহায্যও করেছেন।
তবে বিপর্যয়ের মধ্যেও সুযোগ সন্ধানী কেও কেও আবার মৃত ও আহতদের পকেট হাতড়ে বের করে নিচ্ছিলেন টাকা-পয়সা। খুলে নিয়েছেন সোনার হার বা আংটি। কেও বা হাত হতে ছিটকে পড়া দামি মোবাইল তুলে নিয়েছেন নিজের পকেটে!
অমৃতসরে ভয়াবহ ও মর্মান্তিক ওই দুর্ঘটনার পর এমন ছবি কোনো ক্যামেরায় ধরা না পড়লেও এমন বর্ণনা দিয়েছেন মৃতদের স্বজন এবং আহতরা।
১৭ বছর বয়সী ছেলেকে হারিয়ে দিশাহারা জ্যোতি কুমারী আর্তনাদ করে জানান, ছেলে সবসময় গলায় সোনার চেন পরে থাকতো। তবে যখন লাশ সরকারি হাসপাতাল হতে হস্তান্তর করা হয়, তখন সেই চেন উধাও হয়ে গেছে।
জ্যোতি কুমারীর প্রশ্ন হলো, ২০ হাজার টাকা দামের মোবাইল হয়তো ছিটকে হারিয়ে যেতে পারে, তবে পকেটের মানিব্যাগ ও সোনার চেন কোথায় গায়েব হয়ে গেলো?
অপরদিকে কমল কুমারের ১৯ বছর বয়সী ছেলে বন্ধুদের সঙ্গে গিয়েছিলেন অনুষ্ঠান দেখতে। তবে কাঁধে করে যখন তার বন্ধুরা তার লাশ নিয়ে আসে তখন তার দামি মোবাইলের কোনো হদিসই ছিলোনা।
ছেলে এবং মেয়েকে নিয়ে রাবণ পোড়ানো দেখতে গিয়েছিলেন দীপক নামে স্থানীয় জনৈক ব্যক্তি। তার মেয়ে ফেরেনি, বাবা-ছেলে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন হাসপাতালের বেডে।
হাসপাতালে দীপক জানালেন, ট্রেনের ধাক্কায় নড়াচড়া তো দূরের কথা, সাহায্যের জন্য চিৎকারও করতে পারছিলাম না তখন। এর মধ্যেই একজন এসে পকেট হাতড়ে মোবাইল, টাকা-পয়সা যা কিছু ছিল, সব কিছুই নিয়ে চলে যায়।
সে এক বীভিষিকাময় দৃশ্য, চারদিকে শুধু লাশের স্তূপ। বাঁচার জন্য মানুষের আর্তনাদ, গোঙানি এবং আর্ত চিৎকার। এমন বিভৎস পরিস্থিতির মধ্যেও যে কেও এতোটা নিষ্ঠুর হতে পারে, তা এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না মৃতদের পরিজনরা। আবার দুর্ঘটনার পরও সেলফি তোলা, ভিডিও তোলা নিয়েও নানা প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।
ভারত অধ্যুষিত জম্মু কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ টুইটারে লিখেছেন যে, কি ভয়ানক অমানবিক এক দৃশ্য! দুর্ঘটনার পরও লোকজন দাঁড়িয়ে ছবি, ভিডিও এবং সেলফি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন! সত্যিই মানুষের মধ্যে থেকে মনে হয় মনুষত্ব উঠে যাচ্ছে!
দেখুন ভিডিওটি
https://www.youtube.com/watch?v=_tOu8iBGHDY