এই শীতের শুরুতেই ঘুরে আসুন মেঘের রাজ্য সাজেক ভ্যালি থেকে
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সাজেক ভ্যালিতে আমরা কেনো ঘুরতে যাই আমরা সবাই জানি। তাই বিস্তারিত আর না বলি। শুধুমাত্র একটা কথাই বলি। আপনি যদি অনবরত ডিপ্রেশনে ভুগে থাকেন, বা কোনো কারণে মন খারাপ হয়ে থাকে, নিত্যদিনের ঝুটঝামেলা যদি আর ভাল না লেগে থাকে, এই ইটপাথরের শহরে যদি দম আটকায় আসে তাহলে আমি বলবো কি আপনি সোজা সাজেকে চলে যান।
গিয়ে এক কাপ কফি নিয়ে বইসা পরেন মেঘ দেখতে। আমি গ্যারান্টি দিয়া বলতে পারি সাজেকের মেঘ আইসা আপনার গা ছুঁয়ে আপনার থেকে সমস্ত ডিপ্রেশন, মন খারাপ, সুইসাইডের চিন্তা বহুত বহুত দূর নিয়া চইলা যাইবো।
কিভাবে যাবো সাজেক ভ্যালিতে?
বাংলাদেশের যেকোনো জায়গা থেকে প্রথমে খাগড়াছড়ি আসে শাপলাচত্বরে নামবেন। যদি ঢাকা থেকে যান তাহলে হানিফ,শ্যামলী, সেন্টমার্টিন পরিবহণ আছে!ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে ছাড়ে। নন এসি-520 এসি-৯০০/১০০০
তারপর একটু সামনে আগাইলে একটা ব্রিজ পাবেন। ব্রিজ পাড় হইলেই দেখবেন অনেক চান্দের গাড়ি দাঁড়ায় আছে। ওইখানেই ওদের অফিস। ওইখান থেকেই ভাড়া করতে হবে সাজেক যাওয়ার জন্যে চান্দের গাড়ি।
ওইখানে দুই ধরণের গাড়ি আছে। (১)সবুজ রঙের চান্দের গাড়ি (২)সাদা রঙের জিপগাড়ি। চান্দের গাড়িতে বসতে পারবেন ১০/১২জন। জিপ গাড়িতে বসতে পারবেন ১৪/১৫জন।
চান্দের গাড়িতে সকালে সাজেক গিয়ে ওইদিন থাকে পরেরদিন সকালে খাগড়াছড়ি রওনা দিয়ে সারাদিন খাগড়াছড়ি’র টুরিস্ট স্পট গুলা(আলুটিলা গুহা,রিচাং ঝর্ণা, ঝুলন্ত ব্রিজ,পানছড়ি বৌদ্ধ বিহার ইত্যাদি) ঘুরতে চাইলে ভাড়া পরবে ৮০০০টাকা। আর শুধু সাজেকের ভাড়া ৫৫০০/৬০০০টাকা। সাদা জিপ গাড়ির ভাড়া পরবে ৯৫০০/৯৭০০টাকা।
পথিমধ্যে অবশ্যই “হাজাছড়া ঝর্ণা” দেখতে ভুলবেন না। আর ড্রাইভারের থাকা খাওয়ার খরচ ড্রাইভারের নিজের। এবং সাজেকের প্রবেশ মূল্য পার পারসন ২০টাকা আর গাড়ি রাখার জন্যে ১০০টাকা।
গ্রুপ ছোট হইলে CNGতেও যাইতে পারবেন “খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকে” ভাড়া ২৫০০/৩০০০। তবে অনেক বেশি রিস্কি হয়ে যায় কারণ সাজেকে যাওয়ার পথ অত্যাধিক ভয়াবহ।
কি কি মনে রাখবেন?
অবশ্যই মনে রাখবেন সাজেক আর্মি এলাকা তাই সাজেক যাওয়ার জন্যে নির্দিষ্ট দুইটা টাইমে গাড়ি ছাড়ে। প্রথমটা সকাল সাড়ে দশটার দিকে আর দ্বিতীয়’টা দুপুর আড়াইটার দিকে। সাড়ে দশটার পরে চান্দের গাড়ি যায় না সাজেকে আর আড়াইটার পরেও চান্দের গাড়ি যায় না সাজেকে। তাই আপনাকে যেতে হলে অবশ্যই এই দুইটা টাইমের মধ্যেই চান্দের গাড়ি ভাড়া করে রওনা দিতে হবে। সকালের টাইম মিস করলে দুপুরের টাইমে রওনা দিতে হবে। পথিমধ্যে কয়েকবার আর্মি ক্যাম্পে থামাবে। সাইন করতে হবে ওইখানে।
খাগড়াছড়ি থেকে পানি কিনে নিবেন কারণ সাজেকে পানির দাম অত্যাধিক।
সাজেকে প্যাকেজ অনুযায়ী খাবার বিক্রি করে। তাই আপনি যদি বাজেট কমাইতে চান তাহলে দুপুরের খাবার’টা খাগড়াছড়ি থেকে কিনে নিয়ে যাইতে পারেন।
ওইখানে বিভিন্ন দামে বিভিন্ন ধরণের রিসোর্ট পাবেন রাতে থাকার জন্যে। তবে যাওয়ার আগে অবশ্যই আগেই রিসোর্ট বুকিং করে যাবেন নতুবা গিয়ে রুম পাবেন না কারণ এখন টুরিস্ট সিজন চলতেছে।
সাজেকের রিসোর্টগুলা সম্পর্কে একটু আইডিয়া দেই। ওইখানে কোনো রিসোর্টের রুম ১৮০০/২০০০এর নিচে নাই। তাও মোটামুটি ধরণের!যদি রুমের বারান্দা/জানালা থেকে ভাল মতন মেঘ দেখতে চান তাহলে ২৫০০/৩০০০ এর মধ্যে ভাল রুম পাবেন। এক রুমে ইজিলি ৪/৫জন শেয়ার করে থাকতে পারবেন।
মেঘ দেখতে চাইলে ফযরের আযানের সময় উঠে হেলিপ্যাড বা কংলাক পাহাড়ে চলে যাবেন।
সাজেকে বিদ্যুৎ নাই। সোলার সিস্টেম সব!নির্দিষ্ট টাইমে সব হোটেলেই জেনারেটর ছাড়ে, ওই সময় মোবাইল চার্জ দিতে পারবেন। তবে ইচ্ছা মতন ছবি টবি তুলতে চাইলে পাওয়ার ব্যাংক রাখতে পারেন।
সাজেকে grameenphone এর নেটওয়ার্ক পায় না। শুধুমাত্র রবি একদম 4G পায়
খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক যাইতে সময় লাগবে আড়াই ঘন্টার মতন।
সকালে খাগড়াছড়ি নামে তখনি যেদিন ঢাকা ফিরবেন ওইদিনের রিটার্ন টিকেট কাটে ফেলবেন। কারণ বাস সংখ্যা কম+টিকেট পাওয়া যায় না সহজে।
“খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক” অনেক আঁকাবাঁকা পাহাড়ি থ্রিলিং পথ, তাই সাবধানে থাকবেন।
সাজেক যাইতে চাইলে এখনি চলে যান। কয়েকদিন পরে গেলে আর পারফেক্ট ভিউ’টা পাবেন না।
বিঃদ্রঃ সাজেকে গিয়ে দেখি সবাই যেখানে সেখানে বোতল, ওয়ান টাইম চায়ের কাপ,ডাব এখানে ওইখানে ফেলায় রাখছে। অনেকে আবার মেঘের উপরে বোতল ছুড়ে মারতেছে নিচে। এই দেশটাতো আমাদের। আর এইসব জায়গা আমাদের দেশের সম্পদ। তাই আসুন কেউ ট্রাভেলিংয়ে গিয়ে ময়লা যেখানে সেখানে না ফেলি। সবাই মিলে দেশটাকে সুন্দর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে গড়ে তুলি।
This post was last modified on অক্টোবর ২৭, ২০১৮ 9:40 পূর্বাহ্ন