দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ যাকে এক কথায় বলা যায়, রহস্যময় সভ্যতার এক রহস্যময় শহর মাচু পিচু। পৃথিবীর ইতিহাসে সমৃদ্ধতম, বিখ্যাত এবং অদ্ভুত সব রীতিনীতির ধারক হিসেবে পরিচয় বহন করে এই ইনকা সভ্যতা (Inca Civilization)।
এই ইনকাদের হারিয়ে যাওয়া একটি আধুনিক এবং ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন শহর হলো মাচু পিচু (Machu Picchu)। যা বর্তমান বিশ্বে সপ্তাশ্চর্যের একটি। কেও কেও এটিকে সূর্যনগরীও বলে থাকেন। মূলত স্প্যানিশ ভাষায় এই শব্দটিকে এভাবে উচ্চারণ করা হয় ‘মাত্সু পিৎসু’। যার প্রকৃত অর্থ হলো প্রাচীন চূড়া। তবে মাচু পিচুই উচ্চারণের ক্ষেত্রে অধিক প্রচলিত। ইতিহাসবিদদের গবেষণায় এই শহর সম্পর্কে অজানা অনেক তথ্য উঠে এলেও বহু রহস্য এখন পর্যন্ত অজানায় রয়ে গেছে।
পেরুতে অবস্থিত মাচু পিচু শহর। এটি ইনকা সভ্যতার সবচেয়ে আলোচিত নিদর্শন, যাকে বলা হয়, ‘ইনকাদের হারানো শহর’। আন্দিজ পর্বতমালা পেরুর অংশের দিকে একটি পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত ইনকাদের সেইসব হারানো শহর হলো মাচু পিচু।
বর্তমানে অবশ্য গোটা পাহাড়টিরই নাম হয়ে গেছে মাচু পিচু। সেখানকার শহরটি ছিল একটি সুপরিকল্পিত নির্মাণ এবং এর অবস্থান ছিল অত্যন্ত সুরক্ষিত। অন্যদের পক্ষে এই শহরটি খুঁজে পাওয়া যেমন দুষ্কর ছিলো, তেমনি খুঁজে পাওয়ার পর শহরটিতে আক্রমণ করতে গেলেও কেও খুব একটা সুবিধা করতে পারবে না। এর কারণ হলো ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে প্রাকৃতিকভাবেই শহরটি বেশ নিরাপদ শহর ছিল। সেজন্য শহরটি ইনকাদের প্রাচীন দুর্গনগরী নামেও অধিক পরিচিত।
এই মাচু পিচু শহরটি সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে প্রায় ২,৪০০ মিটার (৭,৮৭৫ ফুট) উঁচুতে অবস্থিত। অর্থাৎ আমাদের দেশের সর্বোচ্চ চূড়া তাজিন ডং (১২৩১ মিটার) এর প্রায় দ্বিগুণ উচ্চতায় অবস্থিত এই মাচু পিচু শহরটি। এতো উঁচুতে কীভাবে তারা এই শহরটি নির্মাণ করেছিল সেটাই সবথেকে এক বড় রহস্য। তাও শত শত বছর পূর্বে; যখন কিনা ইনকাদের মধ্যে চাকার ব্যবহার প্রচলিতই ছিল না। তাহলে এতো উঁচুতে পাথর উঠিয়েছিল তারা কিভাবে! যা দিয়ে এই শহর নির্মাণ করা হয়! ধারণা করা হয় যে, শত শত শ্রমিক পাহাড়ের ঢালু স্থান দিয়ে ঠেলে নিয়ে গিয়েছিল এই সব পাথর।
এই শহরটিতে ১৪০টি স্থাপনার মধ্যে এখনও সবকটিই টিকে রয়েছে। এটি নির্মাণ করতে কোনো প্রকার সিমেন্ট বালুর ব্যবহার না করা হয়নি। যে কারণে ভূমিকম্পেও এর কোনোপ্রকার ক্ষতি হয়নি। এটি নির্মাণ করতে প্রয়োগ করা হয় সমসাময়িক কালের সবথেকে সূক্ষ্ম ও বিখ্যাত বাস্তুবিদ্যার একটি কৌশল!
এখানে বিভিন্ন স্থাপনার মধ্যে রয়েছে মন্দির, পবিত্র স্থান, উদ্যান ও আবাসিক ভবনসমূহ। মাচু পিচুতে রয়েছে ১০০টিরও বেশি সিঁড়ি, যার মধ্যে কিছু সিঁড়ি নির্মিত হয়েছে আবার মাত্র একটি গ্রানাইট পাথরের খণ্ড দিয়ে। আরও রয়েছে প্রচুর সংখ্যক ঝরনা, যেগুলো পাথর কেটে তৈরি করা হয় ছোট ছোট খালের মাধ্যমে পরস্পর সংযুক্ত। এসব মূলত সেচ কাজে ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয়। এই সেচব্যবস্থা ব্যবহার করে একটি পবিত্র ঝরনা থেকে প্রতিটি বাড়িতে পানি সঞ্চালনের ব্যবস্থা করা হয়।
প্রায় ১৪৫০ সালের দিকে মাচু পিচু নির্মিত হয়েছিলো। তবে তা খুব বেশিদিন ভোগ করতে পারেনি ইনকারা। ১০০ বছর পরে স্প্যানিশরা ইনকা সভ্যতা আক্রমণ করে বসে। তখন ধ্বংস করে ফেলে বেশির ভাগ শহর। তবে মাচু পিচু শহরটি গুপ্ত স্থানে হওয়ার কারণে তারা এটি খুঁজেই পায়নি! মানুষের উপস্থিতি না থাকার কারণে শহরটি ধীরে ধীরে পরিত্যক্ত হয়ে যায়। কয়েকশ বছর ধরে মানুষ এই ঐতিহাসিক শহরটি খুঁজেই পায়নি। তারপর ১৯১১ সালে হাইরাম বিংহাম নামে জনৈক মার্কিন পুরাতত্ত্ববিদ এই মাচু পিচু শহরটি আবিষ্কার করেন।
তারপর ধীরে ধীরে মাচু পিচু পর্যটকদের কাছে একটি আকর্ষণীয় দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়। এটিকে পেরু সরকার ১৯৮১ সালে সংরক্ষিত ঐতিহাসিক এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে। তারপর ১৯৮৩ সালে ইউনেস্কো এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের মর্যাদা দেয়।
This post was last modified on ডিসেম্বর ১৯, ২০১৮ 1:20 অপরাহ্ন
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুভ সকাল। শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪ খৃস্টাব্দ, ৩০ কার্তিক ১৪৩১…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ অনেকই সুজি খেতে খুবই ভালোবাসেন। তাই তারা প্রতিদিন সুজির পায়েস,…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ প্রথমবারের মতো প্যান ইন্ডিয়ান চলচ্চিত্র বানিয়েছেন নির্মাতা অনন্য মামুন। ঢালিউড…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আপনার যদি প্রতিদিন চিকেন খাওয়ার অভ্যাস থাকে, তাহলে জেনে রাখুন,…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ কোটা সংস্কার আন্দোলনের সংগঠন ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’- এর অন্যতম সমন্বয়ক…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নবনিযুক্ত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারণায় প্রতিশ্রুতি দেন…