দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সৌদি হতে পালিয়ে কানাডায় আশ্রয় নেওয়া সেই তরুণী এবার নিজের নাম পরিবর্তন করলেন। তার নাম ছিলো রাহাফ মোহাম্মদ আল কুনুন। এই নামের শেষাংশের আল কুনুন ফেলে দিয়ে এখন থেকে তার নাম হবে রাহাফ মোহাম্মদ।
গত পরশু (মঙ্গলবার) কানাডার টরোন্টো শহরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নিজের নাম বদলের ঘোষণা দিয়েছেন কানাডায় শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেওয়া ওই সৌদি তরুণী।
সম্মেলনে তিনি জানান, আমি প্রথমেই আপনাদের ধন্যবাদ জানাতে চাই, আমি সৌভাগ্যবতীদের একজন। আমি জানি যে, সৌদি আরবে অনেক দুর্ভাগা নারী রয়েছেন; যারা পালাতে গিয়ে গুম হয়েছেন বা তারা বাস্তবতার পরিবর্তন ঘটানোর জন্য কোনো কিছুই তারা করতে পারেননি।
জানা গেছে, পারিবারিক ভ্রমণে পাশের দেশ কুয়েত গেলে সেখান থেকে পালিয়ে থাইল্যান্ডে চলে আসেন ১৮ বছর বয়সী এই তরুণী। যে কারণে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ব্যাপক ঝড় ওঠে। পরে ব্যাংককের একটি হোটেলে নিজেকে অবরুদ্ধ করে রাখেন এই তরুণী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে একটি অ্যাকাউন্ট খোলার পর সৌদিতে ফিরে গেলে পরিবারের সদস্যদের হাতে প্রাণনাশের আশঙ্কা প্রকাশ করে টুইট করতে থাকেন রাহাফ মোহাম্মদ আল কুনুন।
টুইটে রাফাত মোহাম্মদ আল কুনুন বলেন, পরিবারের সদস্যরা তাকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন ও তাকে নির্যাতন করেছেন। শুধু তাই নয়, তারসঙ্গে দাসীর মতো আচরণ করা হচ্ছে বলে জানান। তার এই আকুতি বহু মানবাধিকার কর্মী ও জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার নজরে আসে। তিনি প্রথমে অস্ট্রেলিয়ায় আশ্রয় নেওয়ার চিন্তা করেন। পরবর্তীতে কানাডা সৌদির এই তরুণীকে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় দেওয়ার ঘোষণা দেয়।
রাহাফ মোহাম্মদ আল কুনুনকে স্বাগত জানান কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড
তারপর শনিবার টরোন্টো পৌঁছানোর পর রাহাফ মোহাম্মদ আল কুনুনকে স্বাগত জানান কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড। গণমাধ্যমের সামনে তাকে ‘প্রচণ্ড সাহসী নতুন কানাডীয়’ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
সৌদির এই তরুণীর আশ্রয়, মানবাধিকার কর্মীদের বিরুদ্ধে সৌদি আরবের সাম্প্রতিক ধরপাকড় এবং মানবাধিকারের রেকর্ড ঘিরে অটোয়া ও রিয়াদের মধ্যে কূটনৈতিক সঙ্কট শুরু হয়েছে। এমনিতেই সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রচণ্ড চাপের মুখে রয়েছে সৌদি আরব। এরমধ্যে আবার ধর্ম ত্যাগ করে ওই কিশোরীর দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া নিয়ে নতুন করে সঙ্কটের মুখোমুখি হয়েছে সৌদি আরব।
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এএফপি’র খবরে বলা হয়েছে, অস্ট্রেলিয়ার একটি সরকারি গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রাহাফ মোহাম্মদ বলেন, ‘আমি মনে করি সৌদি প্রশাসনের নিপীড়ন হতে বাঁচতে পালানো নারীর সংখ্যা আরও বাড়বে। আমি নিশ্চিত, আরও অনেক নারীই সৌদি হতে পালাবেন। আমি আশা করছি, আমার এই গল্প এখন থেকে অন্য নারীদের সাহসী ও স্বাধীন হতে আরও উৎসাহিত করবে।