দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মিস কল দেখলে অনেকেই বিরক্ত হয়ে ওঠেন। সেটিই খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু কখনও কখনও এই মিস কলই আবার বড় কোনো প্রাপ্তি ঘটাতে পারে। যার প্রমাণ হলো এই মিস কলই এবার হারানো মা-মেয়েকে এক করলো!
মিস কলে কেওবা বিরক্ত হয়ে মোবাইল ফোনটির সুইচও অফ করে দেন। তবে এরকম একটি মিস কলই এবার ফিরিয়ে দিলো হারানো মেয়েকে। মা খুঁজে পেলেন তার নিজ সন্তানকে, যে সন্তান বহুদিন ধরে নিখোঁজ ছিল।
মিস কলের সুবাদে গত সপ্তাহে মেয়েটিকে মুম্বাইয়ে কুরলা এলাকার জরিমরি বস্তি হতে উদ্ধার করেছে ভারতের গোয়েন্দারা। পরে জানতে পারা যায় তাকে সেখানে জোর করে আটকে রাখা হয়েছিল। চলেছে নানা শারীরিক নির্যাতনও।
ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিলো সেই ২০১০ সালের আগস্ট মাসে। রাকেশ নামে এক যুবকের সঙ্গে ঘর বাঁধার আশায় বাড়ি হতে পালিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের সোনারপুরের ওই মেয়েটি। মুম্বাই নিয়ে যাবে বলে শিয়ালদহ রেল স্টেশন হতে তাকে ট্রেনে তোলে রাকেশ। মাঝপথেই মেয়েটি তার ভুল বুঝতে পারে। ট্রেনে ওঠার পরই রাকেশের মতিগতি খুব একটা ভালো ঠেকে না তার কাছে। সে বুঝতে পারে নারী পাচারকারীর খপ্পরে পড়েছে। অবশেষে পানি আনতে যাওয়ার কথা বলে মুম্বাই স্টেশনে ট্রেন থামা মাত্রই ট্রেন থেকে পালায় মেয়েটি। রাকেশকে ফাঁকি দিয়ে স্টেশনের ওয়েটিং রুমে সে আশ্রয় নেয়। সেখানে তারসঙ্গে পরিচয় ঘটে এক মহিলার। বাড়িতে পরিচারিকার কাজ দেওয়ার নাম করে ওই মহিলা তাকে কুরলায় নিয়ে যায়। তারপর তাকে মনীশ নাইয়া নামে জনৈক যুবকের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, সেখানে প্রায় দেড় বছর ধরে ওই কিশোরীর ওপর শারীরিক নির্যাতন চলে।
সিআইডির এক তদন্তকারী অফিসার জানিয়েছেন, গত শনিবার কিশোরীর মায়ের মোবাইলে একটি মিসড কল আসে। প্রথমে ওই মিস কলের পাত্তা না দিলেও ঘণ্টা খানেক পর সেই নম্বরে ফোন করেন ওই মেয়েটির মা। ফোনে তিনি তার হারানো মেয়ের গলা শুনেই চিনতে পারেন। তবে দুই একটি কথা বলার পরই লাইনটি কেটে যায়। এরপর আত্মীয়স্বজনদের সহযোগিতায় কল সেন্টারের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন ফোনটি এসেছিল মুম্বাই হতে। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের সহযোগিতা নেন তিনি। পুরো ঘটনা খুলে বলেন পুলিশকে, তারপর মিসিং পারশনস স্কোয়াডের একটি দল মুম্বাই রওনা হয়।
তবে পুলিশ যখন সেই নম্বরে ফোন করে, দেখা যায় যে সেটি বন্ধ রয়েছে। মুম্বাই পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চের সহযোগিতায় গোয়েন্দারা কুরলার ঠিকানা জোগাড় করে ফেলেন। তারপর ৩ ঘণ্টা অভিযানের পর সেখানে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের বাড়ি হতে মেয়েটিকে উদ্ধার করা হয়।
পরে যানা যায় যে, শনিবার মনীশ নাইয়া নামে যুবকটিকে ফাঁকি দিয়ে ঘরে রাখা একটি মোবাইল ফোন হতে কল করেছিল তার মাকে। তবে মনীশের উপস্থিতি টের পেয়ে ফোনের লাইনটি কেটে দেয় মেয়েটি। ততোক্ষণে মায়ের কাছে কলটি পৌঁছায় মিস কল হয়ে। এই মিস কলের কল্যাণে ফের ফিরে পেলো মা তার মেয়েকে।
জানা যায়, মেয়েটির বাবা একজন সাধারণ ভ্যানচালক। তিনি ২০১০ সালেই মেয়ের নিখোঁজের সংবাদটি সোনারপুর থানায় লিপিবদ্ধ করেছিলেন। তবে সে সময় পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। গত বছর নিখোঁজের পরিবার কোলকাতা হাইকোর্টে রিটও করে। হাইকোর্ট সিআইডিকে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেয়। এখন মেয়েটিকে আদালতে তোলা হবে। মনীশের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির দাবি জানানো হবে।