দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ জনপ্রিয় মডেল ও টিভি অভিনেত্রী মিতা নূরের মৃত্যুর নেপথ্যে স্বামী ছাড়া আর কারো প্ররোচণা রয়েছে কিনা বা এটি হত্যা না আত্মহত্যা সে রহস্য এখনও অনুদঘাটিত রয়েছে।
মিতা নূরের মৃত্যুর ঘটনাটি হত্যা না আত্মহত্যা- তা নিশ্চিত নয় পুলিশও। তবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোঃ সোহেল মাহমুদ গতকাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে এটা আত্মহত্যা। মিতা নূরের রিপোর্ট (ভিসেরা) আসতে আরো এক মাস সময় লাগতে পারে। পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট আসার পরই জানা যাবে এটা হত্যা না আত্মহত্যা।
এদিকে পুলিশের গুলশান জোনের ডিসি লুৎফুল কবির সাংবাদিকদের জানান, পরিবারের পক্ষ থেকে আত্মহত্যায় প্ররোচণার অভিযোগ পাওয়া গেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। তথ্যসূত্র: দৈনিক ভোরেরর কাগজ।
এদিকে মিতা নূরের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে পেয়েই কাজ শুরু করেছেন অপমৃত্যু মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার এসআই আনোয়ারা আক্তার। গতকাল সকালে রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর পরই গুলশান ২-এর ১০৪ নম্বর রোডের ১৬ নম্বর হোল্ডিংয়ের ‘প্রাসাদ লেকভ্যালি’ অ্যাপার্টমেন্টের ৬ তলার বাসার বি-৫ ফ্ল্যাটে যান তিনি। এ সময় মিতা নূরের বাবা তার দুই সন্তান এবং স্বামী বাসায়ই ছিলেন। মিতা নূরের স্বামী শাহানূর রহমান রানার কাছে তদন্ত কর্মকর্তা জানতে চান, সম্প্রতি আপনাদের সঙ্গে দাম্পত্য কলহ কী কী কারণে হয়েছে?
এ সময় রানা তদন্ত কর্মকর্তাকে জানান, বেশ কয়েকদিন ধরেই মিতা নূর বিষণ্ন থাকতো, মন খারাপ করে শুয়ে থাকতো। জিজ্ঞাসা করলে কিছু বলতো না। তার জীবনের সমস্ত ঘটনা সে আমার সঙ্গে শেয়ার করলেও এক্ষেত্রে আমাকে কিছুই জানায়নি। এজন্য কি কারণে সে আত্মহত্যার মতো এতোবড় সিদ্ধান্ত নিলো আমার পক্ষে সেটা বলা সম্ভব নয়।
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঝগড়া প্রসঙ্গে রানা বলেন, দুদিন আগে আমাদের একসঙ্গে একটি পার্টিতে যাওয়ার কথা ছিল। অফিসিয়াল কাজের জন্য আমি সেখানে যেতে পারিনি। এ নিয়ে গত শনিবার বিকাল ৪টার দিকে সে আমার নিকেতনের অফিসে যায়। আমি কেন পার্টিতে যেতে পারিনি সে ব্যাপারে আমার সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়। বাগ্বিতণ্ডার এক পর্যায়ে খবর পেয়ে পুলিশ এলে মিতা আমার বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দেয়। এর কিছুক্ষণ পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমরা দুজন একসঙ্গে বাইরে রাতের খাবার খেয়ে বাসায় ফিরি। এরপর গত দুদিন আমাদের মাঝে আর কোনো ঝামেলা হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।
মিতা নূরের স্বামী আরো বলেন, গত রোববার আমি অফিসের কাজের চাপে বড় ছেলেকে ফোন করে বলেছি যে, রাতে ফিরতে পারবো না। কিন্তু দুপুর ৩টার দিকে আমি সিদ্ধান্ত বদলে বাসায় আসি। বাসায় আসার সময়ই আমি সিঁড়িতে বেশ কিছু ঘুমের ওষুধের খালি প্যাকেট পড়ে থাকতে দেখি। ঘুমের অসুবিধা হলে মাঝে মাঝেই আমরা ওষুধ খাই। এজন্য ব্যাপারটিকে আমি তেমন গুরুত্ব দেইনি।
রানা আরও বলেন, আমরা সবাই একসঙ্গে খাবার খেয়ে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত আমি আমার ছেলের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গল্প করি। এরপর আমি আর মিতা ঘুমিয়ে পড়ি। সকাল সাড়ে ৬টায় আমার ঘুম ভাঙলে দেখি আমার ছোট ছেলে স্কুলে যাওয়ার জন্য ব্যাগ গোছাচ্ছে। এ সময় আমি তার মার কথা জিজ্ঞাসা করলে সে বলে যে, ঘুম থেকে উঠে সে তাকে দেখেনি। এরপর আমি ড্রইংরুমে ফ্যানের সঙ্গে তার ঝুলন্ত লাশ দেখতে পেয়ে গুলশান থানা পুলিশকে খবর দেই।
এদিকে পুলিশের একটি সূত্র বলেছে, মিতা নূরকে হত্যা করা হয়নি। তিনি আত্মহত্যা করেছেন। এটা শতভাগই নিশ্চিত। তবে এ ক্ষেত্রে আত্মহত্যায় প্ররোচণা রয়েছে। মিতা নূরের বাবা অপমৃত্যু মামলা করে থাকলেও তার মনেও সন্দেহ জেগেছে আত্মহত্যা নিয়ে। সিআইডি পুলিশের ভিসেরা রিপোর্টে হত্যার কোনো আলামত পাওয়া গেলে সেক্ষেত্রে হয়তো তিনি মামলা করতে পারেন।