যে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অদম্য ভারতকে দেখেছিলো ক্রিকেট বিশ্ব সেই তারা যেনো ট্রাই নেশন সিরিজে এসে নিজেদের খুঁজেই পাচ্ছিলো না। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে লড়াই করে ১ উইকেটে হারের পর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৬১ রানের বিশাল পরাজয়ের পর ভারতকে পড়তে হয় সমালোচনার মুখে। ধোনি’র অনুপস্থিতিতে অধিনায়কত্ব করা কোহলি বলেছিলেন পরের দুই ম্যাচে ফিরে আসবে ভারত। নিজের কথা রাখলেন তিনি, সেই সাথে দলের জয়ে ব্যাট হাতে নেতৃত্বও দিলেন তিনি। তাঁর অসাধারণ সেঞ্চুরিতে ভারত পায় সিরিজে টিকে থাকা’র জন্য প্রয়োজনীয় ১০২ রানের জয়। কোহলিও করেছেন ১০২ রানের সেঞ্চুরি!
টসে জিতে ভারতকে ব্যাট করতে আমন্ত্রণ জানায় উইন্ডিজ। নিচু ঘাসের পিচে ভারতকে ব্যাট করতে পাঠানোটা অধিনায়ক ডোয়াইন ব্র্যাভো’র জন্য সঠিক সিদ্ধান্তই ছিলো, কিন্তু ভারতীয় ওপেনার রোহিত শর্মা এবং শিখর ধাওয়ান শুধু হতাশই করেন উইন্ডিজ বোলারদের। প্রথম উইকেটের জন্য উইন্ডিজকে ২৩ ওভার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়, কিন্তু ততক্ষণে ওপেনিং জুটিতে ভারত তুলে ফেলেছে ১২৩ রান। এই জুটি’র ওপর ভিত্তি করেই কোহলি বেশ দ্রুত সেঞ্চুরি তুলে ভারতকে ৩০০ ছাড়ানো স্কোর এনে দেন।
শিখর ধাওয়ান অফসাইডে তার ব্যাটিং কৃতিত্ব দেখান এই ম্যাচে, যেখানে বেশী রান তুলে বোলারদের শাসন করেছেন তিনি। তাঁর দৃষ্টিনন্দন স্কয়ার ড্রাইভের দেখাও মেলে এই ম্যাচে যেটা শ্রীলঙ্কা কিংবা এর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচের বিপক্ষে অনুপস্থিত ছিলো। একপাশে যখন ধাওয়ান রান তুলছিলেন তখন অন্যপাশে দারুণ সমর্থন দিয়ে গেছেন রোহিত শর্মা। ধাওয়ানের মতো দ্রুত হতে না পারলেও তিনি উইকেট ধরে রাখা’র ব্যাপারে মনোযোগী ছিলেন বেশ!
কেমার রোচের বলে ডীপ মিড উইকেটে ধাওয়ানের ক্যাচ ধরেন ড্যারেন ব্র্যাভো, যে ভিত্তি ধাওয়ান গড়ে দিয়ে গেলেন সেখান থেকে মাত্র ৪৫ রানে আরও ৩ উইকেট পড়ে গেলে কিছুটা চাপেই পড়ে যায় ভারত। কেমার রোচ এবং টিনো বেস্টের মিলিত বোলিং আক্রমণ উইন্ডিজকে ম্যাচে ফেরাতে সাহায্য করে, তবে এটা খুবই কম সময়ের জন্য। কারণ এরপরেই ভারত পায় কোহলি’র অনবদ্য সেঞ্চুরি’র পথে আগানো একটি ইনিংস।
প্রয়োজনীয় সময়ে কোহলি-বিজয় পাওয়ার প্লে থেকে দলকে এনে দেন ৪২ রানের একটি ছোটো কিন্তু কার্যকর জুটি। উইন্ডিজ বোলাররা বাউন্স দিয়ে ব্যাটসম্যানদের ভড়তে দেবার চেষ্টা করলেও তাতে উল্টো ফল হয়েছে। কোহলি সেগুলোকে সীমানা ছাড়া করেছেন দারূণ টেকনিকের সাহায্যে, সাথে মুরলি বিজয় কিছু খারাপ বল পেয়ে সেগুলোও চারে রূপান্তর করেছেন। ফলে তাঁর ব্যাট থেকে আসে ১৮ বলে ৫টি চারের সাহায্যে ২৭ রানের একটি ইনিংস।
পোলার্ডের বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে চার্লসের বলে ক্যাচ তুলে দেন বিজয়, এর পরপরই রনা আউটের ফাঁদে পড়েন রবীন্দ্র জাদেজা। দলীয় রান তখন ২২১, ৬ উইকেটের বিনিময়ে। জাদেজা’র রান আউটের পড়ে উইন্ডিজের আশা ছিলো ভারতকে হয়তো ২৫০ এর ভেতরেই বেঁধে ফেলা সম্ভব হবে, কিন্তু আবারও হতাশ করেন অশ্বিন এবং কোহলি জুটি। একপাশে উইকেট পড়লেও, অন্যপাশে রানের চাকা ঠিকই ধরে রেখেছিলেন কোহলি। তাঁর সাথে যোগ দেন ভারতীয় পেসার রবি অশ্বিন। ১৮ বলে ২৫ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে কোহলিকে যোগ্য সমর্থনই দিয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে ৮৩ বলে ১০২ রান তুলে কোহলি ভারতকে এনে দেন ৩১১ রানের বড় সংগ্রহ! নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারায় ভারত, এর ভেতর উইন্ডিজ বোলারদের উদারতায় অতিরিক্ত হিসেবে এসেছে ২৪ রান। টিনো বেস্টের ২ উইকেট ছাড়াও, রোচ, ড্যারেন ব্র্যাভো, মারলন স্যামুয়েলস এবং পোলার্ড ১টি করে উইকেট লাভ করেন।
রান তাড়া করতে নেমে ক্রিস গেইলকে খুব দ্রুতই হারিয়ে ফেলে উইন্ডিজ, ফলে বড় সংগ্রহ দিয়ে শুরু করার আশা ফিকে হয়ে যায় উইন্ডিজের। গত দুম্যাচ হারিয়ে খোঁজার পর এ ম্যাচে নিজেদের ফিরে পেলেন ভুবনেশ্বর কুমার এবং যাদব। ৩ উইকেট নিয়ে উইন্ডিজ টপ অর্ডার একাই ভেঙে দিয়েছেন কুমার, অন্যদিকে লোয়ার অর্ডারে ৩ উইকেট নিয়ে উইন্ডিজের পরাজয় ত্বরান্বিত করেন যাদব। মিডল অর্ডারে ২ উইকেট নিয়ে পরাজয়ের আগে পঙ্গু করে দেন ইশান্ত শর্মা, বাকী ২ উইকেট লাভ করেন জাদেজা।
১৩ বলে ১০ রান তুলে কুমারের বলে স্টাম্পড হন ক্রিস গেইল। এরপরই শুধু আসা যাওয়ার মিছিলে শামিল হয় উইন্ডিজ ব্যাটসম্যানেরা। তবে এর মাঝেও স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে জনসন চার্লিস করেন ৩৯ বলে ৪৫ রান। যে উইকেটে একটু আগেই ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা পিটিতে রান তুলেছে সেখানেই উইন্ডিজকে দেখা গেলো রান তোলার প্রাণান্তকর চেষ্টা করতে! ১১৩ রানেই ৮ উইকেট হারিয়ে পরাজয় নিশ্চিত করে উইন্ডিজ।
তবে এরপর রোচ-নারাইনের ৩৮ রানের জুটি ভারতকে চূড়ান্ত জয়ের অপেক্ষায় রাখে। উইন্ডিজ ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার দিনে লোয়ার অর্ডারে এই দু’বোলার করেন যথাক্রমে ৩৪ এবং ২১ রান। জাদেজা টানা দুই বলে এদের উইকেট তুলে নিলে শেষ হয় ভারতের অপেক্ষা, ১০২ রানের বিশাল জয় নিয়ে সিরিজে টিকে থাকলো ভারত। সেঞ্চুরি করে দলকে জেতানোয় ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার যায় কোহলির হাতে।