দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বিছানার চাদর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখাটা তত্যন্ত জরুরি একটি বিষয়। আমরা দিনের এক তৃতীয়াংশ সময়ই পার করি বিছানায়। তাই নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশংকাও বহুগুণে বেড়ে যায়।
নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশংকার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যেতে শুরু করে। যে কারণে অ্যাজমা, কাশি, হাঁচি, রাইনাইটিস, অ্যালার্জি, একজিমা (অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস) নানা রোগের প্রকোপ বাড়ে। তাই সাবধান হওয়াটা অত্যন্ত জরুরি।
তাছাড়া বিছানার চাদরে থাকা বিভিন্ন রোগ জীবাণু হতে বাঁচতে বিশেষজ্ঞরা কিছু পরামর্শও দিয়েছেন। এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে, বিছানার চাদর পরিষ্কার আছে কিনা তার সঙ্গে শরীর সুস্থ থাকার সম্পর্কটা আসলে কী?
নানা ক্ষতিকর উপাদান ও রোগ জীবাণু বাসা বানায় বিছানার চাদরে, যা শরীরের পক্ষে একেবারেই অস্বাস্থ্যকর বিষয়। এর মধ্যে একটি হলো ডাস্ট মাইটস।
এর প্রমাণ পেতে হলে আপনি যদি কোনো দিন আপনার বেড শিট মাইক্রোস্কোপের নিচে রাখেন তাহলে আপনার মাথা ঘুরে যাবে। কারণ খালি চোখে দেখা না গেলেও বিচানার চাদরে কোটি কোটি ডাস্ট মাইটস ও এক ধরনের ছোট ছোট পোকা থাকে, যা আমাদের ত্বকের মৃত কোষ খেয়েই বেঁচে থাকে।
এরা যদি কোনো কারণে একবার বিছানার চাদরে জন্ম নেয়, তাহলে অল্প সময়ের মধ্যেই এদের সংখ্যা লক্ষাধিকে গিয়ে পৌঁছাতে পারে। এমন ক্ষতিকর পোকার সংখ্যা যতো বৃদ্ধি পাবে, ততো আমাদের শরীর খারাপ হওয়ার আশংকা বাড়তে থাকবে।
এ থেকে নিস্তার পেতে হলে অবশ্যই প্রতিদিন পরিষ্কার বেড শিট বিছানায় রাখাটা অত্যন্ত জরুরি। ব্যবহৃত চাদরটি অবশ্যই ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে। পরিস্কার চাদর ব্যবহার করলে তবেই রক্ষা পাওয়া যাবে এই সব পোকার হাত থেকে।
তাছাড়া বিশেষজ্ঞদের মতে, বিছানার চাদরে আরও কী কী ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে আসুন সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক:
মৃতকোষ
আপনি প্রতিদিন যদি পরিষ্কার চাদরে না শোন, তাহলে আপনার বিছানাটি কোটি কোটি মৃত কোষে ভরে যায়। এমনটা হলে পোকা মাকড়ের পাশপাশি নানা ধরনের ক্ষতিকর জীবাণুর সংখ্যাও বৃদ্ধি পেতে থাকে। কারণ হলো আমাদের শরীরের মৃতকোষগুলি পোকাদের পছন্দের খাবার। যে কারণে সুস্বাদু খাবারের লোভে এই সব পোকা এসে ভিড় করে বিছানার চাদরে। যে কারণে আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ি।
তেল
ঘুমনোর সময় আমাদের শরীর হতে এক ধরনের তেল নি:ষ্কৃত হয়, যা বিছানার চাদরে লাগে। অপরিষ্কার চাদরে এই তেল লাগতে লাগতে চাদরটা আরও অপরিষ্কার হয়ে পড়ে।
ঘাম
গরমকালে ঘুমনোর সময় আমরা প্রচুর ঘেমে থাকি। এক সময় সেই ঘাম বিছানার চাদরে লেগে যায়। এতে করে চাদর হতে বাজে গন্ধ বের হয়। সেই সঙ্গে সেখানে নানাবিধ ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ারও জন্ম নিতে পারে, যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হতে পারে।
খাবারের টুকরো
আমরা অনেক সময় বিছানায় বসে খাবার খাই। যে কারণে খাওয়ার সময় বিছানা নোংরা হয়। যদি সেই নোংরা চাদর পরিষ্কার করা না হয়, তাহলে বিছানা হয়ে ওঠে পোকা মাকড়ের রাজ্য। আপনিতো জানেন, পোকা-মাকড় কখনই আমাদের বন্ধু হতে পারে না।
# আমাদের পক্ষে প্রতিদিন বিচানার চাদর ধোয়া সম্ভব নয়। তাই প্রতি দু’দিন অন্তর অন্তর নতুন চাদর পাতুন। অর্থাৎ সপ্তাহের শেষে আপনাকে মোট ৩টা চাদর আপনাকে ধুতে হবে। এই ব্যবহৃত চাদরে শুতে যাওয়ার আগে মনে করে চাদরটি অবশ্যই ভালো করে ঝেড়ে আবার পাড়ুন।
# শুধু চাদরই নয়, আপনাকে বালিশও পরিষ্কার রাখতে হবে। তবে চাদরের মতো সপ্তাহে সপ্তাহে সেটি না কাচলেও চলবে।
# অসুস্থ ব্যক্তির বিচানার চাদর প্রতিদিনই পরিবর্তন করতে হবে। এমনটা করলে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার কারণে রোগীর আরও অসুস্থ হয়ে পড়ার কোনো আশংকা থাকবে না।
# এক গবেষণায় দেখা গেছে, অনেকেই সঠিক পদ্ধতিতে বিছানার চাদর কিংবা বালিশ ধোয় না। যে কারণে ধোয়ার পরেও ডাস্ট মাইটস এবং ব্যাকটেরিয়া থেকেই যায়। তাই গরম পানিতে কাপড় কাচা সাবান কিংবা পাউডার মিশিয়ে চাদর ধুয়ে ফেলতে হবে। ধোয়ার পর চাদর ভালো করে শুকিয়ে নিতে হবে।
# জামা কাপড়ের সঙ্গে কখনই বিছানার চাদর ধোওয়া যাবে না। এটি পৃথকভাবেই ধুতে হবে।
# সাদা বিছানার চাদর ভালো করে পরিষ্কার করতে সাবান পানিতে হাফ কাপ লেবুর রস মিশিয়ে নিতে পারেন। এটি করলে জীবাণুরা যেমন দূরে পালাবে, তেমনি সাদা রং আরও উজ্জ্বল দেখাবে।
# যদি নিয়মিত বালিশের কভার পরিষ্কার করতে না পারেন তাহলে প্রতিদিন অন্তত ঝেড়ে নেবেন। এমনটা করলেও জীবাণু ও ডাস্ট মাইটসরা বলিশে বাসা বাঁধার কোনো সুযোগ পাবে না।