দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ১৯৯৪ সালে মাত্র ১০০ দিনে রুয়ান্ডায় ৮ লাখ মানুষ নির্মমভাবে হত্যা করেছিল হুতু চরমপন্থিরা। তাদের শিকার ছিল সংখ্যালঘু তুতসি সম্প্রদায়ের মানুষ।
সংখ্যালঘু তুতসি সম্প্রদায়ের মানুষ যারা ছিল হুতু চরমপন্থিদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষও। রুয়ান্ডার বাসিন্দাদের মধ্যে ৮৫ শতাংশই হুতু। তবে দীর্ঘদিন ধরে তুতসিরা দেশটির শাসন ক্ষমতায় অবস্থান করছিলো।
হুতুরা ১৯৫৯ সালে তুতসি রাজতন্ত্র উচ্ছেদ করে। তখন হাজার হাজার তুতসি প্রতিবেশী যেসব দেশে পালিয়ে যায়, তার মধ্যে অন্যতম হলো এই উগান্ডা। নির্বাসিত তুতসির একটি দল বিদ্রোহী একটি বাহিনী গঠন করে যার নাম দেওয়া হয় রোয়ান্ডান প্যাট্রিয়টিক ফ্রন্ট (সংক্ষেপে যাকে বলা হয়- আরপিএফ)। ওই বাহিনী ১৯৯০ সালে রুয়ান্ডায় অভিযান শুরু করে এবং ১৯৯৩ সালে শান্তি চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চলতেই থাকে।
১৯৯৪ সালের ৮ এপ্রিল রাতে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জুভেনাল হাবিয়ারিমানা এবং বুরুন্ডির প্রেসিডেন্ট সাইপ্রিয়েন নটারিয়ামিনা, যাদের দুজনেই হলেন হুতু সম্প্রদায়ের, তাদের বহনকারী বিমানটিকে গুলি করে ভূপাতিত করা হয়। ওই বিমানে থাকা সব যাত্রীও মারা যান। এই ঘটনার জন্য আরপিএফকে দায়ী করে হুতু চরমপন্থিরা এবং খুব শীঘ্রই মানব হত্যার একটি সুপরিকল্পিত কর্মযজ্ঞ শুরু করে। আরপিএফের দাবি হলো, ওই বিমানটিকে গুলি করেছে হুতুরাই, যাতে করে তারা গণহত্যার একটি অজুহাত তৈরি করতে পারে।
অতি সতর্কতার সঙ্গে বিরোধী পক্ষের সরকারি কর্মকর্তাদের তালিকা মিলিশিয়াদের হাতে তুলে দেওয়া হয়, তারা গিয়ে তাদের সবাইকে পরিবারের সদস্যদেরসহ হত্যা করে। তখন প্রতিবেশীরাও প্রতিবেশীদের হত্যা করেছে। এমনকি অনেক হুতু স্বামী তাদের তুতসি স্ত্রীদের পর্যন্ত হত্যা করেছে, কারণ তাদের দাবি হলো, না হলে তাদের হত্যা করা হতো। সেই সময় প্রত্যেকের পরিচয় পত্রে গোত্রের নাম উল্লেখ থাকতো। যে কারণে মিলিশিয়ারা রোড ব্লক বসিয়ে পরিচয়পত্র যাচাই করতো ও তুতসিদের হত্যা করতো। বেশিরভাগ সময় এসব হত্যাকাণ্ড হয়েছে ধারালো ম্যাচেটি (ধারালো ছুরির মতো বস্তু) দিয়ে। রুয়ান্ডায় প্রায় সবার ঘরেই থাকে এই অস্ত্রটি। হাজার হাজার তুতসি নারীকে আটক করে যৌন দাসী করা হয় সেই সময়।
রুয়ান্ডার তখনকার সরকারি দল, এমআরএনডির একটি যুব শাখা ছিল, যাদের বলা হয়ে থাকে ইন্টেরাহামায়ি। যারা পরবর্তীতে মিলিশিয়ায় রূপ নেয় ও যারা বেশিরভাগ হত্যাকাণ্ডের ঘটনাগুলোই ঘটিয়েছে। স্থানীয় গ্রুপগুলোর হাতে অস্ত্র ও হিট-লিস্ট তুলে দেওয়া হয়, তারা মূলত ভালোভাবে জানতো যে এসব মানুষকে কোথায় পাওয়া যাবে।
হুতু চরমপন্থিরা একটি বেতার কেন্দ্র স্থাপন করেন, যার নাম ছিল আরটিএলএম। ওই বেতার কেন্দ্র ও পত্রিকার মাধ্যমে বিদ্বেষমূলক প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হতো, মানুষজনকে ‘তেলাপোকা’ হত্যা করার জন্য বলা হতো, যার মানে তুতসিদেরই হত্যা করা বোঝানো হতো। যেসব নামী ব্যক্তিদের হত্যা করা হবে, তাদের নামও ওই রেডিওতে পড়ে শোনানো হতো। এমনকি চার্চের যাজক ও নানদের বিরুদ্ধেও হত্যাকাণ্ডের জড়িত থাকার অভিযোগ এসেছিলো, যাদের শিকার অনেক মানুষ সেসব চার্চে আশ্রয়ের জন্যই গিয়েছিলেন।১০০ দিনের হত্যাযজ্ঞে ৮ লাখ তুতসি ও প্রগতিশীল হুতুদের হত্যা করা হয় তখন।
রোয়ান্ডায় জাতিসংঘ ও বেলজিয়ামের সৈন্য ছিল। তবে গণহত্যা বন্ধে জাতিসংঘ মিশনকে কোন দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। একবছর আগেই সোমালিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্যরা নিহত হওয়ার কারণে যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে কোন আফ্রিকান জাতির লড়াইয়ের মধ্যে ঢুকতে রাজী ছিল না। ১০ জন বেলজিয়ান সৈনিক নিহত হওয়ার পর বেলজিয়ামের সব সৈন্য ও জাতিসংঘের বেশিরভাগ সৈনিককে রুয়ান্ডা হতে সরিয়ে আনা হয়। হুতু সরকারের বন্ধু ফরাসিরা তাদের নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য একটি বিশেষ সেনাদল পাঠায়। তারা পরবর্তীতে একটি নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করলেও অভিযোগ রয়েছে, ওই এলাকায় গণহত্যা বন্ধে যথেষ্ট পদক্ষেপ নেয়নি তারা।