বিজ্ঞান-উদ্ভাবন

যেভাবে আবিষ্কৃত হলো কিলোগ্রামের নতুন সংজ্ঞা

দি ঢাকা টাইমস ডেস্ক।। ১৮শ’ শতকে ফ্রান্সে এসআই পদ্ধতি উদ্ভাবিত হয় যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ভরের একক কিলোগ্রাম। পরবর্তীতে এই পদ্ধতির নির্ভুলতা সবচেয়ে কম থাকায় ১৯৬০ সালে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করে। আন্তর্জাতিক পরিমাপ পদ্ধতি বিশ্বে সর্বাধিক ব্যবহার হওয়া পরিমাপ পদ্ধতি। বিজ্ঞান গবেষণা থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্য সহ সকল ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী এটির ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে।

সাধারনত ভরের একক হিসাবে যে প্রাকৃতিক পদার্থ ব্যবহার করা হয় তা প্লাটিনাম-ইরিডিয়ামের তৈরি একটি সংকর ধাতু। আর এই সংকর ধাতুর ভরকেই এক কিলোগ্রাম ধরে সারা বিশ্বে ওজন করা হয়। এই ধাতব খন্ডটি ফ্রান্সে অবস্থিত আন্তর্জাতিক পরিমাপ ব্যুরোর (বিআইপিএম) ভল্টে সংরক্ষিত আছে। তবে দীর্ঘদিন ধরেই বিজ্ঞানীরা এর ওজনের সঠিকতা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পরেন। কারণ প্রতি দশ বছর পর অন্যান্য দেশে প্ররিত রেপ্লিকাগুলোর সাথে মূল ধাতব খন্ডের সঠিকতা পরীক্ষা করা হয়।

Related Post

গত ১শ’ বছর বা তার বেশী সময় ধরে করা পরিমাপে দেখা যায় মূল নমুনাটির ওজন সম্ভবত ৫০ মাইক্রোগ্রামের মত ভর হারিয়েছে। যদিও এর পরিমাণ একটি বালির দানার মত, তবুও দিনে দিনে এভাবে ভর হারিয়ে গেলে এক সময় আর পরিমাপের সঠিকতা বজায় থাকবে না। বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন প্রতি দশকে কাচের পাত্র থেকে মূল ধাতব খন্ডটি বের করা আবার ঢুকিয়ে রাখার ফলে এমন তারতম্য সৃষ্টি হয়েছে। তাই বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে এর নতুন কোন সংজ্ঞা আবিষ্কারের চেষ্টা করছিল।

অবশেষে বিজ্ঞানীরা এর একটি নির্ভুল এবং স্থায়ী সমাধান খুজে পেয়েছে। ম্যাক্স প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবক তত্ব আর সেই সাথে ব্রায়ান কিবলের স্কেল এনে দিয়েছে স্বস্তি। এর ফলে ‘ল্য গ্রঁদ কে’ এর ওজন থেকে নয়, কিলোগ্রামকে সংজ্ঞায়িত করা হবে বৈদ্যুতিক তরঙ্গের আলোকে। সুতরাং এখন থেকে ভরের একক কিলোগ্রামের নমুনা শুধু ফ্রান্সেই নয় সারা বিশ্বের যেকোন স্থানে এর নমুনা পাওয়া সম্ভব হবে এবং যা হবে একদম নির্ভুল।

যদিও এই পরিবর্তনের ফলে ভারি কোন জিনিসপত্রের ওজনে কোন পরিবর্তন আসবে না, তবে ওষুধ শিল্প, ন্যানো টেকনোলোজি শিল্প এবং বিভিন্ন রাসায়নিক সংমিশ্রণ শিল্পের যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে। নোবেল বিজয়ী জার্মান বিজ্ঞানী ম্যাক্স প্ল্যাঙ্কের বৈদ্যুতিক তরঙ্গ মাপার তত্ত্বের মধ্যে একটি এইচ নামের ধ্রুবক রয়েছে। আর এই ধ্রুবকের একক হচ্ছে কিলোগ্রাম বর্গমিটার পার সেকেন্ড। যেহেতু হিসাবটির ভেতরে কিলোগ্রাম রয়েছে, সেহেতু কেবল আয়তন আর সময়ের হিসাব পেলেই নির্ভুল ওজন পরিমাপ করা সম্ভব।

তবে এখানেও একটি সমস্যা দেখা দেয়। এইচ ধ্রুবকের মান এতই ক্ষুদ্র যে তার সঠিকতা বজায় রাখা খুবই কঠিন। তখন এই সমস্যার সমাধান নিয়ে আসলেন বিজ্ঞানী ড. ব্রায়ান কিবল। তিনি তার সুপার-অ্যাকুরেট সেট অব স্কেল ব্যবহার করে এইচের মান ০.০০০০০১ শতাংশ পর্যন্ত নির্ভুলভাবে পরিমাপ করতে সক্ষম। ফলে এই দুই বিজ্ঞানীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আবিষ্কার হয়ে গেল কিলোগ্রামের নতুন সংজ্ঞা।

This post was last modified on মে ১, ২০১৯ 10:47 অপরাহ্ন

রায়হান মালিথা

Recent Posts

কোন কাজ নিয়মিত করলে লিভারের রোগে আক্রান্ত হতে পারেন

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ জীবন-যাপনে কিছু নিয়ম করে চলা উচিত। কারণ নিয়ম করে না…

% দিন আগে

পাসওয়ার্ডে এই ছোট্ট পরিবর্তন আনলে কখনও হ্যাক হবে না অ্যাকাউন্ট

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ অনলাইনে যে কোনো অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত রাখার জন্য প্রয়োজন হয় পাসওয়ার্ড।…

% দিন আগে

ওটিটিতে আসছে মস্কোজয়ী সিনেমা ‘আদিম’

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ৪৪তম মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের প্রতিযোগিতা বিভাগে জায়গা নিয়ে আলোচনায়…

% দিন আগে

টাইটানিকের সবচেয়ে ধনী যাত্রীর সেই স্বর্ণের পকেট ঘড়িটি রেকর্ড দাম ১৬ কোটি টাকায় বিক্রি!

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আটলান্টিক মহাসাগরে ডুবে ধ্বংস হয়ে যাওয়া ঐতিহাসিক টাইটানিক জাহাজ ট্রাজেডির…

% দিন আগে

আজ মহান মে দিবস: শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার দিন

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আজ ১লা মে, মহান মে দিবস। বঞ্চনা, নির্যাতন ও বৈষম্যের…

% দিন আগে

নদীমাতৃক বাংলাদেশের এক চিরাচরিত দৃশ্য

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুভ সকাল। বুধবার, ১ মে ২০২৪ খৃস্টাব্দ, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১…

% দিন আগে