দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ যদি আপনি গবেষণা কিংবা অনুসন্ধান চালিয়ে দেখেন, তাহলে দেখবেন যে- সৌদি আরব আসলেও একটি মজার দেশ। আজব আজব কাণ্ড রয়েছে দেশটিতে। সৌদি আরবে বিবাহ সম্পর্কে যে তথ্যগুলো আমাদের অজানা জেনে নিন সেগুলো।
সৌদি আরব এমন একটি দেশ যা অনন্য সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের অধিকারী বলা যায় অন্যান্য দেশ থেকে একেবারেই ভিন্নতর। মধ্যপ্রাচ্যের প্রাচীন এই দেশের বিবাহ সংস্কৃতিও বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে একেবারেই ভিন্ন। তাই আপনি যদি সৌদি আরবের কোনো বিবাহ অনুষ্ঠানে যোগ দেন, তাহলে বিবাহ সম্পর্কে আপনার অভিজ্ঞতাটা আরও সমৃদ্ধ হবে।
যদিও পারিবারিক রীতিনীতি ও ঐতিহ্যগত কারণে সৌদি ভূখন্ডের বিবাহের রীতিনীতি অপর বিবাহ থেকেও পৃথক হয়ে থাকে। তবুও একটা সাধারণ সৌদি বিবাহ অনুষ্ঠান সম্পর্কে জানলে আপনি নিজেও বিস্ময়ে চমকে উঠবেন।
তাহলে অপেক্ষা না করে চলুন জেনে নেওয়া যাক, একটা সাধারণ সৌদি বিবাহে কত ধরনের মজার এবং বিস্ময়কর দিক রয়েছে সেই বিষয়গুলো।
কয়েক মাস ধরে চলে বিয়ের পরিকল্পনা
সৌদি আরবের একটি বিবাহ কখনও এক সপ্তাহ বা তার কিছু বেশি সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে পারে না। সৌদিদের বিয়ের পরিকল্পনার জন্য কমপক্ষে ৩ মাস সময় প্রয়োজন পড়ে। তবে আশ্চর্যজনক একটি বিষয় হলো- কয়েক মাস ধরে পরিকল্পনা করা ইভেন্টটি শেষ হয় মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যে। বিশেষত একটি লেডিস পার্টির মাধ্যমে, যেখানে বিয়ের কনে নিষ্ক্রিয় বসে থাকে ও সবার কাছ থেকে প্রচুর শুভেচ্ছা গ্রহণ করে!
আমন্ত্রিতদের উপর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
সৌদি আরবে বিবাহের দ্বিতীয় মজার বিষয়টি হলো- সৌদি বিবাহে নিমন্ত্রকদের কাছে আমন্ত্রিত অতিথিদের ওপর একটি গুরুত্বপূর্ণ নোট থাকে যে, বিবাহ অনুষ্ঠান ত্যাগ করার পূর্বে পড়ে শুনানো হয়। তাতে করে বিবাহ অনুষ্ঠানে ডাকা অতিথিদের সংখ্যা স্পষ্টভাবেই উল্লেখ করা হয় এবং ওই অনুষ্ঠানে শিশু, সেলফোন ও ছবি তোলার ব্যাপারেও যে নিষেধাজ্ঞা থাকে সেসব বিষয়ে অবশ্যই ওই নোটে দেওয়া থাকে!
সৌদি সব বিবাহই খরুচের হয় না
সৌদি আরব সম্বন্ধে একটা ধারণা প্রচলিত রয়েছে যে, দেশটির সব বিবাহই খরুচে, ব্যাপক জাঁকজমকপূর্ণ হয়ে থাকে। কথাটা অনেকাংশে সত্য হলেও সেখানে কিছু সংখ্যক সাধারণ মানের বিবাহও অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। সেসব বিবাহ হোটেল কিংবা বাড়িতে সাধারণ সাজসজ্জা ও স্বল্প সংখ্যক অতিথির সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত হয়।
সৌদি বিবাহে নাচের নিয়ম
আপনি যদি সত্যিই কোনও বিয়েতে নাচের বিষয়টি সামনে আনতে চান সেক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই প্রবীণদের চলে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। বড়রা চলে গেলে তবেই আপনি নাচগান কিংবা পার্টি করতে পারবেন। শুধুমাত্র সম্মান দেখানোর খাতিরেই আপনি বড়দের সামনে নাচা-নাচি করতে পারবেন না।
বিবাহের রঙরস
অতীতে সৌদির বিবাহগুলোতে রঙিন থিম রাখা হতো যেখানে সিদ্ধান্ত নিতে হতো যে, কোন দিনে কোন রঙের পোশাক-আশাক পরতে হবে। তবে সম্প্রতি প্রায় প্রতিটি সৌদি বিবাহই একটি নির্দিষ্ট থিম নিয়েই অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সেটি হতে পারে একটি সিন্ডারেলা থিম বা একটা আশ্চর্যজনক কোনো থিম। যা সাজসজ্জা হতে আমন্ত্রণ কার্ডগুলোতে কঠোরভাবে অনুসরণ করা হয়ে থাকে!
বিশাল পরিমাণের যৌতুক
জানা যায়, এই একটি কারণে সৌদি আরবের অনেক পুরুষ এবং মহিলা বর্তমানে বিয়ে করতেই পারছেন না। আর সেটি হচ্ছে- উচ্চ পর্যায়ের মোহরানা। মোহরানাই হলো বিয়ের সময় স্ত্রীকে দেওয়া এক প্রকার উপহার বলা যায়। বিবাহ সম্পন্ন হওয়ার পূর্বে এটি নিয়ে চলে ব্যাপক দরকষাকষি। যে কারণে এটি সৌদি রিয়ালে ৫০ হাজার হতে পাঁচ লাখ পর্যন্ত ধার্য করা হয়।
বিবাহে পাত্রীকে একাই আসতে হয়
পশ্চিমা বিশ্বে ও এশিয়ার বিয়েতে দেখা যায় যে কনে তাঁর পরিবারের বহুসংখ্যক সদস্যদের সঙ্গে করে পায়ে হেঁটে বা কোলে চড়ে আসেন। তবে সৌদি আরবে বিষয়টি একেবারেই ভিন্ন রকমের। এখানে নিয়ম হলো নববধূকে একাই বিয়ের আসরে আসতে হবে।
সাদা পোশাক
সাম্প্রতিক সময় সৌদি নববধূরা তাদের বিবাহের জন্য সাদা পোশাক বেছে নিতে শুরু করেছেন। দেশটির ঐতিহ্যবাহী সোনালী এবং লাল পোশাকের পরিবর্তে সেখানে বর্তমানে সাদা রঙের পোশাক জায়গা করে নিয়েছে।
বদলে গেছে মেহেদির সাজও
আমরা সবাই জানি, সৌদি কনেকে অবশ্যই তার হাত এবং পায়ে মেহেদী থাকতে হয়। অতীতে দেশটির নববধূরা তাদের তালুতে এবং পায়ে ভরাট করে মেহেদি ব্যাবহার করতেন, যা ছিল তাদের এক ঐতিহ্যবাহী ডিজাইন। তবে বর্তমানে সেখানে ভারতীয় ও মরোক্কান ডিজাইনগুলো সেখানে স্থান করে নিয়েছে। যা অতি সূক্ষ্ম ও ফ্যাশনে বৈচিত্র নিয়ে এসেছে।
বিবাহপূর্ব পার্টিতে ঐতিহ্যবাহী খাবার পরিবেশন
সৌদি আরবে মূল বিয়ের দিনের পূর্বে বিবাহ-পূর্ব কিছু পার্টি কিংবা অনুষ্ঠান করা হয়ে থাকে। এই অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সর্বোত্তম অংশই হলো- মান্ডি নামের বিশেষ কিছু ঐতিহ্যবাহী খাবার পরিবেশন। এই খাবার সবাইকে পরিবেশন করা হয়।