দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ তিন সন্তানের পর আরও একটি সন্তান হলো। সমাজে তো এবার মুখ দেখানো যাবে না! তাহলে কী করা যায়? একটাই বুদ্ধি সন্তানকে রাস্তায় ফেলে দেওয়া! ঠিক তাই করলেন ওই কুলাঙ্গার পিতা। তবে ফেলার আগে চুমু খেলেন সন্তানকে।
আনন্দবাজার পত্রিকার খবরে বলা হয়, তিন সন্তানের পর আরও একটি সন্তান হলো। সমাজে তো এবার মুখ দেখানো যাবে না! আত্মীয়-পরিজন, প্রতিবেশীরা ছিঃ ছিঃ করবে এমন ভয়, তা হলে উপায় কী? তাই বাবা-মা সিদ্ধান্ত নিলেন দুদিনের সন্তানকে তারা গির্জার সামনে ফেলে আসবেন। সদ্যজাত সন্তানকে গির্জায় ফেলে রেখে যাওয়ার সেই দৃশ্যটি ধরা পড়েছে সিসিটিভি ফুটেজে। ঘটনাটি ভারতের কেরলের কোচিরে ঘটেছে। ওয়াড়াক্কানচেরির বাসিন্দা বিট্টু এবং তার স্ত্রী প্রতিভা। তাদের তিন সন্তান থাকার পরও আবারও গর্ভবতী হন প্রতিভা।
ত্রিশূরের একটি সরকারি হাসপাতালে ভর্তিও করানো হয় তাকে। সম্প্রতি ফুটফুটে একটি কন্যাসন্তানের জন্ম দেন ওই মহিলা। । পাড়া-প্রতিবেশী, বন্ধুদের পরিহাস হতে বাঁচতে তাই জন্মানোর পরই নবজাতককে রাতের অন্ধকারেই ফেলে রেখে এলেন একটি গির্জার বাইরে। ওই দম্পতি ভেবেছিলেন, যাক রক্ষা পাওয়া গেছে। তাদেরকে আর কৈফিয়ত দিতে হবে না, পরিহাসের মুখোমুখিও হতে হবে না। তবে তাদের শেষ রক্ষা হলো না! ‘একজন’ অলক্ষ্যেই নজর রাখছিল তাদের ওপর। তা হলো গির্জার সিসিটিভি ক্যামেরা। সেই ক্যামেরার ফুটেজই রহস্য উদ্ঘাটন হয়ে গেলো।
পরিবারে নতুন অতিথি আসায় আনন্দের থেকে আশঙ্কাই বেশি ঘিরে ধরে বিট্টু এবং প্রতিভাকে। বাড়ি ফিরলেই বন্ধুবান্ধব, প্রতিবেশীদের কাছ থেকে শুনতে হবে নানা রকম কথা-বার্তা। তাই হাসপাতালে বসেই দুজনে শিশুটিকে কোথাও রেখে আসার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন, পুলিশের কাছে অন্তত তেমনটিই দাবি করেছেন ওই ব্যক্তি বিট্টু। লোকলজ্জার হাত থেকে বাঁচতে তাই হাসপাতাল থেকে সবার নজর এড়িয়ে সন্তান হওয়ার একদিন পর রাতে তারা সোজা চলে আসেন এরাপল্লির সেন্ট জর্জ ফোরেন গির্জাতে। সেই সময় গির্জায় আশপাশটা পুরোপুরিই নির্জনই ছিল। সুযোগও এসে যায় বিট্টুর হাতে।
শিশুটিকে খুব সন্তর্পনে গির্জার সামনে রেখে দেন তিনি। রাখার আগে শিশুটির কপালে ‘স্নেহভরা’ চুম্বনও করেন বাবা বিট্টু। তারপর নিঃশব্দে সেখান থেকে সরে পড়েন তিনি। রাত তখন সাড়ে ৮টার মতো। গির্জার নিরাপত্তারক্ষী হঠাৎই শিশুর কান্নার আওয়াজ পেয়ে এগিয়ে এলেন। শিশুটিকে দেখেই চমকে ওঠেন। একটি সদ্যজাত শিশু কাপড় দিয়ে জড়িয়ে শোয়ানো। সঙ্গে সঙ্গে তিনি পুলিশে খবর দিলেন। পুলিশ এসে শিশুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করলো। শিশুটির মা-বাবার খোঁজ শুরু করলো পুলিশ। তবে তাদের খোঁজ পেতে পুলিশকে অবশ্য বেশি বেগ পেতে হয়নি।
গির্জার সিসিটিভি ফুটেজে সংগ্রহ করে সংবাদমাধ্যম এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করেন তারা। তার পরই বিট্টু এবং প্রতিভার খোঁজ মেলে ত্রিশূরের ওয়াড়াক্কানচেরিতে। পুলিশ ওই দুজনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছে। বিট্টু পুলিশী জেরায় জানিয়েছেন, বারবার গর্ভবতী হয়ে পাড়ায় প্রতিভাকে অনেকেই উপহাস করতেন। বন্ধুবান্ধবরাও কটাক্ষ করতে ছাড়তো না তাকে। এসবের হাত হতে মুক্তি পেতেই সদ্যজাত সন্তানকে রেখে আসার সিদ্ধান্ত নেন তারা। তবে শুধুই কি লোকলজ্জার কারণ, না কি এর পেছনে আরও কোনো কারণ রয়েছে? সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখছে স্থানীয় পুলিশ।