দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আজ ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত বিজয়ের ৪৯ বছর পূর্ণ হলো আজ। জাতি আজ মহান এই দিনটিকে যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে পালন করছে।
১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী পরাজয় বরণ করার মাধ্যমে অর্জিত হয় মহান বিজয়। আজকের এই দিন ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জন হয়েছিল। হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্যদিয়ে বিজয় অর্জিত হয় বাংলাদেশের।
লক্ষ কোটি মানুষের আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমরা পেয়েছি একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশ, একটি জাতীয় পতাকা। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্যদিয়ে যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শুরু হয়, এর ঠিক ৯ মাস পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর হানাদার বাহিনীর পরাজয়ের মধ্যদিয়ে আমরা চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করি। সেই হতে আমরা পেয়েছি একটি নিজস্ব পতাকা, পেয়েছি স্বাধীন একটি রাষ্ট্র।
এমনই এক দিনের জন্য প্রতীক্ষায় কেটেছিল বাঙালির হাজারো বছর। বহু কাঙ্ক্ষিত সেই দিনটির দেখা মেলে ইতিহাসের পাতায় যেনো রক্তিম আখরে লেখা ৯ মাসের এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্যদিয়ে ১৯৭১ সালের আজকের এই দিন ১৬ ডিসেম্বর।
ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে এটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এই দিনে বর্বর পাকিস্তানী বাহিনী হাতের অস্ত্র ফেলে দিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়েছিল বিজয়ী বীর লক্ষ কোটি বাঙালিদের সামনে। পাকিস্তানী বাহিনী সেদিন স্বাক্ষর করেছিলো পরাজয় সনদে। পৃথিবীর মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটেছিলো স্বাধীন এক বাংলাদেশ।
দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ, অন্তত ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত এই বিজয়ের দিনে শুধু আনন্দই নয়, সেইসঙ্গে বেদনার বাজনাও বাজবে বহু মানুষের বুকে। বিনম্র শ্রদ্ধা ও গভীর কৃতজ্ঞতায় জাতি আজ স্মরণ করছে জানা-অজানা সেসব বীর শহীদদের। যাঁদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার সুফল ভোগ করে পেরিয়ে চলেছি আমরা। তবে যারা সেই সংগ্রামের উত্তাল দিনে জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল ও হাত মিলিয়েছিল ঘাতক পাকিস্তানী সেনাদের সঙ্গে। সেইসব রাজাকার-আলবদর আল সামস্দের বিচার না করার কলঙ্ক যেনো অনেকটাই ম্লান করেছিল জাতির এই শ্রেষ্ঠ অর্জনকেই। তবে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে একের পর এক সেইসব আলবদর আল শামস্ দের বিচার করে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করতে সমর্থ হয়েছেন।
এই মহান দিনটিতে সকাল হতেই সারাদেশে পথে নামবে উৎসবমুখর সকল মানুষ। শহীদদের স্মরণ করে বিনম্র শ্রদ্ধায় দেশের সব স্মৃতিসৌধ যেনো ভরে যাবে ফুলে ফুলে। রাজধানীতে সব বয়সী অগণিত মানুষ সমবেত হয়েছেন সভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধ ময়দানে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে। শ্রদ্ধার ফুলে ফেুলে ঢেকে যাবে স্মৃতি সৌধের পবিত্র বেদিও।
আজকের এই দিনটিতে লাল-সবুজ পতাকা উড়বে বাড়িতে- গড়িতে, সকল প্রতিষ্ঠানেও। মাথায় থাকবে পতাকার রঙে রাঙা ফিতা, চলে আঁকা হবে জাতীয় পতাকার প্রতিকৃতি। পতাকায় সজ্জিত করা হবে রাজধানীসহ দেশের বড় সব শহরগুলোর প্রধান প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপগুলোকে। আজকের এই দিনটি সরকারি ছুটির দিন। আজ রাতে গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলোতে করা হবে আলোকসজ্জা। হাসপাতাল, শিশুসদন ও কারাগারগুলোতে বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হবে। দেশের মসজিদ, গীর্জাসহ সব উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনাও করা হবে আজকের এই মহান দিনটিকে স্মরণ করে।
সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাস্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। দিনটির উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ পৃথক পৃথক বাণী প্রদান করেছেন।