দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ পৃথিবীতে করোনা ভাইরাসের চেয়েও আরও বড় বিপদ আসছে বলে আভাস দিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভাষাবিদ ও রাজনীতি বিশ্লেষক নোয়াম চমস্কি।
গত সোমবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনায় এক টিভি সাক্ষাৎকারে এই আভাস দেন ৯১ বছর বয়সী এই বুদ্ধিজীবী। এই সময় করোনা ভাইরাস পরবর্তী বিশ্ব ব্যবস্থা নিয়েও কথা বলেন নোয়াম চমস্কি।
নোয়াম চমস্কি তাঁর মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, ‘করোনা ভাইরাস নিজেই অনেক বড় এক ভয়ের কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে, তবে ভবিষ্যতে এর থেকেও আরও বড় দুই বিপদ এগিয়ে আসতে পারে আমাদের দিকে, যা হবে মানব ইতিহাসে এই পর্যন্ত ঘটে যাওয়া সবচেয়ে জঘন্যতম ঘটনা। যার একটি হলো পরমাণু যুদ্ধ ও অপরটি হচ্ছে চলমান বৈশ্বিক উষ্ণায়নের হুমকি। করোনা ভাইরাস দুঃস্বপ্নের মতোই এবং একে ভয় পাওয়ার অনেক কারণও রয়েছে, তবে এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে। তবে কিছু বিষয় হতে আর মুক্তি পাওয়া যাবে না, সেগুলো একেবারেই শেষ।’
নোয়াম চমস্কি আরও বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শক্তি অনেক বড়। এটি একমাত্র দেশ যখন ইরান কিংবা কিউবার ওপর অবরোধ দেয় তখন অন্যরা তাকেও অনুসরণ করে! আবার ইউরোপও তার গুরুকে অনুসরণ করে। এসব দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবরোধের কারণে অনেকটাই ভুগেছে।’
তবে করোনা ভাইরাসের সংকটের সময় কিউবার কথা উল্লেখ করে নোয়াম চমস্কি বলেন, ‘তবে তারপরও এই সময়ের সবচেয়ে বিদ্রূপাত্মক ঘটনাই হলো কিউবা ইউরোপকে সাহায্য করছে! অপরদিকে জার্মানি গ্রিসকে সাহায্য করতে পারছে না, তবে কিউবা ইউরোপীয় দেশকে ঠিকই সাহায্য করছে।’
ভূমধ্যসাগরে হাজারও অভিবাসন প্রত্যাশী এবং শরণার্থীর মৃত্যুর প্রসঙ্গ উল্লেখ করে নোয়াম চমস্কি বলেন, এসব দিক দিয়ে পশ্চিম ধ্বংসাত্মক অবস্থানে রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের সংকটের সময় মানুষের মধ্যে এই ভাবনার জন্ম হতে পারে যে, তারা আসলে কী ধরনের পৃথিবী চায়।’
নোয়াম চমস্কি বলেন, ‘দীর্ঘ দিন ধরেই আমরা জানি যে, পৃথিবীতে মহামারি কিছুদিন পর পর আসে, এই বিষয়ে খুব ভালো বোঝাপড়াই ছিল যে, সার্স এর পরিবর্তিত রূপ হিসেবে করোনা ভাইরাস মহামারি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে। তারা এ জন্য ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করতে পারতো, করোনা ভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় কার্যকর উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ নিতেও পারতো এবং সামান্য পরিবর্তনের মাধ্যমে সহজেই আজ আমাদের হাতে করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন থাকতেও পারতো।’
বড় বড় ওষুধ উৎপাদনকারী সংস্থার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে নোয়াম চমস্কি বলেন, ‘মানবজাতিকে ধ্বংসের হাত হতে রক্ষা করতে পারে এমন কোনো ভ্যাকসিন উৎপাদনের তুলনায় শরীরের জন্য ক্রিম উৎপাদনই বেশি লাভজনক। পোলিও সমস্যার সমাপ্তি ঘটেছিল ‘সালক’ ভ্যাকসিন এর মাধ্যমে। যা সরকারি পর্যায়ে আবিষ্কার করা হয়, এর কোনো পেটেন্টই ছিল না। এই সময়েও এটা করা যেতো, তবে নয়া উদারবাদী প্লেগ তা আর হতে দিলো না।’
নোয়াম চমস্কি বলেন, ‘২০১৯ সালের অক্টোবরে বিশ্বব্যাপী এই ধরনের এক মহামারি ছড়িয়ে পড়ার তথ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ছিল, তবে তারপরও কিছুই করা হয়নি। এই তথ্যের দিকে আমাদের নজরই যায়নি। ৩১ ডিসেম্বর চীন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে বললো যে, একটি নিউমোনিয়া দেখা দিয়েছে। এর এক সপ্তাহ পর কিছু চীনা বিজ্ঞানী জানালেন যে, এটা হলো করোনা ভাইরাস এবং তারা এই তথ্য পৃথিবীকেও জানালো।’
নোয়াম চমস্কি আরও বলেন, ‘যখন আমরা কোনোভাবে এই সংকট উতরে যাবো, তখন আমাদের সামনে হয় খুব ক্ষমতাসম্পন্ন কর্তৃত্ববাদী হিংস্র রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে বেছে নিতে হবে কিংবা আমরা পাবো ভালো কিছু যা সমাজের যৌক্তিক পরিবর্তন ঘটবে, মানবিক প্রয়োজন এবং দয়াবান এক সমাজ তৈরি হবে যেখানে ব্যক্তিগত লাভের তুলনায় সামষ্টিক মানুষের প্রয়োজন গুরুত্ব পাবে সব সময়।’
নোয়াম চমস্কি বলেন, ‘এই সময়টি মানব ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়, শুধু করোনা ভাইরাসের জন্যই তা নয়, এই পরিস্থিতি বরং আমাদের পৃথিবীর ভুলগুলো বুঝতে বিশেষ সহায়ক হবে, অকার্যকর আর্থসামাজিক ব্যবস্থার গভীরে তাকানোর সুযোগও দেবে, যার পরিবর্তন আসলে আবশ্যক, যদি আমরা চাই একটি বাসযোগ্য পৃথিবী।’
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের সার্জিক্যাল মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।