দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ‘লকডাউন’ সফল হবে মানুষের ভাতের ব্যবস্থা করতে পারলে তবেই বলে মনে করেন চার অর্থনীতিবিদ। তারা হলেন- ভারতের নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. অমর্ত্য সেন, তার উত্তরসূরি ড. অভিজিৎ ব্যানার্জি, এস্থার ডুফলো এবং অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু।
সংবাদ মাধ্যমের এক খবরে জানা যায়, সর্বভারতীয় টেলিভিশন আলোচনায় এই চার অর্থনীতিবিদ করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় ডাকা লকডাউন পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলার সময় নিজেদের এই মতামত তুলে ধরেন।
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. অমর্ত্য সেন বলেন, কেও যখন ভাবছেন কী করে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ হতে বাঁচা যাবে, কেও তখন ভাবছেন, কোথায় দুটো ভাত পাওয়া যাবে! কাজেই তার ব্যবস্থা আগে করতে হবে।
অপর নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. অভিজিৎ ব্যানার্জি বলেন, লোকে যদি ভাতের খোঁজে রাস্তায় বেরোতে বাধ্য হয়, তাহলে লকডাউনের কখনও সুফল পাওয়া যাবে না। অভিজিতের সঙ্গে সহমত পোষণ করে তার স্ত্রী ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ এস্থার ডুফলো বলেছেন, লোকের খাওয়ার ব্যবস্থা করা করোনা সংক্রমণ আটকানোর জন্যেই খুব জরুরি।
অপরদিকে অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসুর মন্তব্য হলো, যারা বলছেন, আগে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইটা জিতে নিই, জাতীয় অর্থনীতি নিয়ে পরে ভাবা যাবে, তারা মোটেও ঠিক বলছেন না।
করোনা মোকাবিলাকে মোদি সরকারের যুদ্ধ পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করার তীব্র নিন্দা করে অমর্ত্য সেন বলেছেন, ভারতের মতো দেশ যেখানে মানুষের মধ্যে এতো বৈচিত্র্য, এতো মতামত বিদ্যমান, যেখানে বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন রকমের চাহিদা রয়েছে, সেখানে একে যুদ্ধ পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করার কোনও অর্থই হয় না।
তিনি আরও বলেন, কিছু মানুষ শুধুই ভাবছেন যে, কীভাবে করোনার সংক্রমণ হতে রক্ষা পাওয়া যাবে, অন্যদিকে কিছু মানুষ শুধু দু’মুঠো ভাতের সন্ধান করে যাচ্ছেন। চিন্তা করছেন যে, পরের দিনও খাবার জুটবে তো? এই লকডাউনের সময় মানুষ যদি কর্মসংস্থান হারাতে থাকেন, তাহলে রোজগারের সকল রাস্তাই বন্ধ হয়ে যাবে। মানুষের হাতে টাকা থাকবে না। তখন এমন পরিস্থিতি তৈরি হবে যেখানে দেখা যাবে যে, শেষে খাদ্যের অভাবেই মানুষকে মরতে হচ্ছে। এটা এমন একটা পরিস্থিতি হয়েছে যে, যেখানে আমাদের আরও সহযোগী হয়ে উঠতে হবে। আসল যুদ্ধে সহযোগী হয়ে ওঠা ছাড়া কোনও উপায় নেই। তথ্যসূত্র. দৈনিক আজকাল।
ভারতের এই চার অর্থনীতিবিদের বক্তব্য শুধু ভারত নয় বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য। গরীবদের মুখে খাবার দিতে না পারলে কখনও লকডাউন কার্যকরি হবে না। তাই সেই দিকেই আগে দৃষ্টি দিতে হবে।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের সার্জিক্যাল মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।