জানা অজানা

মার্কিন গবেষণা রিপোর্ট: বিশ্বের সাড়ে ১১ কোটি মানুষ করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সারা বিশ্বে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে পিলে চমকানোর মতো তথ্য দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার স্টানফোর্ড ইউনিভার্সিটির এক দল গবেষক।

দ্যা গার্ডিয়ানের এক খবরে বলা হয়েছে, গবেষকদের দাবি, বিশ্বে এ পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ২৩ লাখ বলা হলেও এই সংখ্যাটি কম করে হলেও ১১ কোটি ৫০ লাখ হবে।

বিভিন্ন দেশ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জনস হোপকিনস বিশ্ববিদ্যালয় বা ওয়ার্ল্ডোমিটার আমাদের যে পরিসংখ্যান দিয়েছে, আপাতদৃষ্টিতে আমরা সেটিকেই করোনায় আক্রান্ত বা মৃতের প্রকৃত হিসাব বলে ধরে নিয়েছি। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার স্টানফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকরা বলেছেন, অনেকের দেহে ভাইরাস সংক্রমিত হলেও তার কোনো লক্ষণই প্রকাশ পায়নি, অর্থাৎ তিনি অসুস্থই হননি। যে কারণে তার হাসপাতালে যাওয়ারও প্রয়োজনও পড়েনি, পরীক্ষা না করায় রোগীর হিসাবের মধ্যেও তিনি পড়েননি।

গার্ডিয়ান আরও জানিয়েছে, স্টানফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকদের এই গবেষণাপত্র সম্প্রতি প্রকাশিত হলেও সেটি এখনও বিশেষজ্ঞদের দ্বারা মূল্যায়িত হয়নি।

ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা ক্লারা কাউন্টির ৩ হাজার ৩৩০ ব্যক্তির ওপর পরীক্ষা চালিয়ে এই গবেষকরা বলেছেন, করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা জানার চেয়েও ৫০ হতে ৮৫ গুণ বেশি।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের করোনা ভাইরাসের প্রথম প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় ক্যালিফোর্নিয়াতেই, বর্তমানে অবশ্য নিউইয়র্কসহ পূর্বাঞ্চলই বেশি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা বর্তমানে ৩০ হাজারের মতো, এর মধ্যে সান্তা ক্লারায় সরকারি হিসাবে আক্রান্ত ১ হাজার ৮৭০ জন, যার মধ্যে ৭৩ জন মারা গেছেন। তবে গবেষণা যখন চালানো হয়, তখন আক্রান্তের সংখ্যা ছিল মাত্র ১ হাজারের মতো, মারা গিয়েছিলেন ৫০ জন।

স্টানফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকদের দাবি হলো, সান্তা ক্লারায় প্রকৃতপক্ষে ৪৮ হাজার হতে ৮১ হাজার মানুষের দেহে নতুন এই করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঘটেছে, যা শনাক্ত সংখ্যার চেয়েও বহুগুণ বেশি।

যদি তাই না হবে তাহলে তারা অসুস্থ নন কেনো? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে মানবদেহের প্রাকৃতিক সুরক্ষাব্যবস্থা অ্যান্টিবডির কথা বলেছেন এই গবেষকরা, যা পরীক্ষা করেই তারা বিপুলসংখ্যকের আক্রান্ত হওয়ার দাবি করেছেন।

তারা বলেছেন, যে কোনো রোগপ্রতিরোধের ব্যবস্থাই মানুষের দেহে সবসময়ই কার্যকর থাকে। মানুষের দেহে বাইরে হতে যখন অচেনা কিছু প্রবেশ করে, শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা যদি তাকে ক্ষতিকর সন্দেহ করে বসে, তখন তা ঠেকাতে অ্যান্টিবডি তৈরি করে। সেই অ্যান্টিবডি তখন নির্দিষ্ট ওই জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে থাকে ক্রমাগতভাবে। এই লড়াইয়ে জীবাণু জিতলে তখন মানুষ অসুস্থ হয়।

এই অ্যান্টিবডি তৈরি হয় বলেই প্রতিনিয়ত নানা রোগ-জীবাণুর মধ্যে থেকেও মানুষ অসুস্থ না হয়ে সচল থাকে অনেক সময়ই। তবে যার প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব কম হয়, তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।

স্টানফোর্ডের এ গবেষক দল সান্তা ক্লারার বাসিন্দাদের মধ্যে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধী অ্যান্টিবডির উপস্থিতি পরীক্ষা করে রোগীর সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি ব্যক্তির মধ্যে সেটি দেখতে পেয়েছেন। অর্থাৎ কোনো না কোনো পর্যায়ে তাদের দেহেও এই ভাইরাসটির সংক্রমণ ঘটেছিল, তবে ওই ভাইরাসটি সুবিধা করে উঠতে পারেনি বলে তাদের হাসপাতালে যেতে হয়নি।

এই গবেষণার ভিত্তিতে তারা বলেছেন, নতুন করোনা ভাইরাস (সার্স সিওভি-২) সার্স বা মার্সের চেয়ে ভয়ানক অবস্থা তৈরি করলেও যে মাত্রায় ভয়ঙ্কর বলা হচ্ছে, আসলে ততোটা ভয়ঙ্কর না।

যেমন বর্তমানে শনাক্ত আক্রান্তের সংখ্যার সঙ্গে তুলনা করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মৃতের হার ৪ দশমিক ১ শতাংশ বলা হলেও অশনাক্ত ব্যক্তিদের হিসাবে ধরলে মৃত্যুর হার শূন্য দশমিক ১২ থেকে শূন্য দশমিক ২ শতাংশতে নেমে আসবে।

শুধু জেলার মতো একটি এলাকায় এই গবেষণা চালিয়ে এলেও বড় এলাকাজুড়ে একই গবেষণা চালালে একই ফল আসবে বলেও মনে করেন স্টানফোর্ডের গবেষক দল।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ ইতিমধ্যে ১০ হাজার মানুষের দেহে করোনা ভাইরাসের অ্যান্টিবডির উপস্থিতি পরীক্ষার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

স্টানফোর্ড ইউনিভার্সিটির মেডিসিনের সহযোগী অধ্যাপক এরন বেনডেভিড সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, আমরা মহামারীর কোন পর্যায়ে রয়েছি, তা বুঝতে এই গবেষণাটি একটি পথ দেখাবে তাতে সন্দেহ নেইা।

ভাইরাসটির বিস্তার ঠেকাতে এখন যে অবরুদ্ধ অবস্থা চলছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, তা তুলে নেওয়ার যে দাবি উঠছে দেশটিতে, এই গবেষণা তার পালেই হাওয়া দেবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়

# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের সার্জিক্যাল মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।

This post was last modified on এপ্রিল ১৯, ২০২০ 10:01 অপরাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার

Recent Posts

বাংলা সাল যেভাবে এলো

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বৈশাখ এলে বাংলা সালের কথা আমাদের মনে পড়ে। আসলে এই…

% দিন আগে

নদী ও নৌকা: এক অসাধারণ গ্রামের দৃশ্য

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুভ সকাল। মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪ খৃস্টাব্দ, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১…

% দিন আগে

আপনি কী জনেন দিবানিদ্রার অভ্যাসে বাড়তে পারে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি!

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ দিনের বেলায় ঘুমানোকে আমরা ভাত ঘুম বলে থাকি। তবে দিনের…

% দিন আগে

ডিপিএস এসটিএস স্কুল ঢাকার ২০২৩-২৪ সেশনের গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠান

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ডিপিএস এসটিএস সিনিয়র স্কুল অডিটোরিয়ামে আয়োজিত হয়েছে ডিপিএস এসটিএস স্কুল…

% দিন আগে

এসসিবি-চ্যানেল আই অ্যাগ্রো অ্যাওয়ার্ড ২০২৩: ‘সেরা কৃষি প্রতিষ্ঠান’ স্বীকৃতি পেলো আইফার্মার

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক অ্যান্ড চ্যানেল আই অ্যাগ্রো অ্যাওয়ার্ড ২০২৩- এর…

% দিন আগে

দেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রীর ছোটবেলার ছবি: বলুনতো এটি কে?

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ যে ছবিটি আপনারা দেখছেন সেটি দেশের জনপ্রিয় একজন অভিনেত্রীর ছোটবেলার…

% দিন আগে