দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মানুষের প্রয়োজনের তাগিদেই বিজ্ঞানীরা উদ্ভাবন করছেন নিত্যনতুন জিনিস। তারই একটি রূপ হলো প্লাস্টিক। অর্থনৈতিক উন্নয়নে বায়ো ডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকের ব্যবহার করা যেতে পারে।
যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্লাস্টিক ব্যবহৃত হচ্ছে ব্যাপক হারে। তাই প্লাস্টিকজাতদ্রব্য বা প্লাস্টিক আমাদের দৈনন্দিন ব্যবহারকৃত সামগ্রীর তালিকায় অপরিহার্য ভূমিকা পালন করছে। তবে এই প্লাস্টিকের ব্যবহার অপরিহার্য হলেও প্লাস্টিক অপচনশীল একটি পদার্থ হওয়ায় প্লাস্টিক আমাদের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ক্ষতির কারণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বিজ্ঞানীরা উদ্ভাবন করেছেন পরিবেশবান্ধন বায়ো-ডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক, যা পরিবেশবান্ধব হয়েই কাজ করে যাবে। এই পরিবেশবান্ধন বায়ো-ডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। এটি পরিবেশের জন্য টেকসই এবং অধিক সাশ্রয়ীই হবে।
বায়ো-ডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক হলো বায়ো-প্লাস্টিক সমন্বয়ে তৈরি একটি সামগ্রী। যার উৎসই হলো নবায়নযোগ্য কাঁচামাল। এই পরিবেশবান্ধন বায়ো-ডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক বর্তমানে বহুল আলোচিত একটি বিষয়। প্লাস্টিক যেখানে হাজার হাজার বছর ধরে মাটির নিচে অপচনশীল অবস্থায় পড়ে থাকে, সেইসঙ্গে পরিবেশেরও ক্ষতি করে। কারণ এই পর্যন্ত তৈরি হওয়া সব প্লাস্টিকই কোনো না কোনো আকারে পৃথিবীতে জমা হয়ে রয়েছেই। প্লাস্টিক অপচনশীল অর্থাৎ মাইক্রো-অরগানিজমস বা অণুজীবরা একে নষ্ট করতেও পারে না। সেই কারণে প্লাস্টিক ধ্বংস হতে বা মাটির সঙ্গে মিশে যেতে ৪০০ থেকে ৪৫০ বছরের বেশি সময় লেগে যায়। যা পরিবেশের জন্য অত্যন্ত হুমকিস্বরূপ।
সেজন্য বৈপ্লবিক আবিষ্কার প্লাস্টিককেই এখন জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের অন্যতম কারণ হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। এক পরিসংখ্যান বলছে যে, ১৯৫০ হতে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ৬ দশমিক ৩ বিলিয়ন টন প্লাস্টিক তৈরি হয়েছে পুরো বিশ্বে- যার মধ্যে মাত্র ৯ শতাংশ রিসাইকেল করা হয়েছে, এর মধ্যে ১২ শতাংশ পুড়িয়ে নষ্ট করা হয়েছে। বাকি ৭৯ শতাংশ অর্থাৎ ৪ দশমিক ৯ বিলিয়নের মতো প্লাস্টিক পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবেশই জমা হয়ে রয়েছে। তাই বলা হয়ে থাকে যে, এসব প্লাস্টিক যদি একসঙ্গে জমা করা হয় তাহলে তা মাউন্ট এভারেস্টের থেকেও বড় হবে! এই প্লাস্টিকের বড় একটি অংশই মূলত সাগরে মিশে যায়। যা জলজ প্রাণীর খাদ্যচক্রে প্রবেশ করে থাকে, তাদের ভারসাম্য নষ্ট করছে ও বিলুপ্তির পথেও নিয়ে যাচ্ছে। সেজন্য ২০০২ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার সরকারিভাবে নিষিদ্ধ করে, যা এখনও কার্যকরিই হয়নি।
দেখা যাচ্ছে যে, কঠোর আইন প্রয়োগ করেও এর উৎপাদন ও ব্যবহার কোনোভাবেই কমিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে না। বিপরীতে প্লাস্টিকের অতিরিক্ত ব্যবহার ব্যাপক ক্ষতির কারণ হয়েও দাঁড়িয়েছে। সেখানে বায়ো-ডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক বিজ্ঞানীদের এক আশীর্বাদস্বরূপ আবিষ্কার বলা যায়। এই বায়ো-ডিগ্রেডেবল বা জীবাণুবিয়োজ্য প্লাস্টিক জৈবিক ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে অতি সহজেই ভেঙে ফেলা সম্ভব হবে। যা মাটি ও পানির সঙ্গে মিশে যাবে এবং পরিবেশের জন্য কম ক্ষতিকর হবে। এই প্লাস্টিককে নতুন প্রজন্মের প্লাস্টিক বলেও বিবেচিত করা হচ্ছে, যেটি প্রস্তুত করতে ব্যবহার হতে পারে আলু, ভুট্টা, ট্যাপিওকা, আখ, সয়াপ্রোটিন, ল্যাকটিক এসিড ইত্যাদি সামগ্রী।
সে কারণে বলা যায় যে, পরিবেশ রক্ষায় বায়ো-ডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকের ভূমিকা অপরিহার্য একটি বিষয়। প্লাস্টিকের ব্যবহার যেহেতু অপরিসীম হয়ে পড়েছে, তাই চলুন আমরা সবাই বায়ো-ডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক ব্যবহার শুরু করি। আমাদের এই পরিবেশকে বসবাসযোগ্য করে গড়ে তুলি। যা আমাদের আগামী পৃথিবীকে নতুন আলোর দিশা দেখাবে। যা পরিবেশের ওপর ইতিবাচক প্রভাবও ফেলবে এবং অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়নের পথও দেখাবে। তাই যতোটা সম্ভব বায়ো-ডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকের পণ্যের ব্যবহার আমাদেরকে বাড়াতে হবে।
লেখক: শিক্ষার্থী, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ। happynu52@gmail.com
তথ্যসূত্র: দৈনিক ভোরের কাগজ
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের সার্জিক্যাল মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।