দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মিশর ক্রমেই এগিয়ে যাচ্ছে গৃহযুদ্ধের দিকে। প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে সেনারা হত্যা করেছে ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি’র ১৫০ সমর্থককে।
এদিকে মিশরের এই রক্তাক্ত পরিস্থিতিতে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম হেগ। নিন্দা জানিয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান অ্যাশটন। মিশরের সেনা সমর্থিত অন্তর্র্বতী সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ ইব্রাহিম দাবি করেছেন, মুসলিম ব্রাদারহুড প্ররোচনা দেয়ায় গুলি করা হয়েছে। এ অবস্থায় মিশর এখন মূলত দু’ভাগে বিভক্ত। একদিকে সেনাবাহিনীর সমর্থনপুষ্ট গ্রুপ। অন্যদিকে কট্টর ইসলামপন্থি মুরসির মুসলিম ব্রাদারহুড। সেনা প্রধান ও অন্তর্র্বতী সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জেনারেল আবদেল ফাত্তাল আল সিসি জনগণকে মাঠে নামার আহ্বান জানানোর মধ্য দিয়ে দু’পক্ষ শক্তির পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে। বিক্ষোভ-পাল্টা বিক্ষোভ ও তাতে সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন ১২০ জন। হাসপাতালের মেঝে নিহত ও আহতদের রক্তে সয়লাব। গুলিতে অনেকের মাথার খুলি উড়ে গেছে। অসংখ্য মানুষের বিকৃত চেহারায় হাসপাতাল পূর্ণ।
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থার খবরে বলা হয়, মিশরের আকাশে-বাতাসে এখন শোকের ছায়া। কিন্তু সে শোক সেনাসমর্থিত অন্তর্র্বতী সরকারের ভয়কে উপেক্ষা করে পরিণত হয়েছে শক্তিতে। তাই বন্দুকের নলও দমন করতে পারছে না বিক্ষোভ। গতকাল ফজরের নামাজের আগে শুরু হয় এ হামলা। নিহত মানুষের রক্তে ভেসে যায় রাজপথ। এলোমেলো পড়ে থাকে মৃতদেহ। কোন কোন হাসপাতালে আহতদের নেয়ার পর মৃত্যু হয় অনেকের। এরপরও থেমে নেই মুরসি সমর্থকদের প্রতিবাদ। গতকাল দিনব্যাপী বিভিন্ন শহরে চলছিল তাদের বিক্ষোভ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহামেদ ইব্রাহিম সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, জনসমর্থন পেতে মুসলিম ব্রাদারহুড সহিংসতায় প্ররোচনা দিয়েছে। বেসামরিক জনতার ওপর সেনারা গুলি করেছে অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন। গতকাল কত মানুষ আসলে নিহত হয়েছেন তার সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায় নি। বিভিন্ন মাধ্যম নিহতের সংখ্যা নিয়ে এক এক তথ্য দিয়েছে। অনলাইন বিবিসি লিখেছে নিহত হয়েছেন শতাধিক। অনলাইন আল জাজিরা লিখেছে, কয়েক ডজন মানুষ নিহত হয়েছেন।
এদিকে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুরসিকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতের আগুনে জ্বলে উঠেছেন তার সমর্থকরা। এ অবস্থায় সেনাপ্রধান ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি বিক্ষোভকারীদের ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যায়িত করে শুক্রবার দেশবাসীকে রাজপথে নেমে র্যালি করার আহ্বান জানানোর কারণে সহিংসতা নতুন মাত্রা পেয়েছে। তারা শুক্রবার কায়রো সহ বিভিন্ন স্থানে রাজপথ দখলে রাখার পর রাতে ফিরে যায়। ওদিকে মুরসি সমর্থকরা পাল্টা বিক্ষোভ ডাকে। গতকাল ভোরে ফজরের নামাজের পর তাতে প্রকাশ্যে গুলি চালায় নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা।
অনলাইন আল জাজিরা লিখেছে, প্রতিবাদ সমাবেশের স্থানে একটি তাঁবুতে বিভিন্ন বার্তা সংস্থার লোকজন কমপক্ষে ৩০টি লাশ দেখতে পেয়েছেন। একটি হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলেছেন, কায়রোর নাসর সিটিতে রাবা আল আদায়িয়া মসজিদ এলাকায় অবস্থান ধর্মঘটের সময় কমপক্ষে ৭৫ মুরসি সমর্থককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ভোরের আলো ফুটে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে বিক্ষোভকারী ও নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় প্রতিবাদীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাথর ছুড়তে থাকে। জবাবে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। এলাকা পরিণত হয় রণক্ষেত্রে।
উল্লেখ্য, ৩ জুলাই মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর এটাই মিশরে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা। এর আগে ৮ই জুলাই মুরসি সমর্থকদের দিকে রিপাবলিকান গার্ড এলাকা থেকে প্রকাশ্যে গুলি ছোড়া হয়। সেদিন কমপক্ষে ৫৯ জন নিহত হন। আহত হন শ’ শ’ মানুষ।
ওদিকে মোহাম্মদ মুরসির মুক্তি দাবি করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান ক্যাথেরিন অ্যাশটন এত মানুষের প্রাণহানিতে গভীর নিন্দা জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে সব পক্ষকে সহিংসতা পরিহার করার আহ্বান জানিয়েছেন। সেনাসমর্থিত সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ ইব্রাহিত এর আগে ঘোষণা দেন দীর্ঘদিন অবস্থান ধর্মঘট করলে আইন অনুযায়ী তা বানচাল করে দেয়া হবে। এতে মুরসির অনুগতদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তাছাড়া, অন্তর্র্বতী সরকার হত্যার দায়ে অভিযুক্ত করে মোহাম্মদ মুরসিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ১৫ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে। এতে তার সমর্থকরা শক্তি সঞ্চয় করে নেমে পড়ে রাজপথে। গতকাল সকালে যখন মুরসি সমর্থকদের ওপর নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা গুলি ছুড়ছিল তখন মিশরের দু’টি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল সমপ্রচার করছিল আবহাওয়া সংবাদ ও টক শো। ৩রা জুলাই মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকে গতকাল পর্যন্ত বিক্ষুব্ধ নিহতের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ২০০তে।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালে মিশরের জনগণ যখন হোসনি মোবারককে ক্ষমতাচ্যুত করতে রাস্তায় নেমেছিলেন, তখন বিশ্লেষকদের কেও কেও মনে করেছিলেন হোসনি মোবারকের বদলে যাকে তারা ক্ষমতায় আনবে দুইবছরের মধ্যে তাকেও ক্ষমতাচ্যুত করতে রাস্তায় নামবে।
তাদের সেই ভবিষ্যৎবাণীকে সত্যি করতেই হয়তো মুরসির ক্ষমতা গ্রহণের একবছরের মধ্যে বিক্ষোভের মুখে সেনাবাহিনী তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে। থেমে নেই মুরসি সমর্থকরাও। তারা সেনা সমর্থিত সরকারকে প্রত্যাখ্যান করে মুরসিকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। চলমান সার্বিক পরিস্থিতিতে দেশটি গৃহযুদ্ধের দিকে এগুচ্ছে বলেই মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। তথ্য: বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকার।
This post was last modified on জুলাই ২৮, ২০১৩ 11:39 পূর্বাহ্ন
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ স্বপ্ন দেখে তা মনে রাখা সত্যিই দুষ্কর। আর তাই রাতের…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুভ সকাল। শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪ খৃস্টাব্দ, ৩০ কার্তিক ১৪৩১…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ অনেকই সুজি খেতে খুবই ভালোবাসেন। তাই তারা প্রতিদিন সুজির পায়েস,…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ প্রথমবারের মতো প্যান ইন্ডিয়ান চলচ্চিত্র বানিয়েছেন নির্মাতা অনন্য মামুন। ঢালিউড…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আপনার যদি প্রতিদিন চিকেন খাওয়ার অভ্যাস থাকে, তাহলে জেনে রাখুন,…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ কোটা সংস্কার আন্দোলনের সংগঠন ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’- এর অন্যতম সমন্বয়ক…