দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ একজন শিক্ষীকা। অথচ মহিলা হয়েও এতোদুর অর্থাৎ তাকে স্কুলে যেতে প্রতিদিন ৪৪ কিলোমিটার পাড়ি দিতে হয়!
আজকের কথা নয় ২০০৮ সালের কথা। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের এক শিক্ষিকা হাজির হয়েছিলেন তার নতুন চাকরির স্থান – ভুটানের তাদিং পাহাড়ের কোলে এক গ্রামের স্কুলে। সেখানে তিনি প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্ব পান। গ্রামের নাম হলো টোটোপাড়া। আদিম, অতি ক্ষুদ্র উপজাতি টোটোদের বাসভূমি ওই গ্রামটিতে। গ্রামটির উত্তরে ভুটান সীমান্ত, দক্ষিণে একশৃঙ্গ গণ্ডারের জন্য বিখ্যাত জলদাপাড়া অভয়ারণ্য, অপরদিকে তোর্ষা নদী। জলদাপাড়া অভয়ারণ্যের মূল আকর্ষণ একশৃঙ্গ গণ্ডার যেমন এক বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতি, তেমনই এই অঞ্চলের টোটোরাও।
গোটা জনজাতির বেশিরভাগ মানুষই দুরারোগ্য থ্যালাসেমিয়া বহন করে থাকেন, তাই এদের গড় আয়ু হলো ৩৫ হতে ৪০ বছর। সংখ্যায় কমতে কমতে ১৯৫১ সালের আদমশুমারিতে দেখা দেয় মাত্র ৩২১ জন টোটো জীবিত রয়েছেন। তাদের সংরক্ষণের জন্য বিশেষ কর্মসূচি নেওয়ার পরে এখন সংখ্যাটা বেড়ে হয়েছে প্রায় দু’হাজারের মতো।
সেই সময় স্কুলের যিনি সম্পাদক ছিলেন, ভাগীরথ টোটো, তিনি নতুন প্রধান শিক্ষিকাকে হাতজোড় করে বলেছিলেন যে, এখানে এসে কেওই বেশিদিন টিকে থাকতে পারেনি, তাই ছেলেমেয়েদের পড়াশোনাও আর ঠিকমতো হয় না। আপনি যেনো ছেড়ে চলে যাবেনা না কখনও।
সেই থেকে ওই প্রধান শিক্ষিকা ওই গ্রামের স্কুলেই রয়ে গেছেন, আবার সেখান থেকেই সরাসরি পৌঁছে গেছেন দিল্লিতে ভারতের রাষ্ট্রপতির সামনেও।
সম্প্রতি ওই প্রধান শিক্ষিকা, মিশা ঘোষালকে ভারতের রাষ্ট্রপতি সম্মানিত করেছেন জাতীয় শিক্ষক হিসেবে।
প্রতিবছর এই দিন ৫ সেপ্টেম্বর ভারতের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি ও দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি, জনপ্রিয় শিক্ষক সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কোন শিক্ষককে জাতীয় শিক্ষকের সম্মান দেওয়া হয়ে থাকে।
ওই শিক্ষীকার ছেলে, স্বামী থাকেন শিলিগুড়ি শহরে। তিনি বহুদূরের মাদারিহাটে থাকতেন একাই। বাড়ি থেকে স্কুলে পৌঁছাতে তাকে পেরুতে হয় ৩টি নদী, আরও অনেক ছোট বড় ঝোড়া ও ঘন জঙ্গল। বছর খানেক টোটোপাড়ার রাস্তাতেই একটা বাড়ি করে ফেলেছেন।
মিশা ঘোষাল বলেছেন, মাদারিহাট থেকে স্কুলে আসতে ২২ কিলোমিটার পথ পেরুতে হতো। মাঝে নদী, নালা, জঙ্গল সব কিছুই রয়েছে। নদী ভীষণ খরস্রোতা। পানি কমার জন্য অপেক্ষা করে থাকতে হয়। “একবার তো নদী পেরতে গিয়ে আমি প্রায় ভেসে যাচ্ছিলাম। একটি ছেলে ঝাঁপিয়ে পড়ে আমাকে না ধরে রাখলে হয়তো ভেসেই যেতাম। কখনও আবার ব্যাগ ও আমার চটি ভেসে গেছে। কিছুদিন আগে বড় একটা দুর্ঘটনাতেও পড়েছিলাম আমি। গাড়িতে নদীর শুকনো খাত পেরতে গিয়ে গাড়িই উল্টে যায়। ন’টা সেলাই করতে হয়েছে।
জঙ্গলের রাস্তা পার হতে গিয়ে কখনও পড়েছেন হাতির পালের সামনে। আবার কখনও চোখে পড়েছে চিতাবাঘ।
এতো কিছুর পরেও ওসব এখন আর কষ্ট বলে মনে হয় না। আবার আমি যে চেষ্টা করছি ওদের শিক্ষার মানটা বাড়াতে, সেটা বুঝে ছাত্রছাত্রীরাও আমাকে অসম্ভবভাবে ভালবাসে। তবে ছাত্রীদের সঙ্গে একটু বেশীই খাতির আমার,’ হাসতে হাসতে বলেন ঘোষাল।
যে বছর থেকে মিশা ঘোষাল ওই স্কুলের দায়িত্ব নিয়েছিলেন, সে বছর একজন মাত্র মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করতে পারে। আর যেবার তিনি জাতীয় শিক্ষকের সম্মান পেলেন, সে বছর পাশের হার দাঁড়িয়েছে ৮০%। ২০-২১ জনের মধ্যে ১৭ জনই মাধ্যমিক পাশ করেছে এবছর। এখন টোটো কচিকাঁচা মুখগুলো যেনো তার কাছে এক নেশা। তাই মিশা ঘোষালের পথ চলাও শেষ হয়নি আজ অবধি।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের সার্জিক্যাল মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর
অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।