দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আধুনিক নগররাষ্ট্র হিসেবে অধিক পরিচিত সিঙ্গাপুরে জায়গার অভাবে চাষবাস মূলত অসম্ভব। তবে তাতে কী হয়েছে? এবার মাছ চাষ হবে সিঙ্গাপুরে ৮ তলা ভবনে!
আমদানির ওপর নির্ভরতা কমাতে দেশটির সরকার নানা অভিনব পথ বেছে নিচ্ছেন। বিশেষ করে করোনা মহামারির সময় বিষয়টি বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
সিঙ্গাপুরে এক বহুতল ভবনের ৩২ তলায় উঠলেই দেশটির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যাবে। মায়া হরি সেখানে তরমুজ ও ফুলকপির বীজও লাগাচ্ছেন। তিনি ছাদের বাগানে মরিচ, বেগুন এবং কলার চাষ করছেন। প্রযুক্তি ক্ষেত্রে কর্মরত মানুষটি অনেকের তুলনায় বেশ এগিয়ে রয়েছেন।
সিঙ্গাপুরের সরকার পারলে হাইটেক নগররাষ্ট্রটিকে অ্যালটমেন্ট বাগানে ভরিয়ে দিতে চান। এই বিষয়ে মায়া হরি বলেছেন, ‘‘এখানে ঋতু না থাকলেও ক্রান্তীয় অঞ্চলের ফলমূল এবং শাকসবজি ফলানোর চেষ্টা করা যাবে। তবে সিঙ্গাপুরের বেশিরভাগ মানুষ ফ্ল্যাটেই থাকেন। সেখানে চাষবাস করা এক কথায় কঠিন। যে কারনে কাজটা খুব একটা সহজও নয়।’’
সরকার শুধু ভিডিও তৈরি করে বাসায় শাকসবজি ফলানোর কাজে উৎসাহ দিচ্ছে, তা নয়। বীজসহ নানা মাল-মশলা দিয়েও প্রায় দেড় লাখ ‘স্টার্টার কিট’ মায়ার মতো মানুষের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। নাগরিকদের এক সার্বিক পরিকল্পনার অংশ করে তোলার উদ্যোগও নেওয়া হচ্ছে।
এখন পর্যন্ত সিঙ্গাপুর নিজস্ব চাহিদা মেটাতে মাত্র ১০ শতাংশ খাদ্য উৎপাদন করে থাকে। ২০৩০ সালের মধ্যে দেশটির সরকার সেই মাত্রা ৩০ শতাংশে আনতে চাইছে। মায়া হরির ধারণা মতে, আরও বেশি স্বনির্ভরতাই যে সঠিক কৌশল, করোনা মহামারি তা দেখিয়ে দিয়েছে সকলকে। সিঙ্গাপুরের মানুষ খাদ্যের স্থানীয় উপকরণের প্রতি বেশি আগ্রহ দেখানোর কারণে সুবিধাই হচ্ছে।
শখের মালি হিসেবে মায়া হারি বলেছেন, ‘‘গোটা দেশ এবং নাগরিকদের উদ্বুদ্ধ করে অনেক প্রযুক্তি সম্বল করে ও আধুনিক পদ্ধতিতে গাছ বড় করার উদ্যোগের মাধ্যমে উৎপাদন আরও বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। শুধু বারান্দায় শাকসবজি ফলিয়ে সেই লক্ষ্যে পৌঁছানো না গেলেও সেটি একটা সূচনামাত্র।’’
সিঙ্গাপুরকে কৃষিভিত্তিক রাষ্ট্র হিসেবে কখনও ভাবা যায় না। অনেক দশক ধরে আর্থিক এবং অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত এই দেশটি বহুতল ভবনে ভরপুর। সবুজের সমারোহ সত্ত্বেও কৃষিকাজ যেনো অতীত যুগের কোনো কার্যকলাপই মনে হতো। তবে সিঙ্গাপুরের মানুষ এখন অন্যান্য দেশের ওপর নির্ভরতা কমাতে চাইছেন। জায়গার অভাব প্রকট হওয়ার কারণে ছাদের ওপর শাকসবজির খেত বানানোতে প্রস্তুত করা হচ্ছে। নতুন এই কৌশলের সুফল হাতেনাতে পাওয়াও যাচ্ছে।
বিজ্ঞাপন ক্ষেত্রের চাকরি ছেড়ে বিয়র্ন লো জনপ্রিয় এক শপিং মলের ছাদে ২০১৫ সাল হতে পেঁপে, রোজমেরি এবং প্যাশন ফ্রুট চাষ করে আসছেন। সেই সময় মানুষ হাসাহাসি করলেও এখন বিশেষজ্ঞ হিসেবে তার চাহিদা ক্রমেই বেড়ে চলেছে।
এই উদ্যোক্তা গোটা শহরজুড়ে প্রায় ২০০ এমন বাগান ইতিমধ্যেই তৈরি করেছেন। তিনি শিপিং কন্টেনারের মধ্যে নতুন প্রযুক্তি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন। যেমন ক্রান্তীয় জলবায়ু এলাকায় কেল বা পাতাকপি ফলানো সম্ভব না। তবে এখানে পুষ্টিকর দ্রবণ এবং সূর্যের বিকল্প হিসেবে এলইডি আলোর কল্যাণে বেশ কয়েকটি স্তরে খুব সহজেই এই সবজি ফলানো হচ্ছে। এমন ইতিবাচক প্রবণতার কারণে প্রতিবেশী দেশ মালয়েশিয়ার সঙ্গে প্রতিযোগিতা সম্ভবও হতে পারে। সেখানে অনেক কম অর্থ ব্যয় করে খাদ্য উৎপাদন করা হয়।
বিয়র্ন লো মনে করেন, তার ফলানো শাক-সবজির মধ্যে অনেক বেশি পুষ্টি বিদ্যমান বলে সেটি সম্ভব হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘‘ক্রেতাদের স্বাস্থ্যের জন্যও এটা আরও অনেক ভালো। সেই কারণে আমরা আমাদের শাক-সবজির জন্য বাড়তি ২০ বা ৩০ সেন্ট চাইতেই পারি। এভাবে সম্ভবত আমরা প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধাও পেতে পারি।’’
এদিকে সিঙ্গাপুরে মাত্র এক শতাংশ এলাকার মাটি প্রথাগত চাষের জন্য উপযুক্ত বলে ধরা হয়ে থাকে। সেই কারণে সরকারের মদতে চারদিকে বহুতল খামার গড়ে উঠছে। একটি ৮ তলা ভবনে অদূর ভবিষ্যতে মাছের চাষও করা হবে। অ্যাপোলো মেরিন নামে একটি কোম্পানি সেই কনসেপ্ট ইতিমধ্যেই প্রস্তুত করেছে। এখন পর্যন্ত এই কোম্পানি পথের অন্য প্রান্তে একটি ভবনে বছরে ৩০০ টন মাছ উৎপাদন করে আসছে। এবার দেশটির সরকারও বিনিয়োগকারী হিসেবে সেই উদ্যোগে যোগ দিয়েছে।’’
ভবিষ্যতে কোম্পানির চৌবাচ্চায় ১০ গুণ বেশি ক্লান্তীয় ট্রাউট মাছ চাষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। অ্যাপোলোর মতে, ইকোলজির দৃষ্টিভঙ্গিতে টেকসই প্রক্রিয়ায় চাষাবাদ করা হবে। এখানে ৯০ শতাংশ পানি পুনর্ব্যবহার করা যাবে। লকডাউনের সময় বিদেশ হতে তাজা মাছের সরবরাহে টান পড়ার কারণে অ্যাপোলো সিঙ্গাপুরের অনেক মানুষকে নতুন ক্রেতা হিসেবে পায়।
সংবাদ মাধ্যমকে অ্যাপোলো মেরিন কোম্পানির ক্রোনো লি বলেন, ‘‘মাছের প্রজননের সময় উপকূলে নানা রকম দূষণের সমস্যা ছিলো। বৃষ্টি, মাইক্রোপ্লাস্টিক, সমুদ্রে ভাসমান তেলের মতোই দূষণ দেখা যায়। আমাদের মতো প্রণালীর মধ্যে প্রজননের ক্ষেত্রে এমন দূষণের কোনো সমস্যা নেই।’’
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের সার্জিক্যাল মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর
অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।