দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ চার দশক আগে ইবোলা আবিষ্কারে সহায়তা দেওয়া এক বিজ্ঞানী সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন যে, মানবজাতি নতুন এবং সম্ভাব্য বেশ কয়েকটি প্রাণঘাতি ভাইরাসের মুখোমুখি হতে পারেন।
আফ্রিকার ক্রান্তীয় রেইনফরেস্ট থেকে এসব ভাইরাস ছড়াতে পারে বলে মনে করছেন তিনি। ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর দুর্গম একটি গ্রামে রক্তক্ষরণকারী জ্বরের লক্ষণে এক নারী আক্রান্ত হওয়ার পর ভীতি ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা জানাজারি পর এই সতর্ক বার্তা উচ্চারণ করেছেন ওই বিজ্ঞানী। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন’র প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা যায়।
গত কয়েক বছর ধরে সার্স, ইবোলা, নিপার মতো ভাইরাসের শিকার হয়েছেন বিশ্ববাসী। তবুও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বদৌলতে অবশেষে জয়লাভ করেছে মানবজাতি। তবে চলতি বছর করোনার থাবায় প্রাণ হারিয়েছেন গোটা বিশ্বে বহু মানুষ। তবে এখানেই শেষ নয়, বিশ্ববাসীর এখনও ঘা খাওয়ার অনেক বাকি রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কঙ্গোর জঙ্গলহতে খোঁজ পাওয়া গিয়েছে এক নতুন ধরনের রোগের, যা করোনার চেয়েও ১০ গুণ বেশি ভয়াবহ। এর উপসর্গ অনেকটাই ইবোলার মতোই। এই রোগের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ডিসিজ এক্স’।
কিনশাসা হলো কঙ্গোরই একটি স্থান। ওই স্থানে এক মহিলার বেশ কিছু দিন ধরেই ধূম জ্বর লেগে আছে। চিকিৎসকরা তাকে পরীক্ষা করে দেখছেন। করোনার কোনও ভাইরাস তার শরীরে মেলেনি। তবে তার রোগের লক্ষণগুলো অনেকটাই ইবোলার মতোই।
ওই মহিলাকে সম্পূর্ণ পৃথক রাখা হয়েছে। নিজের পরিবারের সঙ্গেও তার যোগাযোগ সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন রাখা হয়েছে। ব্রিটেনের সেলের মতো একটি ঘরে তাকে আইসোলেট করে রাখা হয়েছে। চিকিৎসকরা তার উপর নজর রাখছেন। ওই মহিলার পরিচয়ও গোপন রাখা হয়েছে, যাতে করে স্থানীয় লোকজন আতঙ্কিত হয়ে না পড়েন। তবে ভালো একটি দিক হলো, ইবোলার ভ্যাকসিনকেই প্রধান চিকিৎসার ওষুধ হিসেবে প্রয়োগ করা হচ্ছে এবং তাতে আপাতত এই রোগকে নিয়ন্ত্রণেও রাখা যাচ্ছে।
এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যে, এই যে রোগটি ধরা পড়েছে, এটা কী আদতেও ইবোলা? নাকি নতুন কিছু? সাধারণত একজন ইবোলায় আক্রান্তের ৫০-৯০% মৃত্যুর সম্ভাবনা থেকে যায়।
ওই মহিলার যিনি চিকিৎসা করছেন, সেই চিকিৎসক দাদিন বোঙ্কলে জানিয়েছেন, “আমরা খুবই ভয়ের মধ্যে রয়েছি। যে কোনও সংক্রমণ আমাদের কাছে প্রথমে নতুনই থাকে। সেটি করোনা হোক কিংবা ইবোলা! এই অজানা রোগটিও আমাদের কাছে বর্তমানে নতুন”।
অধ্যাপক জীন জ্যাকস মুয়েম্বে তামফুম যিনি ১৯৭৬ সালে প্রথম ইবোলা রোগের ভাইরাস চিনিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি জানিয়েছেন যে, মানুষ নতুন এক মারণ ভাইরাসের সম্মুখীন হতে চলেছেন। তিনি আরও বলেন, আগামী দিনে অতিমারি করোনার থেকেও অনেক বেশি শক্তিশালী হবে।
‘ডিসিজ এক্স’ এর চেহারা অনেকটা ইবোলার মতোই। আবার কিনশাসার, কঙ্গো ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ হতে ওই রোগীর রক্ত পরীক্ষা করে জানা গেছে যে, ইবোলার কোনও উপসর্গই নেই তার। মুয়েম্বের মতে, পশু বাহিত অনেক অজানা ভাইরাল এবং ব্যাকটেরিয়াল রোগই মানব দেহে প্রবেশ করতে চলেছে। ইয়েলো ফিভার, নিত্য নতুন ইনফ্লুয়েঞ্জা, রেবিস, ব্রুসেলোসিস ও লাইম ডিসিজ পশু পাখি হতে মানব দেহে প্রবেশ করে থাকে, যা ইতিহাসে অতিমারির কারণ হয়েছিল। এইচ.আই.ভি হলো শিম্পাঞ্জি বাহিত একটি রোগ যা পরে মিউটেট করে পরে হয়ে যায় আধুনিক মারক প্লেগে।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের সার্জিক্যাল মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর
অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।