দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ‘সার্স-কভ-২’ ভাইরাসেরই নতুন ভারতীয় রূপ যে শীঘ্রই ভয়াবহ সংক্রমণের কারণ হয়ে দাঁড়াতে যাচ্ছে, মার্চের গোড়ার দিকে বিজ্ঞানীরা বিষয়টি জানিয়েছিলেন ভারতের মোদী সরকারের শীর্ষ স্তরের আমলাদের।
সেই সময় জানানো হয়েছিলো যে, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অধীনে থাকা ‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (এনসিডিসি)’ এবং পরে সরাসরি ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্তাদের। সরকারকে তারা আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। তবে তার পরেও কেন্দ্র এই বিষয়ে নড়েচড়ে বসেনি বলেই সংবাদসংস্থা ‘রয়টার্স’-এর একটি বিশেষ রিপোর্টে দাবি করা হয়।
ভারতে সার্স-কভ-২ ভাইরাসের নতুন নতুন রূপ (‘ভেরিয়্যান্ট’) এবং তাদের সংক্রমণ ক্ষমতা নিয়ে সরকারকে সচেতন করার জন্য গত ডিসেম্বর মাসে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। যার পুরো নাম হলো- ‘ইন্ডিয়ান সার্স-কভ-২ জেনেটিক্স কনসর্টিয়াম (ইনসাকগ)’।
সেই কমিটির অন্তত ৫ জন বিজ্ঞানী সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছিলেন যে, ভাইরাসটির নতুন ভারতীয় রূপটি সম্পর্কে তারা মার্চের গোড়ার দিকেই জানিয়েছিলেন মোদী সরকারের শীর্ষ স্তরের কর্তাব্যক্তিদের। তখন তাদের পরামর্শ শোনেননি কর্তৃপক্ষ। নেওয়া হয়নি সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর কোনো রকম ব্যবস্থা। সরকারের এমন গাফিলতিই আজ কাল হয়েছে দেশটির জন্য।
বিজ্ঞানীরা সতর্ক করার কয়েক সপ্তাহ পরও ভারতের লাখ লাখ মানুষকে মাস্ক ছাড়াই কুম্ভমেলার মতো বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব-অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দেখা যায়। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ বিরোধী দলগুলোর নেতারাও একের পর এক সভা-সমাবেশ করেছেন এই সময়টিতে।
আবার মোদি সরকারের করা ৩টি কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে রাজধানী নয়া দিল্লির প্রান্তে লাখো কৃষকের কয়েক মাসের অবস্থান কর্মসূচিও চলে ওই সময়।
এসবের ধারাবাহিকতা এবং সরকারের উদাসীনতায় বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জনসংখ্যার দেশটিকে বর্তমানে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারত দেশব্যাপী দুই মাসের কঠোর লকডাউন দিয়ে মহামারির প্রথম ঢেউ বেশ ভালোভাবেই সামাল দিয়েছিল, তবে দ্বিতীয় ঢেউয়ে শনাক্ত রোগীর ঊর্ধ্বগতি দেশটির অনেক রাজ্যেই হাসপাতালে শয্যা সংকট এবং অক্সিজেনের সংকট সৃষ্টি করেছে, আবার পাওয়া যাচ্ছে না ওষুধও।
সংবাদ সংস্থার তথ্যমতে, সংক্রমণের ভয়াবহতার বিষয়ে মোদি সরকারকে মার্চের শুরুতে সতর্ক করেছিল ‘ইন্ডিয়ান সার্স-কভ-২ জেনেটিকস কনসোর্টিয়াম’। এই ফোরাম এমন একজন শীর্ষ কর্মকর্তার অধীনে রয়েছেন, যিনি সরাসরি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছেই জবাবদিহি করেন।
নাম না প্রকাশের শর্তে আইএনএসএসিওজির এক গবেষক বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এসব তথ্য দিয়েছেন। তবে বিজ্ঞানীদের সেই সতর্কবার্তা নরেন্দ্র মোদির কাছে আদৌতে পৌঁছানো হয়েছিল কি না তা অবশ্র নিশ্চিত হতে পারেনি বার্তা সংস্থাটি।
উল্লেখ্য, ভারতে বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ। সেখানে প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছেন ৪ লাখের উপরে। প্রতিদিন মারা যাচ্ছে প্রায় চার হাজার মানুষ। হাসপাতালে জায়গা নেই, অক্সিজেন নেই, মৃতদেহ দাহ করার সংকটসহ নানা সংকটে দিশেহারা পুরো ভারত।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের সার্জিক্যাল মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর
অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।