দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মহামারি করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ করতে পারে এমন একটি জীবাণুনাশক স্প্রে আবিষ্কার করেছেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত এক তরুণ ব্রিটিশ বিজ্ঞানী। ২৬ বছর বয়সী সাদিয়া খানম দেড় বছর গবেষণার পর ‘ভলটিক’ নামে এই জীবাণুনাশক তৈরি করেছেন।
এই জীবাণুনাশক যে কোনো বস্তুর সারফেসে স্প্রে করা হলে সেটি ২ সপ্তাহের জন্য জীবাণুমুক্ত থাকবে। কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবেলায় এই উদ্ভাবনকে বড় ধরনের সাফল্য হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে এবং ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থা এনএইচএসসহ বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা নিরীক্ষার পর এটি অনুমোদন দিয়েছে। ব্রিটেনে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দেওয়ার পর সাদিয়া খানম তার পিএইচডি গবেষণা স্থগিত রেখে উত্তর পশ্চিম ইংল্যান্ডের চেশায়ারে তার পিতার রেস্তোরাঁয় এই ভাইরাসটি নিয়ে প্রাথমিকভাবে গবেষণা শুরু করেছিলেন।
গবেষণায় এই ভাইরাসটিকে ধ্বংস করার জন্য তিনি নানা রকম সমীকরণের সন্ধান করতে থাকেন। এক পর্যায়ে এরকম একটি কার্যকরী ইকুয়েশন উদ্ভাবন করতে তিনি সক্ষম হন। গবেষক এর নাম দিয়েছেন ‘ভলটিক’, যা সংক্রামক রোগজীবাণু নাশের একটি প্রক্রিয়া ও এটি উচ্চমানের সুরক্ষাও দিয়ে থাকে। বিশেষ একটি মেশিন দিয়ে এই তরল স্প্রে করতে হবে। এই পুরো প্রক্রিয়াটির নামই হলো ভলটিক।
ভলটিক আসলে কী?
গবেষক সাদিয়া খানম বলেছেন, ‘এই জীবাণুনাশ প্রক্রিয়ার একটি অংশ হলো- কোনো জীবাণু যদি কোনো কিছুর সংস্পর্শে আসে তখন তাকে ধ্বংস করে ফেলা হয়। অর্থাৎ কোনো কিছুর পৃষ্ঠ বা সারফেসের ওপর যদি কোনো ভাইরাস থেকে থাকে, এর সাহায্যে তাকে সঙ্গে সঙ্গেই মেরে ফেলা যায়। এটি চামড়া থেকে শুরু করে কাঠ, লোহা ও কাপড়- সব ধরনের সারফেসের ওপর কাজ করে বলে গবেষণায় দেখতে পেয়েছি।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘এই প্রক্রিয়ায় কোনো কিছুর সারফেসের ওপর একটি কোভ্যালেন্ট বন্ড তৈরি হয় যা সেখানে ১৪ দিনের জন্য একটি শক্ত প্রাচীরও তৈরি করে। এই বন্ডটি খুবই শক্তিশালী, কোনো কিছুই যেনো এটিকে ভাঙতে পারে না। এভাবে এটি টানা ২ সপ্তাহের জন্য যে কোনো জীবাণু থেকে সুরক্ষা দিয়ে থাকে। এইসব জীবাণুর মধ্যে রয়েছে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক, করোনা ভাইরাস, ইবোলা ভাইরাস, এইচআইভি-বি ইত্যাদি।’
কীভাবে কাজ করে এটি
গবেষক সাদিয়া খানম জানিয়েছেন, এই ভলটিক স্প্রে খুবই উচ্চ-চাপের মধ্যেও কাজ করে। নানা ধরনের প্রয়োগের কারণে এর বিভিন্ন রকমের উপকারিতা রয়েছে, বিশেষ করে এর বৈজ্ঞানিক উপকারিতা।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি এমন একটি জিনিস তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি, যা যে কোনো জীবাণুকে ধ্বংস করতে সক্ষম, ধ্বংস করতে পারে জীবাণুর ডিএনএ ও যে কোনো ধরনেরই ডিএনএ।’
বর্তমানে বাজারে যেসব জীবাণুনাশক পাওয়া যায় তার বেশিরভাগই খুব বেশি একটা সময় ধরে সুরক্ষা দিতে পারে না। তবে বিজ্ঞানী সাদিয়া খানম দাবি করছেন যে, তার এই ভলটিক স্প্রে অন্যান্য জীবাণুনাশকের চেয়ে আলাদা। একবার স্প্রে করার পর সেটি ১৪ দিন পর্যন্ত কার্যকর থাকে।
যেভাবে গবেষণার শুরু
ব্রিটেনে করোনা ভাইরাস মহামারি শুরু হওয়ার পরই সাদিয়া খানম এই নিয়ে গবেষণা করতে শুরু করেন। তিনি আলঝাইমার্স রোগের ওপর পিএইচডি গবেষণা শুরু করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু মহামারি শুরু হলে তিনি সেসব বাদ দিয়ে করোনা ভাইরাস মোকাবেলার উপায় খুঁজতে শুরু করে দেন।
তিনি বলেছেন, ‘করোনা ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দেওয়ার পর তার পিতার রেস্তোরাঁ ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে। তখনই তিনি এর প্রতিকার খুঁজতে নেমে পড়েন।
পিতার রেস্তোরাঁতেও ভলটিক স্প্রে ব্যবহার করে তিনি আংশিক গবেষণা চালান। এই রেস্তোরাঁকেই তিনি ব্যবহার করেছেন গবেষণার একটি কেস স্টাডি হিসেবে।
উল্লেখ্য, সাদিয়া খানম স্যালফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বায়োমেডিকেল সায়েন্স ও চেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে জিনোমিক মেডিসিন বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন।
# বিবিসি বাংলা অবলম্বনে।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের সার্জিক্যাল মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর
অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।