স্বাস্থ্য কথা

কোভিড টেস্ট কেনো আরও সহজতর করা হচ্ছে না

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ করোনা পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। বর্তমানে প্রতিদিন আড়াইশর বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটছে। আক্রান্ত হচ্ছে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ। এমন পরিস্থিতির পরও কেনো কোভিড টেস্ট সহজতর করা হচ্ছে না? সেই প্রশ্ন সকলের।

করোনা পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। বর্তমানে প্রতিদিন আড়াইশর বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটছে। আক্রান্ত হচ্ছে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ। এমন পরিস্থিতির পরও কেনো কোভিড টেস্ট সহজতর করা হচ্ছে না? সেই প্রশ্ন সকলের।

এতোদিন মাত্র ১০ থেকে ১৫ হাজার টেস্ট করা হলেও গত কয়েকদিন অবশ্য একটু বেড়েছে। বর্তমানে ৫০ হাজারের কিছু উপরে টেস্ট করা হচ্ছে। এটি একটি ভালো দিক। তবে বিশেষজ্ঞরা এই টেস্টের পরিধি আরও বাড়ানোর কথা বলেছেন। তারা বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রতিদিন বিশেষ করে বাংলাদেশের লোকসংখ্যার প্রেক্ষাপটে প্রতিদিন অন্তত দুই লাখ টেস্ট করা দরকার। কিন্তু সেইভাবে আমাদের দেশে টেস্ট হচ্ছে না। আর টেস্ট না হওয়ার কারণে পারিবারিকভাবে ও কমিউনিটি আক্রান্তের সংখ্যাও ক্রমেই বাড়ছে।

টেস্টের বেহাল অবস্থা

বর্তমানে বিশেষ করে রাজধানীতে টেস্টের এক বেহাল অবস্থা চলছে। যেমন কুর্মিটোলা হাসপাতালের কথায় ধরা যাক। সেখানকার পরিবেশ অত্যন্ত সুন্দর। অনেক খোলামেলা জায়গা থাকার কারণে বেশ নিরাপদে সেখানে টেস্ট করা যায়। কিন্তু সেখানে লোকবল কম থাকায় কম পরিমাণ টেস্ট প্রতিদিন করা হয়। সেখানে টেস্ট করতে হলে আগের দিন সকাল ৯টা থেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। তাদের সাইট http://kgh.gov.bd/ এর মধ্যে ঢুকে দেখা যায় ৯টার পর তখনও খোলা হয়নি। ১০টায় ঢুকেও দেখা যায় তখনও সাইট ওপেন হয়নি। তারপর কেও হয়তো আধা ঘণ্টা পর খুলে দেখলেন এই আধা ঘণ্টার মধ্যে শেষ হয়ে গেছে! অর্থাৎ তারা খোলার সঙ্গে সঙ্গেই নির্ধারিত সংখ্যায় রেজিস্ট্রেশন শেষ হয়ে গেছে। খুব কম সংখ্যক পরীক্ষা করার কারণে এমনটি হচ্ছে। কিন্তু এভাবে টেস্ট পদ্ধতি রাখলে মানুষ জ্বর হলে বা লক্ষণ দেখা গেলে কিভাবে টেস্ট করবেন। কিভাবে জানতে পারবেন। আর একজন আক্রান্ত ব্যক্তি না জানতে পারলে তিনি যেমন সংক্রমণ ছড়াবেন তেমনি নিজেও অসুস্থ্য হয়ে পড়বেন।

জনৈক ব্যক্তি অভিযোগ করলেন তার ছেলে (২৫/২৬ বছর বয়সী) ঈদের আগে জ্বর-কাশি হয়। তাকে ৫/৬ দিনের মধ্যেও ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় বসবাস করার পরও টেস্ট করতে পারেননি। কারণ কুর্মিটোলার ওই সাইটটি তিনি খোলায় পাননি। আবার কখনও খোলা পেলে শেষ হয়ে গেছে বলে রেজিস্ট্রেশন করতে পারেননি। তারপর তার ছেলের অক্সিজেন লেভেল নেমে যায়। পরে যখন তিনি হাসপাতালে নেন। কুর্মিটোলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখনে ভর্তির পর তাকে চিকিৎসাই দেওয়া সম্ভব হয়নি টেস্টের জন্য। লক্ষণ পুরোপুরি কোভিডের থাকলেও চিকিৎসকরা টেস্ট রিপোর্ট না থাকায় চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। তারপর দুই দিন লেগেছে কুর্মিটোলা হাসপাতালে থেকেও টেস্ট করতে। পরে যখন পজেটিভ এলো তখন তার অক্সিজেন মারাত্মক আকারে নেমে গিয়েছে (৮০ তে)। তারপর তার চেষ্ট সিটি স্ক্যান করে দেখা গেলো তার লাঞ্চ ৬৫ পার্সেন্ট অকেজো হয়ে গেছে। তখন তাকে ইনজেকশন দেওয়া হলো। তবে এর মধ্যে যা ক্ষতি হওয়ার তা হয়েই গেছে! পরে কুর্মিটোলায় আইসিও না থাকায় তাকে উত্তরার একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিউতে ভর্তি করা হয়। তার অবস্থা এখন সংকটাপন্ন।

করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে টেস্ট পদ্ধতি আরও সহজতর করতে হবে। প্রয়োজনে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে স্বাস্থ্যকর্মীর মাধ্যমে টেস্ট পদ্ধতি চালু করতে হবে। অন্তত নমুনা সংগ্রহ করে সেগুলো হাসপাতালে নিয়ে পরীক্ষা করা যেতে পারে। যদি টেস্ট পদ্ধতি সহজ হয় তাহলে মানুষ বেশি বেশি টেস্ট করাতে পারবেন। কারও জ্বর হলেও টেস্ট করলে তখন আইসোলেশনে চলে যেতে পারবেন। এতে করে সংক্রমণ আর ছড়াবে না। পিসিআর টেস্ট হোক আর রেপিড টেস্ট হোক টেস্ট বাড়াতে হবে। এতো ঝামেলা হলে মানুষ টেস্টের দিকে যাবে না। যে কারণে সংক্রমণ আরও বাড়তেই থাকবে। শুধু কঠোর লকডাউনে তেমন একটা ফল আসবে না। এর কারণ হলো এবার গ্রামে গঞ্জেও ছড়িয়ে গেছে করোনা। গ্রামের মানুষতো জ্বরকে সাধারণ জ্বর হিসেবেই দেখছেন। তাই গ্রামে-গঞ্জেও টেস্ট করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে করোনা পরিস্থিতি আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো না। ঘরে ঘরে যেমন স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে তেমনি টেস্ট করার জন্য সবাইকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। আর টেস্ট পদ্ধতি সহজ হলে একটু জ্বর হলেই টেস্ট করাবে।

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়

# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের সার্জিক্যাল মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।

This post was last modified on জুলাই ২৮, ২০২১ 3:01 অপরাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার

Recent Posts

গাজা এবং লেবাননজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৪৫

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ড এবং লেবাননজুড়ে ভয়াবহ হামলা চলমান রেখেছে…

% দিন আগে

এখন থেকে বড় পর্দায় দেখা যাবে রাতের স্বপ্ন!

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ স্বপ্ন দেখে তা মনে রাখা সত্যিই দুষ্কর। আর তাই রাতের…

% দিন আগে

রাজবাড়ী বড় মসজিদ

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুভ সকাল। শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪ খৃস্টাব্দ, ৩০ কার্তিক ১৪৩১…

% দিন আগে

পুষ্টিবিদরা যা বলেন: সুজি খাওয়া উপকারী নাকি ক্ষতিকর?

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ অনেকই সুজি খেতে খুবই ভালোবাসেন। তাই তারা প্রতিদিন সুজির পায়েস,…

% দিন আগে

বাংলা এবং হিন্দিতে ‘দরদ’-এর ট্রেলার ও গান প্রকাশ [ট্রেলার]

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ প্রথমবারের মতো প্যান ইন্ডিয়ান চলচ্চিত্র বানিয়েছেন নির্মাতা অনন্য মামুন। ঢালিউড…

% দিন আগে

মুরগির লেগপিস প্রতিদিন খাওয়া কী ভালো?

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আপনার যদি প্রতিদিন চিকেন খাওয়ার অভ্যাস থাকে, তাহলে জেনে রাখুন,…

% দিন আগে