দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মানুষের বয়:সন্ধিকাল সবথেকে স্পর্শকাতর সময়। একজন মানুষের ১৩ বছর হতে ১৯ বছর অব্দি বয়সকেই বয়:সন্ধিকাল হিসেবে ধরা হয়। বয়:সন্ধিকালের খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে যা করতে হবে তা আজ তুলে ধরা হলো।
বয়:সন্ধিকাল ছেলে এবং মেয়ে উভয়ের জন্যই সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ছোট থেকে বড় হওয়ার এই সময়টিতে কিশোর-কিশোরীদের শারীরিক এবং মানসিক ব্যাপক পরিবর্তন দেখা দেয়। এই বয়সের কিশোর-কিশোরীরা অনেকটাই আবেগপ্রবণ বা অভিমানী হয়ে ওঠে। তাদের আনন্দ, দুঃখ, রাগ এবং সুখের অনুভূতিগুলো এই সময় তীব্র হয়।
বয়:সন্ধিকালে হরমোনের তারতম্যের কারণে আবেগের তারতম্যও ঘটে থাকে, মুড সুইং কিংবা মন মেজাজও খুব দ্রুত ওঠানামা করে। তাই এই সময় তাদেরকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারলে তারা যেমন সুন্দর ভবিষ্যতের অধিকারী হবে, ঠিক তেমনি জাতিও একটি সুস্থ স্বাভাবিক মানবগোষ্ঠী পাবেন।
এই সময় শারীরিক ও মানসিক সুস্থতায় যেসব খাবার খেতে হবে:
# সঠিক ওজন এবং উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য চাই সঠিক পরিমাণে ক্যালরি গ্রহণ করতে হবে। এই বয়সটিই প্রতিটি মানুষের সঠিক ওজন ও উচ্চতা বাড়ার মোক্ষম সময়। সেজন্যই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালরি নিশ্চিন্ত করতে হবে। মেয়েদের জন্য দৈনিক ১৬০০ কিলোক্যালরি হতে শুরু করে ২২০০ কিলো ক্যালরি এবং ছেলেদের জন্য দৈনিক ১৮০০ কিলো ক্যালরি হতে ২৬০০ কিলো ক্যালরি খাবার অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে। এই পরিমাণে ক্যালরি তাদের এনার্জি দেওয়ার পাশাপাশি উচ্চতা বৃদ্ধি এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করবে। তবে এই পরিমাণে ক্যালরি অবশ্যই পুষ্টিকর সুষম খাবারের মাধ্যমে গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজন মতো ভাত-রুটি, ডিম, মাছ-মাংশ, ডাল, বাদাম, দুধ, তাজা শাক সবজি এবং ফলমূল গ্রহণ করতে হবে ও এর সঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশুদ্ধ পানিও পান করতে হবে।
সুষম খাবার গ্রহণই নয়, সেই সঙ্গে শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে। নিয়মিতভাবে হাঁটাহাটি, খেলাধুলা বা টুকিটাকি ঘরের কাজ-কর্মও করতে হবে।
# এই সময় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ভিটামিন সি যুক্ত তাজা শাকসবজি ও ফলমূলের বিকল্প নাই। তাজা শাকসবজি এবং ফলমূলে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকার কারণে সব ধরণের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে থাকে। কিশোর-কিশোরীরা পর্যাপ্ত পরিমাণ শাকসবজি ও ফলমূল খেতে চায় না যে কারণে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে বলে বিভিন্ন ধরণের রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। সবুজ ও নানান রঙের শাকসবজি খেলে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন মিনারেল ফাইবার-এর পাশাপাশি ভালোমানের অ্যান্টিঅক্সিডেন্টও পাওয়া যাবে। এইসব খাবার বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে কার্যকরেও ভূমিকা রাখে।
# এই সময় কিশোর-কিশোরীদের শারীরিক বিকাশের পাশাপাশি মানসিক বিকাশে সরাসরি প্রভাবিত করে এমন সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এই সময় কিশোর-কিশোরীর মানসিক বিকাশের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন এ, ভিটামিন ই, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড ও পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়োডিনযুক্ত খাবার গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়। কারণ আয়োডিনের ঘাটতিতে কিশোর-কিশোরীদের বুদ্ধিহীনতা, স্মৃতিশক্তি হ্রাস এবং মানসিক প্রতিবন্ধকতা দেখা দিতে পারে। দীর্ঘদিন এর ঘাটতি হলে হতে পারে গলগণ্ড, মেয়েদের সন্তান ধারণের জটিলতা ইত্যাদি। সে কারণে আয়োডিন সমৃদ্ধ খাবার, যেমন- সামুদ্রিক মাছ সপ্তাহে অন্তত ২ হতে ৩ দিন খেতে হবে।
# আমরা জানি প্রোটিন শরীরে বেশি বৃদ্ধি এবং অ্যান্টিবডি তৈরি করতে সহায়তা করে থাকে, যা সাধারণত ১১ হতে ১৮ বছর বয়সের মধ্যে দ্বিগুণ হয়। উভয়ের জন্য ১.০ হতে ১.২ গ্রাম প্রোটিনই যথেষ্ট। এই বয়সেও উচ্চমানের প্রোটিন অর্থাৎ ফার্স্ট ক্লাস প্রোটিন ও উদ্ভিজ প্রোটিন, দুধের প্রোটিন গ্রহণ করতে হবে। তাই কিশোর-কিশোরীদের দৈনিক খাদ্য তালিকায় মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, কলিজা ও বিভিন্ন ধরনের ডাল, বাদাম, সিমের বিচি, ছোলা, মাশরুম, মটরশুটি ইত্যাদি রাখতে হবে।
# কিশোর-কিশোরীদের হাড় এবং দাতের সুগঠনে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি-এর প্রয়োজন রয়েছে। পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার খেলে ভবিষ্যতে অস্টিওপরোসিস-এর ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করবে। এই জন্য প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় দুধ এবং দুগ্ধজাত খাবার, বাদাম, কুসুমসহ ডিম, কাঁটাযুক্ত ছোট মাছ, সামুদ্রিক মাছ, সবুজ রঙের পাতা জাতীয় শাক সবজি অবশ্যই রাখতে হবে।
# ১১ বছর হতে ১৯ বছর বয়সে কিশোর-কিশোরীদের শরীরে নানা রকমের হরমোনজনিত পরিবর্তন দেখা দিতে পারে। যেমন- মেয়েদের পিরিয়ড হওয়া ও ছেলেদের মুখের লোম গজানো, কণ্ঠ গম্ভীর হয়ে যাওয়া ইত্যাদি নানা লক্ষণ।
তাই এই সময় সঠিক পুষ্টি না পেলে রক্তস্বল্পতা দেখা দিতে পারে, এ থেকে রক্ষা পেতে হলে শরীরে রক্ত তৈরির জন্য পর্যাপ্ত আয়রণ এবং ফলিক অ্যাসিড প্রয়োজন। তাই মেয়েদের নিয়মিত ডিম, মাংস, কিসমিস, খেজুর, আনার, সফেদাসহ বিভিন্ন রকমের ফল এবং সবুজ শাক-সবজি, যেমন: কচু শাক, লাল শাক, পালং শাক, পাতা যুক্ত সবজি এবং সব ধরণের ডাল ও বীজ ও বীজ জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে।
# লেখক- শামসুন নাহার স্মৃতি, ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিষ্ট এন্ড ডায়েটিশিয়ান, উত্তরা ক্রিসেন্ট হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, উত্তরা, ঢাকা।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের কাপড়ের মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।