দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মিসর আবারও রক্তাক্ত নগরীতে পরিণত হয়েছে। মাত্র একদিনের মধ্যে সেখানে নিহত হয়েছে ৫২৫ জন, আহত হয়েছে ৪ হাজারের মতো।
এদিকে মিসরে সরকারের রক্তাক্ত অভিযানের পরও ফের বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির সমর্থকরা। তারা গতকাল একটি সরকারি ভবনে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। পুলিশ এদের লক্ষ্য করে গুলি করবে বলে সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এর একদিন আগে সরকার বুলডোজার দিয়ে সমর্থকদের দুইটি ক্যাম্প গুঁড়িয়ে দেয় এবং গুলিবর্ষণ করে। এতে ৫২৫ জন নিহত এবং চার হাজারের মতো ব্যক্তি আহত হয়েছে বলে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গতকাল বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে। তবে মুসলিম ব্রাদারহুড জানিয়েছে, মৃতের সংখ্যা দুই হাজারের ওপরে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাসহ বিশ্ব নেতৃবৃন্দ রক্তাক্ত এ অভিযানের চরম নিন্দা জানিয়েছেন। গতকাল এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দুর্ভাবনা নিয়ে মিসরের জনগণ তাদের দিন শুরু করেছেন।
খবর বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, গতকাল মুরসির রাজনৈতিক দল মুসলিম ব্রাদারহুডের সমর্থকরা সরকারি অভিযানে বহু মানুষ হতাহত হওয়ার প্রতিবাদে কায়রোর গিজা শহরের একটি সরকারি ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয়। দেশটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সরকারি ভবনে এবং নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা হলে পুলিশ হামলাকারীদের লক্ষ্য করে গুলি করবে। সেনা অভিযানে রক্ত-বন্যা বয়ে যাওয়ার পরও কায়রোয় ফের অনুসারীদেরকে বিক্ষোভে নামার ডাক দিয়েছে দলটি। ব্রাদারহুডের মুখপাত্র গেহাদ এল-হাদ্দাদ তার টুইটার বার্তায় লেখেন, আমরা সবসময়ই অহিংস এবং শান্তিপূর্ণ থাকব। অবিচল থাকব। সেনা অভ্যুত্থানের পতন না ঘটানো পর্যন্ত আমরা সামনে এগিয়ে যাব।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মোহাম্মেদ ফাতাল্লাহ সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, বুধবারের (১৪ আগস্ট) সহিংসতায় সারা দেশে ৫২৫ ব্যক্তি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ৩ হাজার ৭শ ১৭ জন। সরকার বলছে, সারাদিনের সহিংসতায় পুলিশের ৪৩ জন সদস্যও নিহত হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী বুধবার কায়রোর দুইটি জায়গা থেকে মুরসির সমর্থকদের উৎখাত করলে সারা দেশে রক্তাক্ত সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে। রাজধানী কায়রোসহ অন্যান্য শহরে বুধবার রাতে কারফিউ জারি করা হয়। এর পাশাপাশি সারা দেশে এক মাসব্যাপী জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। গতকাল ১৫ আগস্ট সকাল ৬টা পর্যন্ত কারফিউ বলবৎ ছিল। কারফিউ শেষ হওয়ার পর নিহতদের শত শত আত্মীয়স্বজন নাস্র সিটির এক মসজিদে জড়ো হয়েছেন মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য। অনেকেই অভিযোগ করছেন, নিহতদের মৃত্যুর কারণ জানিয়ে হাসপাতাল থেকে ডেথ সার্টিফিকেট দেয়া হচ্ছে না। এদিকে ব্রাদারহুডের কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ব্রাদারহুডের গতকাল একটি প্রতিবাদ মিছিল করার পরিকল্পনা ছিলো। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিসরে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ায় দেশটিতে সফর এড়ানোর জন্য পর্যটকদের প্রতি আহবান জানিয়েছে।
সরকারের দুঃখ প্রকাশ
অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধানমন্ত্রী হাজেম এল বেবলাউয়ি এক টেলিভিশন বার্তায় এই হতাহতের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, যতো শিগগিরই সম্ভব জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করা হবে। সেনা অভিযানের পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনতে এ ধরনের পদক্ষেপ নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছিল। তিনি বলেন, প্রয়োজন না হলে কোন দেশই জরুরি অবস্থা জারি করতে চায় না।
সারা বিশ্বে নিন্দার ঝড়
মিসরের নিরাপত্তা বাহিনীর এক ব্যাপক রক্তক্ষয়ী অভিযানের নিন্দা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, তুরস্ক মিসরে সহিংসতার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিবের দপ্তর থেকে দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়, বিক্ষোভকারীদের ওপর মিসর কর্তৃপক্ষের বলপ্রয়োগের ঘটনায় বান কি মুন মর্মাহত। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এক বিবৃতিতে এই অভিযানের চরম নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি আগামী মাসে অনুষ্ঠিতব্য মিসরের সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর নির্ধারিত সামরিক মহড়া বাতিল করার কথা জানিয়েছেন। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, দেশটির সরকার যদি ফের এ ধরনের রক্তাক্ত পথের দিকে যায় তাহলে তা হবে একটি বিপজ্জনক পথ। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান ক্যাথেরিন অ্যাস্টন মিসরে সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে সব পক্ষকে সর্বোচ্চ সহনশীলতা দেখানোর আহ্বান জানান। সহিংসতায় কোনো সমাধান আসবে না জানিয়ে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেন, সত্যিকার অর্থে ক্ষমতার রদবদল ও গণতন্ত্রের জন্য সব পক্ষকে ছাড় দিতে হবে। ফ্রান্সও মিসরে অবিলম্বে দমনাভিযান বন্ধের আহ্বান জানায়। তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী রেসেপ তায়েপ এরদোয়ান মিসরের সহিংসতাকে গণতন্ত্রে ফেরার পথে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা বলে উল্লেখ করেন। জার্মানিও মিসর পরিস্থিতিকে ভয়াবহ এবং বিপজ্জনক বলে অভিহিত করেছে।
উল্লেখ্য, গত ৩ জুলাই মুরসিকে ক্ষমতা থেকে সেনাবাহিনী সরিয়ে দেয়ার পর থেকে তাঁকে পুনর্বহালের দাবিতে কায়রোর রাব্বা আল-আদাবিয়া মসজিদের পাশে এবং কায়রোর কেন্দ স্থলে আল-নাহদা স্কয়ারে অবস্থান নিয়ে আসছিল ব্রাদারহুডের কর্মী-সমর্থকেরা। তাদের হটাতে এর আগে গত ২৭ জুলাই রাব্বা আল-আদাবিয়া মসজিদের পাশে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে প্রায় ৮০ জন নিহত হয়। এর পরও সরকার সেখান থেকে তাদের সরাতে পারেনি। বুধবার খুব সকালে ওই দুই স্থান ঘিরে বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোঁড়েন। নিরাপত্তা বাহিনীর ছোঁড়া কাঁদানে গ্যাসের শেল দ্রুত তুলে নিয়ে উল্টো তাঁদের দিকে ছোঁড়ে বিক্ষোভকারীরা। এর পরই দুই পক্ষে শুরু হয় তুমুল গোলাগুলি। একপর্যায়ে নাহদা স্কয়ার থেকে বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে দিতে সক্ষম হয় নিরাপত্তা বাহিনী। সেখানকার অস্থায়ী তাঁবুগুলো বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। সংঘর্ষ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে রাজধানীর অন্যান্য অংশেও।
This post was last modified on আগস্ট ১৬, ২০১৩ 11:11 পূর্বাহ্ন
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) সদস্যদের জন্য…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ৩ স্ত্রী, ২ বান্ধবী, ১০ সন্তানকে নিয়ে সংসার বেকার যুবকের!…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুভ সকাল। মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর ২০২৪ খৃস্টাব্দ, ২০ কার্তিক ১৪৩১…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সাধারণতভাবে দেখা যায়, বেশিরভাগ মহিলা রক্তাল্পতার ঝুঁকিতেই ভোগেন। পিরিয়ডের সময়…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ খুব শীঘ্রই মোবাইল ফোন চার্জ দেওয়ার ঝামেলার অবসান ঘটতে চলেছে।…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সাপ্লিমেন্ট যখন খুশি তখন খাওয়া যায় না। কোন ভিটামিন কিংবা…