টিটিই বরখাস্তের ঘটনায় তোলপাড় পুরো দেশ

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আমরা সবাই জানি বিনা টিকিটে রেল ভ্রমণ রেলের আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ। তারপরও বিনা টিকেটের সেই যাত্রীই আবার জরিমানা গোনার পর ঢাকায় গিয়ে অভিযোগ করেন। রেলের কর্মকর্তারাও সেই অভিযোগের সত্যতা যাচাই না করেই টিটিই কে বরখাস্ত করলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

তিন যাত্রী টিকিট ছাড়া ঈশ্বরদী স্টেশন থেকে সুন্দরবন এক্সপ্রেসের এসি কামরায় উঠেছিলেন। টিটিই শফিকুল ইসলাম টিকিট পরীক্ষা করতে এসে দেখেন তারা বিনা টিকিটের যাত্রী। নিয়ম অনুযায়ী তাদের জরিমানা করেই সাধারণ আসনে বসিয়ে দেন। তবে বাদ সাধেন যাত্রীরা। তারা রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনের আত্মীয় বলে পরিচয় দেন। বিতণ্ডায় জড়ান রেল কর্মীর সঙ্গে। ঢাকায় ফিরে যাত্রীদের একজন তাদের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ করেন ওই টিটিই শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার রাতের এই ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সাময়িক বরখাস্ত করা হয় ওই টিটিই শফিকুল ইসলামকে। এই ঘটনা জানাজানি হলে তোলপাড় শুরু হয় সারা দেশজুড়ে। টিভি চ্যানেলগুলোর প্রধান শিরোনামে পরিণত হয় ওই খবর।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয় ব্যাপক সমালোচনা। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে শাস্তির মুখে পড়ায় চরমভাবে বিব্রত হয়েছেন তারা। রেলমন্ত্রী অবশ্য জানিয়েছেন, যে যাত্রীদের নিয়ে সমস্যা- তারা তার আত্মীয় নন। যদিও স্থানীয় সূত্রগুলোর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী জড়িত তিন যাত্রীই মন্ত্রীর স্ত্রীর আত্মীয়। তাদের বিস্তারিত পরিচয়ও প্রকাশ করা হয়েছে। এই ঘটনাটিকে ন্যাক্কারজনক আখ্যায়িত করে রেলমন্ত্রীর সাময়িক পদত্যাগ দাবি করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি। ব্যাপক সমালোচনার মুখে গতকাল ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিম অঞ্চল।

রেলওয়ের একাধিক সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার রাতে টিকিট ছাড়াই ঈশ্বরদী থেকে ঢাকামুখো সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে উঠে এসি কামরায় বসেন তিন যাত্রী। ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরিদর্শক (টিটিই) টিকিট দেখতে চাইলে তারা রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলামের আত্মীয় পরিচয় দেন। এই সময় তারা সুলভ কামরার তিনটি টিকিট দিতে বলেন। একই সঙ্গে এসি কামরা খালি থাকায় সেখানে বসে ভ্রমণের আবদারও করেন। টিটিই মো. শফিকুল ইসলাম তাদের জরিমানা ও সুলভের ভাড়া বাবদ মোট ১ হাজার ৫০ টাকা নিয়ে এসি কামরা ত্যাগ করতে বলেন। বিষয়টি নিয়ে টিটিই’র সঙ্গে ওই তিন যাত্রীর কথাকাটাকাটিও হয়। ওই তিন যাত্রী তাৎক্ষণিকভাবে ট্রেনে লিখিত কোনো অভিযোগ না করলেও ঢাকায় পৌঁছে রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে টিটিই শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ‘অসদাচরণে’র অভিযোগ তোলেন। সেই অভিযোগ পেয়ে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) নাসির উদ্দিন সংশ্লিষ্ট টিটিইকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দিয়েছেন। বরখাস্তের আদেশের বিষয়টি ঈশ্বরদীর টিটিই হেড কোয়ার্টারের ভারপ্রাপ্ত সিনিয়র টিটিই ইন্সপেক্টর মো. বরকতুল্লাহ আলামিন ফোনে শফিকুল ইসলামকে জানিয়ে দেন। পরবর্তীতে শুক্রবার গণমাধ্যমকে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে বাণিজ্যিক কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন বলেন, ওই ঘটনার বিষয়ে লিখিত কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে সুন্দরবন ট্রেনে বিনা টিকিটে ভ্রমণকারী তিন যাত্রীর সঙ্গে কর্তব্যরত টিটিই অসদাচরণ করেছেন বলে তারা রেলওয়ের মহাপরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ফোন করে অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি আমাকেও অবহিত করা হয়। ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই টিটিই শফিকুল ইসলামকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয়ে যাত্রী

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনের স্ত্রী শাম্মী আক্তার মনির নানার বাড়ি ঈশ্বরদীতে। আলোচিত ওই তিন যাত্রীই রেলমন্ত্রীর দূর সম্পর্কের আত্মীয়। তারা হলেন- হাসান, ওমর ও ইমরুল কায়েস প্রান্ত। তাদের মধ্যে ইমরুল কায়েস প্রান্ত টিটিই’র বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন। ট্রেনে থাকা হাসান ও ওমর শাম্মী আক্তারের মামাতো ভাই। তাদের বাসা শহরের নূর মহল্লাতে। তাদের প্রতিবেশী হলেন ইমরুল কায়েস।

ইমরুল কায়েসের মা ইয়াসমিন আক্তার নিপা। তিনি রেলমন্ত্রীর স্ত্রী শাম্মী আকতার মনির ফুপাতো বোন। সেই হিসাবে প্রান্ত রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের ভাগনে। বৃহস্পতিবার প্রান্তর সঙ্গে রেলযাত্রায় অংশ নেন মন্ত্রীর মামা শ্বশুর জাহাঙ্গীর আলমের দুই ছেলে হাসান ও ওমর। ঈশ্বরদীর নুর মহল্লার কর্মকারপাড়ায় জাহাঙ্গীর আলমের বাড়িতেই শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত ছিলেন রেলমন্ত্রীর স্ত্রী শাম্মি আকতার। পাবনায় এলে তিনি ওই বাড়িতেই ওঠেন। ওই বাড়ির আরেকটি অংশেই থাকেন ইমরুল কায়েসের পরিবার।

অপরদিকে এই ঘটনা বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়া এবং সংবাদ মাধ্যম ও টিভিতে প্রকাশ পেলে পুরো দেশজুড়ে চরম সমালোচনা শুরু হয়। দেশের সাধারণ মানুষ বলতে থাকেন, ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে একজন সরকারি কর্মকর্তাকে এভাবে তাৎক্ষণিক বরখাস্ত করার নিয়ম রয়েছে কি না।

এই বিষয়ে রেলমন্ত্রী গতকাল (শনিবার) সাংবাদিক সম্মেলন করেন। গতকাল (শনিবার) গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন দাবি করেন যে, বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ করা যাত্রীরা তার আত্মীয় নন। তিনি বলেন যে, ওই যাত্রীদের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্কও নেই। নাম ভাঙিয়ে কেও হয়তো সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করেছে। ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।

তিনি বলেন, ঘটনাটি শনিবার সকালেই আমি শুনেছি। রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জানতে পেরেছি যে, ওই টিটিই বিনা টিকিটের যাত্রীদের সঙ্গে অত্যন্ত খারাপ আচরণ করেছেন। সেই কারণেই তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

রেলমন্ত্রীকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। রেলমন্ত্রীর আত্মীয়দের বিনা টিকিটে রেল ভ্রমণের দায়ে জরিমানা করায় টিটিই বরখাস্ত হওয়ার ঘটনাকে ন্যাক্কারজনক মন্তব্য করে মন্ত্রীকে সাময়িক সময়ের জন্য পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের সূত্র ধরে বিবৃতিতে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, ঘটনাটি ক্ষমতার অপব্যবহারের একটি নির্লজ্জ এবং নিকৃষ্টতম উদাহরণ। এখানে মূলত দুইভাবে ক্ষমতার অপব্যবহারের ঘটনাটি ঘটেছে, প্রথমত: রেলমন্ত্রীর নিকট আত্মীয়দের বিনা টিকিটে রেল ভ্রমণ অর্থাৎ তারা ধরেই নিয়েছিলেন যে, রেলের প্রচলিত আইন তাদের জন্য প্রযোজ্য নয়! দ্বিতীয়ত: সংশ্লিষ্ট টিকিট পরিদর্শক তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করায়, তাকে কোনো ধরনের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ প্রদান না করেই তাৎক্ষণিকভাবে মোবাইলফোনেই সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। পুরস্কৃত হওয়ার পরিবর্তে বরখাস্ত হওয়ার ঘটনা- দেশবাসীর কাছে এই বার্তাটিই পৌঁছেছে যে, ক্ষমতার দাপট এবং অনিয়মই হচ্ছে বাস্তবতা। তাছাড়াও, এই নিকৃষ্টতম দৃষ্টান্ত এখনও গুটিকয়েক যারা নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে স্ব স্ব ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করছেন তাদের জন্য একটি শক্তিশালী নেতিবাচক বার্তা হিসেবেই বিবেচিত হবে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, যদিও এই ঘটনায় রেলমন্ত্রী নিজের কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা গণমাধ্যমের কাছে অস্বীকার করেছেন এবং তার আত্মীয় পরিচয়দানকারীদের চেনেন না বলেও দাবি করেছেন। একইসঙ্গে রেল কর্তৃপক্ষ টিটিই বরখাস্তের জন্য যাত্রীদের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগকে সামনে নিয়ে এসেছে এবং তার সঙ্গে রেলমন্ত্রীও একমত হয়েছেন। এমন বাস্তবতায় প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক যে, বিনা টিকিটের সেসব যাত্রী টিটিইকে রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় কেনো দিয়েছিলেন? তাদের সত্যিকার পরিচয় রেল কর্তৃপক্ষ যাচাই করেছিলেন কি-না? অধিকন্তু যাত্রীদের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ বিষয়ে টিটিই’র বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে রেলমন্ত্রীর পরিচয়টাও কতোটা প্রভাব বিস্তার করেছিল? এসব বিষয়ে পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন।

এদিকে একজন আইনজীবি একটি সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করতে হলে প্রথমে তাকে কারণ দর্শাও নোটিশ দিতে হবে তারপর তাকে বরখাস্তের বিষয় আসবে। সরাসরি এভাবে কোনো সরকারি কর্মকর্তাতে তাৎক্ষণিক বরখাস্ত করা আইন বিরোধী হয়েছে। একজন সরকারি কর্মকর্তা আইনের বাইরে নন। তিনি যদি সত্যিই কোনো অপরাধ করেই থাকেন তার বিচার করা যেতে পারে। তবে সবকিছুই আইনগতভাবেই হতে হবে।

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়

# সব সময় ঘরে থাকার চেষ্টা করি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের কাপড়ের মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।