দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ চীনের উহান শহরের হুয়ানান সি ফুড এবং বন্যপ্রাণীর বাজার হতেই যে করোনা ভাইরাস মহামারির সূচনা হয়, এবার তার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়ার কথা বলছেন বিজ্ঞানীরা।
বিবিসির এক খবরে বলা হয়, হুবেই প্রদেশের ওই শহরেই সর্বপ্রথম করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার তথ্যগুলো পুনরায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে দুটি গবেষণাতে, যার ফলাফল গত মঙ্গলবার প্রকাশিত হয়।
এর একটিতে দেখা যায়, করোনা ভাইরাসের শুরুর দিকের সংক্রমণগুলো হুয়ানান বাজার ঘিরে হয়েছিল। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর সঠিক সময় জানতে অন্য গবেষণায় জেনেটিক তথ্য ব্যবহার করা হয়। ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর প্রথম সংক্রমণের খবর গণমাধ্যমে এলেও ওই বছরের নভেম্বর এবং ডিসেম্বরের শুরুর দিকে মানুষের শরীরে মূলত করোনা ভাইরাসের দুটি ধরনই বিদ্যমান ছিল।
গবেষকরা বলেছেন যে, ২০১৯ সালের শেষ দিকে হুয়ানানের বাজারে বিক্রি হওয়া জীবন্ত স্তন্যপায়ী প্রাণিগুলোতে সার্স-কভ-২ এর উপস্থিতি দেখা যায়। সেই বাজারে কাজ বা বাজার করতে আসা কেও একজন প্রথম এইসব প্রাণীর সংস্পর্শে এসে সংক্রমিত হন। এই গবেষণায় যুক্ত ইউনিভার্সিটি অব গ্লাসকোর ভাইরলোজিস্ট অধ্যাপক ডেভিড রবার্টসন বলেছেন যে, উহানের ল্যাব হতে এই ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার যে সন্দেহ অনেকের মধ্যে রয়েছে, তাদের গবেষণায় তা নিরসন হবে বলেই প্রত্যাশা।
মহামারির কেন্দ্রস্থল
যে ভাইরাসের কারণে এই কোভিডের উৎপত্তি, তার চরিত্র বুঝতে দুই বছর ধরে চেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন বিজ্ঞানীরা। তাতে নতুন নতুন যেসব তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যাচ্ছে, তাতে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এইসব গবেষণা এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে। মহামারির শুরুর দিকে সংক্রমণের তথ্য নিয়ে যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়, তারও সমাধান বর্তমানে হচ্ছে। সেই সময় উহানের হাসপাতালে ভর্তি কোভিড রোগীদের মাত্র অর্ধেকের সঙ্গে হুয়ানান বাজারের সরাসরি যোগাসূত্র খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল। তাতে গবেষকরা বিভ্রান্তিতে পড়েন, তাদের ধারণা ছিলো যে, এই ভাইরাসটি প্রকৃতপক্ষে অন্য কোনো উৎস হতে ছড়িয়েছে কি না। রবার্টসন আরও বলেন, বর্তমানে এই ভাইরাস সম্পর্কে যতো বেশি তারা জানতে পারছেন, এতে করে তাদের সেই দ্বিধাও কেটে যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে যে, মার্কেট নিয়ে তাদের যে ধারণা ছিল, সেটিই আসলে সঠিক।
কোভিড-১৯ এর উৎপত্তিস্থল শনাক্তের গবেষণায় আরও দেখা যায়, শুরুর দিকের রোগীদের একটি বড় অংশের সঙ্গে উহানের ওই বন্যপ্রাণীর বাজারের কোনো যোগসূত্রই পাওয়া যাচ্ছিল না। অর্থাৎ তারা সেখানে কখনও কাজই করেননি, বা তারা বাজার করতেও যাননি। তবে পরে গবেষণায় দেখা যায়, তাদের অধিকাংশরাই ওই মার্কেটের আশপাশের এলাকাতে থাকেন। যে কারণে ওই বাজারই যে সংক্রমণ ছড়ানোর কেন্দ্রস্থল ছিল, বিজ্ঞানীদের সেই ধারণা শক্ত ভিত্তি পেয়েছে বলে জানিয়েছেন অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োলোজিস্ট অধ্যাপক মাইকেল ওরোবে। তিনি বলেছেন, ‘বাজারের বিক্রেতারা প্রথমে সংক্রমিত হন ও সেখান থেকেই আশেপাশের কমিউনিটির মানুষের মধ্যে সংক্রমণের চেইন তৈরি হয়।’
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকার চেষ্টা করি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের কাপড়ের মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।