Categories: জাতীয়

২৫ মার্চ ১৯৭১: কী ঘটেছিলো সেই কালো রাতে?

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের রাতটি ছিল বাঙালি জাতির জন্য ভয়াবহতম একটি রাত। মানব ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যায় সেই কালো রাতে বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী মেতেছিল জান্তব উল্লাসে।

ঢাকা শহর হয়েছিল এক ধ্বংসস্তূপ। ১৯৭১ সালের পর এতোগুলো বছর পেরিয়ে গেলেও এমন আতঙ্কের রাত আর আসেনি ২৫শে মার্চে।

আজ রাত ১০.৩০ মিনিট থেকে ১০.৩১ এই এক মিনিট বিদ্যুৎ বন্ধ রাখার (ব্ল্যাক আউট) মাধ্যমে ২৫শে মার্চে নিহতদের স্মরণ করবে পুরো জাতি।

Related Post

‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে কুখ্যাত পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত পরিকল্পিত গণহত্যার মাধ্যমে ১৯৭১ সালের এই দিনটি অর্থাৎ ২৫শে মার্চে বাঙালির জাতীয়তাবাদী, স্বাধিকার আন্দোলনকে সশস্ত্র হামলার দ্বারা দমন করতে চেয়েছিল ওইসব নরপশুরা।

এই গণহত্যা ছিল পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের আদেশে পরিচালিত, যা ১৯৭০ এর নভেম্বরে সংঘটিত ‘অপারেশন ব্লিটজ’-এর পরবর্তী সামরিক আক্রমণ বলা যায়।

২৫শে মার্চের পাকিস্তানি সামরিক অপারেশনের আসল উদ্দেশ্যই ছিল স্বাধীনতাকামী বাংলাদেশ তথা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সব বড় বড় শহর দখল করে নেওয়া ও রাজনৈতিক এবং সামরিক বিরোধীদের এক মাসের ভেতর নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া।

তবে অকুতোভয় বাঙালিরা পাল্টা প্রতিরোধ সৃষ্টি করে ও সূচনা ঘটায় স্বাধীনতা যুদ্ধের। ২৫শে মার্চের গণহত্যা বাঙালিদের ক্রুদ্ধ এবং আরও প্রতিবাদমুখর করে তোলে। আপামর বাঙালিরা সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সূত্রপাত ঘটায় ও বাঙালিরা দখলদারি পাকিস্তানি বাহিনীকে বিতাড়িত করার সংগ্রামে লিপ্ত হয়ে পড়ে। পরিণতিতে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিনাশর্তে আত্মসমর্পণের মধ্যদিয়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়।

২৫শে মার্চের সঙ্গে মিশে রয়েছে বাঙালির রাজনৈতিক সংগ্রামের ধারাবাহিক পর্যায়গুলো। বছরের পর বছর তীব্র গণআন্দোলন শেষে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পর বাঙালিরা স্বাভাবিকভাবেই আশা করে যে, ক্ষমতার পালাবদল হবে ও আওয়ামী লীগ ৬ দফা অনুসারে সরকার গঠন করবে। তবে ২৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৭১ এ তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এবং সেনাপ্রধান ইয়াহিয়া খান পিপিপি’র জুলফিকার আলি ভুট্টোর প্ররোচনা ও চাপে জাতীয় সংসদের কার্যাবলী মার্চ পর্যন্ত স্থগিত করে দেন।

পিপিপি’র জুলফিকার আলি ভুট্টো এও বলেন, তিনি বাঙালিদের ক্ষমতা থেকে দূরে রাখতে চান। এই স্থগিতকরণের প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ ৭ই মার্চ ১৯৭১ সালে একটি গণসমাবেশের আয়োজন করেছিলো। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণে সমুজ্জ্বল সেই জনসমাবেশ এতোটাই সফল ছিল যে, পাকিস্তান সরকার সেনাছাউনি এবং পূর্বপাকিস্তানের সরকারি প্রতিষ্ঠানে সীমিত হয়ে পড়ে ও পুরো দেশ চলে যায় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালি জাতির অধীনে।

এমন এক পরিস্থিতিতে জেনারেল ইয়াহিয়া বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বৈঠকের উদ্দেশ্যে মার্চের মাঝামাঝি সময় ঢাকা আসেন ও তারপর ভূট্টো তার সঙ্গে যোগ দেন। তবে তারা আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করার উদ্দেশ্যে নানা তালবাহানা শুরু করে আলোচনার নামে। পশ্চিম পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠীর ভয় ছিল যে, ক্ষমতা জনরায় অনুযায়ী বঙ্গবন্ধুকে হস্তান্তরিত করা হলে পাকিস্তান পিপলস পার্টির কর্তৃত্ব হ্রাস পেয়ে যাবে। সেজন্য পাকিস্তানী জেনারেলরা পিপিপি’র ভুট্টোকে গোপনে সমর্থন যোগাতে থাকে ও শেষ দিকে বাঙালিকে ন্যায্য রাজনৈতিক ক্ষমতার বৈধ অধিকার হতে বঞ্চিত করার জন্য পুরো বাঙালি জাতির উপর সেনা আক্রমণ শুরু করে।

ইতিহাসের বিবরণ অনুযায়ী জানা যায, ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর এক বৈঠকে গৃহীত প্রস্তাবনার ভিত্তিতেই মার্চের শুরুতে ১৪তম ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা ও মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলি অপারেশনের মূল পরিকল্পনা তৈরি করে ফেলেন। এদের পেছনেই ছিলেন জেনারেল গুল হাসান। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পশ্চিম পাকিস্তানের কোয়েতা হতে ১৬তম ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশন ও খরিয়ান থেকে ১৯তম ডিভিশনকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময় পূর্ব পাকিস্তানে যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়।

পাকিস্তানের ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা পূর্ব পাকিস্তানের জিওসি লে. জেনারেল সাহেবজাদা ইয়াকুব খান ও পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ভাইস অ্যাডমিরাল এস এম আহসান পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ জনগণের উপর সামরিক হামলার বিরোধী ছিলেন বলেই অপারেশনের পূর্বেই তাদেরকে দায়িত্ব হতে অব্যাহতি দেওয়া হয়। সেখানে বেলুচিস্তানের কসাই নামে নিন্দিত জেনারেল টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর এবং জিওসি করে পাঠানো হয়।

মার্চের ১৭ তারিখ পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর সিওএস জেনারেল হামিদ টেলিফোনের মাধ্যমে জেনারেল রাজাকে অপারেশনের পরিকল্পনা করার দায়িত্ব প্রদান করেন। ১৮ মার্চ সকালে ঢাকা সেনানিবাসের জিওসি কার্যালয়ে বসে জেনারেল রাজা ও মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলি অপারেশনের পরিকল্পনা তৈরি করেছিলেন। পরিকল্পনাটি জেনারেল ফরমান নিজ হাতে হালকা নীল রঙের একটি অফিস প্যাডের ৫ পাতা জুড়ে লিড পেন্সিল দিয়ে লিখেও নেন।

ধারণা করা হয় যে, বাঙালি সেনারা অপারেশনের শুরুর সময়ই বিদ্রোহ করবে, তাই পরিকল্পনাকারীরা প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে আলাপকালে বাঙালি সৈন্যদের অপারেশনের পূর্বেই নিরস্ত্র করার ও বাঙালি রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতারের প্রস্তাবও দেন। পরিকল্পনাটি ২০ মার্চে আবার জেনারেল হামিদ ও লে. জেনারেল টিক্কা পর্যালোচনা করেন।

তারপর অপারেশন শুরু হয় ঢাকায় ২৫শে মার্চ রাতের শেষ প্রহরে এবং অন্যান্য গ্যারিসনকে ফোন কলের মাধ্যমে তাদের জিরো আওয়ারে (অপারেশন শুরু করার পূর্বনির্ধারিত সময়) তাদের কার্যক্রম শুরু করার জন্য সতর্ক করে দেওয়া হয়। ঢাকার সৈন্যদের কমান্ডে ছিলেন রাও ফরমান আলি ও অন্যান্য সব স্থানের সৈন্যদের কমান্ডে ছিলেন জেনারেল খাদেম হোসেন রাজা। জেনারেল টিক্কা ও তার কর্মকর্তারা ৩১তম কমান্ড সেন্টারের সব কিছু তদারকি করা ও ১৪তম ডিভিশনের কর্মকর্তাদের সহযোগিতা করার উদ্দেশ্যেই উপস্থিত ছিলেন।

তাই নির্দিধায় বলা যায়, ২৫শে মার্চের গণহত্যা পৃথিবীর ইতিহাসে নিরস্ত্র মানুষের উপর সামরিক আক্রমণের জন্য কুখ্যাত ও পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতার এক জ্বলন্ত সাক্ষী। ২৫শে মার্চের ধ্বংসযজ্ঞ এবং হত্যাকাণ্ডের মধ্যেও ফিনিক্স পাখির মতো বাঙালি জাতির উত্থান এবং সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে হানাদারদের পরাজিত করে স্বাধীনতা অর্জনের ঘটনা বিশ্ব ইতিহাসে বিরল এবং ঐতিহাসিক গৌরবের বিষয় হিসেবে বিশ্ব ইতিহাসে চিরদিন লেখা থাকবে।

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়

# সব সময় ঘরে থাকার চেষ্টা করি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের কাপড়ের মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।

This post was last modified on মার্চ ২৫, ২০২৩ 7:45 অপরাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার

Recent Posts

দৈনন্দিন অভ্যাস বদলে ফেললে বয়স হলেও বার্ধক্যের ছাপ পড়বে না

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বয়সকালে সুস্থ, তরতাজা থাকার জন্য জীবনযাপনে নিয়ন্ত্রণে রাখাটা প্রয়োজন। দৈনন্দিন…

% দিন আগে

বিভিন্ন দেশের মানুষের আইফোন ১৬ কিনতে কতোদিনের আয় খরচ করতে হবে?

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আইফোন মানেই উচ্চ বৃত্তদের ব্র্যান্ড। অ্যাপলের নতুন মডেলের আইফোন ১৬…

% দিন আগে

নদী দূষণমুক্ত করার জন্য “নদী আমার মা’ শীর্ষক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বাঙালি সংস্কৃতির একটা বড় অংশ জুড়েই রয়েছে নদী। সেই নদী…

% দিন আগে

বলিউড অভিনেত্রী আলিয়া ভাট এক বিরল অসুখে ভুগছেন

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বলিউড অভিনেত্রী আলিয়া ভাট এক বিরল অসুখে ভুগছেন। শুনে চমকে…

% দিন আগে

ডোনাল্ড ট্রাম্প কমলার সঙ্গে আর বিতর্ক করবেন না

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী এবং বর্তমান ভাইস…

% দিন আগে

পা দিয়ে মাখা হচ্ছে মোমোর ময়দা! বিক্রেতা যুবকের কীর্তি প্রকাশ্যে আসতেই সমালোচনার ঝড়

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ পা দিয়ে মাখা হচ্ছে মোমোর ময়দা! এমন একটি ভিডিও সম্প্রতি…

% দিন আগে