আজকের দিনে ইন্টারনেট ছাড়া কোনোকিছু কল্পনা করা যায় না। এয়ারটেলের স্লোগানের সাথে মিলিয়ে বলা যায়, “ইন্টারনেট ছাড়া লাইফ ইম্পসিবল!” দৈনন্দিন জীবনে, শপিং করতে, চাকরি, পড়াশোনা, যাতায়াতের ক্ষেত্রে কোথায় ব্যবহৃত হচ্ছে না এই ইন্টারনেট! পুরো বিশ্বের জীবনযাত্রার মান বদলে এবং বিশ্বকে সত্যিকারের হাতের মুঠোয় আনা এই ইন্টারনেটকে আজকের এই অবস্থানে আসতে আসতে অনেক কাঠ খড় পোড়াতে হয়েছে। বিশেষ করে এমন কিছু মানুষের অবদানের কথা স্বীকার করতেই হয়, যাদের হাত দিয়েই ইন্টারনেট সমৃদ্ধ হয়েছে, এতো ব্যাপকতা ছড়িয়েছে। আসুন আজ প্রথম পর্বে পরিচিত হই তাদের কয়েকজনের সাথে।
১৯৭৪ সালের এক গবেষণাপত্র থেকে জানা যায়, Vinton Cerf এবং Robert Kahn নামের দুজন প্রকৌশলী নিজেদের কাজের সুবিধার জন্য কমিউনিকেশন প্রটোকল নামে একটি যোগাযোগের মাধ্যম আবিষ্কার করেন, যার নাম তাঁরা দেন Transmission Control Protocol (TCP)। Cerf এবং Kahn তখন বুঝতে পারেননি তাদের উদ্ভাবিত প্রটোকলটি পরবর্তীতে IPতে রূপান্তর নেবে যেটা ইন্টারনেট নামে বিশ্বে পরিচিত হয়! তাদের আবিষ্কৃত TCPই এখন সারা বিশ্বের Internet Protocol(IP)!
বিস্তারিত পড়ুন এখানে।
যেকোনো সাইটের ইউ আর এল (URL) তথা লিঙ্ক লেখার আগে আমরা যে www লিখি, এটি আবিষ্কার করেন ব্রিটিশ পদার্থবিজ্ঞানী ও কম্পিউটার বিজ্ঞানী Tim Berners Lee. টিম বার্নার্স লি সুইজারল্যান্ডের জেনেভার সার্ন সংস্থার একটি প্রকল্প হিসেবে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব (www) উদ্ভাবন করেন। সেখান থেকে শুরু করে ওয়েবের উন্নতি সাধনে তিনি মার্কআপ ল্যাঙ্গুয়েজ তৈরিতে ভূমিকা রাখেন যার মাধ্যমে ওয়েবপেজ অলঙ্করণ বা কম্পোজ করা হয়। বর্তমানে তিনি World Wide Web Consortium (W3C) এর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন।
একজন আমেরিকান প্রোগ্রামার Ray Tomlinson ১৯৭১ সালে ARPANET প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সময় কোম্পানীরই একটি কম্পিউটারের ভেতর দুটি ভিন্ন হোস্টে মেইল আদান প্রদান করেন তিনি। এরপর দুটি ভিন্ন কম্পিউটারে মেইল পাঠানোর জন্য তিনি @ চিহ্নটি ব্যবহার করেন। আজ সারাবিশ্বের মানুষ @ সাইন ব্যবহার করে মেইল আদান প্রদান করে! মজার ব্যাপার হলো, Ray Tomlinson পরীক্ষাটি তাঁর কলিগকে দেখালে Jerry Burchfiel তাকে বলেছিলেন, “এটা কাউকে বোলোনা! এটা আমাদের কাজের ভেতর পড়ে না!”
পৃথিবীর প্রথম স্প্যাম মেইলটি পাঠানোর সময় ভাবা হয়েছিলো এটা বুঝি ই-মার্কেটিং করা হচ্ছে, আদতে তা নয়। Gary Thuerk ১৯৭৮ সালের মে মাসের ১ তারিখে প্রায় ৪০০টি মেইল এড্রেসে তাঁর কোম্পানী Arpanet এর নতুন প্রোডাক্ট Digital’s new T-series of VAX systems এর কথা জানাতে গনহারে মেইল পাঠান, যেটি পৃথিবীর প্রথম স্প্যাম মেইলের ইতিহাসে ঠাঁই করে নেয়। যদিও এ ব্যাপারে Gary Thuerk এর মতামত ভিন্ন। তিনি বলেন, “আসলে আমি অনেক বেশী মানুষের কাছে আমাদের নতুন পণ্যটির প্রচার করতে চাইছিলাম, আমরা কোনো আমন্ত্রণ পত্র ছাড়াই এটি করতে চেয়েছিলাম। এটাকে আমি ই-মার্কেটিং ভেবেছিলাম।”
১৯৮২ সালের সেপ্টেম্বরের ১৯ তারিখ Scott Fahlman কম্পিউটারে লেখালেখির সময় লেখকের আবেগকে প্রকাশ করার চিন্তা থেকে স্মাইলি ইমোটিকন আবিষ্কার করেন। এ সময় তিনি একটি মেইলে তার ইমোটিকন পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করেন, মেইলটি ছিলোঃ
19-Sep-82 11:44 Scott E. Fahlman 🙂
From: Scott E. FahlmanI propose that the following character sequence for joke markers:
🙂
Read it sideways. Actually, it is probably more economical to mark
things that are NOT jokes, given current trends. For this, use🙁
এরপর থেকে ইমোটিকনের ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয়; আর এখন মেসেঞ্জার, ফেসবুক, চ্যাটে ইমোটিকন ছাড়া কেউ কথাই বলতে পারে না!
ইন্টারনেট জগতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসে ১৯৯৩ সালে। এ সময় Marc Andreessen নামের এক তরুণ কম্পিউটার প্রোকৌশলী Mosaic নামক একটি ওয়েব ব্রাউজার তৈরি করেন, যা ছিলো গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেস সমৃদ্ধ। এটিই বিশ্বের প্রথম ওয়েব ব্রাউজার, যা পরবর্তীতে Netscape Navigator নামে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। এর পরপরই আসে Microsoft এর Internet Explorer, যা সৃষ্টি করে ব্রাউজার যুদ্ধ। প্রথমদিকে Netscape Navigator এগিয়ে থাকলেও Microsoft এর আধিপাত্যের সামনে এটি পিছু হটতে বাধ্য হয়, এবং এক পর্যায়ে Microsoft এর কাছে বিক্রি হয়ে যায়। বর্তমানে অবশ্য Internet Explorerও মৃতপ্রায় ব্রাউজার। এখন বাজার দখল করে আছে Firefox এবং Google Chrome. ইন্টারনেট ব্রাউজিংয়ের ধারণাকে বদলে দেয়া Marc Andreessen বর্তমানে Ning এর একজন কো-ফাউন্ডার এবং Digg, Plazes ও Twitter এর বিনিয়োগকারী ।
Internet Relay Chat বা IRC ১৯৮৮ সালে প্রথম আবিষ্কার করেন একজন সফটওয়্যার ডেভেলপার Jarkko Oikarinen। এটি জনপ্রিয়তা পায় ১৯৯১ সালে যখন ইরাক কুয়েত কে আক্রমন করে। কুয়েতের সমস্ত মিডিয়া বন্ধ হয়ে গেলে তখন IRC মাধ্যমে সরাসরি চ্যাট করে সর্বশেষ তথ্য আদান প্রদান করা সম্ভব হয়েছিলো। তখন একে MUT (MultiUser Talk) নামে ডাকা শুরু হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন কোম্পানী যেমন ইয়াহু, ফেসবুক, গুগল তাদের নিজস্ব চ্যাট সফট ডেভেলপ করে, কিন্তু শুরুটা দেখিয়ে দিয়েছিলেন সেই Jarkko Oikarinen!
David Filo এবং Jerry Yang দুজন মিলে ১৯৯৪ সালে তৈরি করেন সার্চ ইঞ্জিন Yahoo! পূর্ণ নাম Yet Another Hierarchical Officious Oracle এই কোম্পানীটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের কাছে প্রথম সার্চের প্রকৃত স্বাদ তুলে ধরে। তবে এটি জনপ্রিয়তা বাড়ার সাথে সাথে দূরদর্শিতার অভাবে তা ধরে রাখতে পারেনি। পরবর্তীতে ১৯৯৮ সালে বাজারে আসে সার্চ ইঞ্জিন Google, এবং সার্চ ইঞ্জিনের ধরণ পরিবর্তন করে ফলে ব্যবহারকারীরা ধীরে ধীরে Google এর দিকে ঝুঁকে পড়ে বেশী। বর্তমানে ইন্টারনেট জগতে সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠানের নাম Google.com
অনলাইনে বেচাকেনায় পথিকৃৎ ভূমিকা পালন করে Amazon এবং eBay। Jeff Bezos ১৯৯৪ সালে তৈরি করেন Amazon, যেখানে অনলাইনেই নতুন সব পণ্য কিনতে পারার সুবিধা যোগ হয়। তিনি অনলাইন মার্কেটিংয়ের সর্বোচ্চ ব্যবহার এবং এটি অনেক দ্রুত বর্ধনশীল করে তোলেন। অন্যদিকে eBay ইন্টারনেটে পা রাখে ১৯৯৫ সালে। এটি প্রতিষ্ঠিত করেন Pierre Morad Omidyar। তিনি ক্রেতা এবং বিক্রেতাকে এমন একটা প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসেন, যেখানে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই বুঝতে পারে কারো ময়লা অন্যের জন্য গুপ্তধন, সেই বিবেচনাবোধ থেকে তারা eBayতে নতুন পুরনো পণ্য নিজেরাই বিক্রি শুরু করে।
অন্যদিকে অনলাইনে অর্থ আদান-প্রদান করার জন্য জনপ্রিয় PayPal প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৮ সালে। Peter Thiel ৩১ বছর বয়সে এটি প্রতিষ্ঠার ৪ বছর পর eBay এর কাছে তা ১.৪ বিলিয়ন ডলারে বিক্রি করে দেন।
তথ্যসূত্রঃ অনলাইন
This post was last modified on নভেম্বর ২৫, ২০১৪ 10:30 পূর্বাহ্ন
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ নব নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে গত বছরের ডিসেম্বরের…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ‘নেচার ইজ় ব্রুটাল’ নামে এক্স হ্যান্ডল হতে পোস্ট করা ভিডিওটি…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুভ সকাল। মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারী ২০২৫ খৃস্টাব্দ, ২৩ পৌষ ১৪৩১…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ব্রণ বিষয়ে চিকিৎসকরা মনে করেন, অ্যাডাল্ট অ্যাকনির নেপথ্যে মূল কারণ…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সেরা প্রযুক্তি আও উদ্ভাবনের জোরে বিনোদনের সংজ্ঞাকে প্রতিনিয়ত পাল্টে দিচ্ছে…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ভিটামিন বি১২ শরীরের কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ কাজ পরিচালনা করে। তাই এই…
View Comments
ঠাঙ্কস
চমৎকার এবং ব্যতিক্রমধর্মী সংবাদ পরিবেশনের জন্য "দি ঢাকা টাইমস" ইতিমধ্যেই স্বাতন্ত্রের ছাপ রেখেছে। আমি এর সার্বিক কল্যান কামনা করি এবং অচিরেই এর সুনাম অন্য সবাইকে যাবে !